ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: একসময়ের জোটসঙ্গী। তবে সম্প্রতি নানা ইস্যুতে বাম-কংগ্রেসের দূরত্ব বেড়েছে। এবার বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যর মন্তব্য ঘিরে কার্যত মুষলপর্ব শুরু হল। সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদের 'এমার্জেন্সি' মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার দাবি তুললেন, কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে তিনি রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন। অবিলম্বে তাঁর উচিত সেই পদ ছেড়ে দেওয়া। তাতে বিকাশবাবুর পালটা মন্তব্য, শুভঙ্কর নাকি তাঁর কথা বুঝতেই পারেননি। বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেস নেতা, কর্মীরা সোশাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন।
কংগ্রেস নেতাদের প্রতিবাদী পোস্ট। সৌ: সোশাল মিডিয়া।
কী নিয়ে আচমকা বাম-কংগ্রেসে এত দ্বন্দ্ব শুরু হল? জানা যাচ্ছে, গত ডিসেম্বরে এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য রাজনৈতিক পরিবর্তন নিয়ে বেশ কিছু মন্তব্য করেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, ''সামাজিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সেসব পরিস্থিতির উপর দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক সমীকরণও বদলায়। রাজনৈতিক সমীকরণ বদলেছে মানেই যে অতীতের ঘটনাগুলি ইতিহাস থেকে মুছে যায়, তা তো নয়। ইন্দিরা গান্ধীর আমলে যে এমার্জেন্সি হয়েছিল, তা তো অত্যন্ত কালো অধ্যায়। সেটা কি উপেক্ষা করা যায়? আমি তো সংসদে দাঁড়িয়ে ৩ মিনিটের মধ্যে একথা বলেছি। সাংবিধানিক ইতিহাসে এর্মাজেন্সি একটা কালো দাগ। পাশাপাশি এও বলেছি, ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমা চেয়েছেন। এটা ঐতিহাসিক ঘটনা।''
কংগ্রেস-আরএসএস নিয়ে বিকাশরঞ্জনের মন্তব্যের পালটা পোস্ট। সৌ: সোশাল মিডিয়া।
কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক সুমন রায় চৌধুরী বলেন, '২০২১ সাল থেকে ক্রমাগত দেখছি কংগ্রেস নিয়ে এই বিকাশ ভট্টাচার্যের প্রকাশ্য গাত্রদাহ। কখনও কংগ্রেসি হার্মাদ, কখনও ইমারজেন্সি, কখনও কংগ্রেসি খুনি! আগেও সংবাদমাধ্যমে বলেছি, এবার বলছি পদত্যাগ করুন। গাছেরও খাব তলারও কুড়োবো দুটো হয় না দাদা। খাতা খুললে তো লজ্জায় মুখ ঢাকতে হবে। বেকার কেন তৃণমূল আর বিজেপির সুবিধা করে দিচ্ছেন? ওদের ব্রিফ নিয়েছেন নাকি?'
বাম আমলে সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ড নিয়ে তাঁদের কম কটাক্ষ, অপপ্রচারের শিকার হতে হয়নি বলেও সেদিনের সাক্ষাৎকারে চাপা ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। কংগ্রেসের তৎকালীন ভূমিকা নিযে সমালোচনা করেন। তাঁর এসব মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে শুভঙ্কর সরকার দাবি তোলেন, তিনি কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন, সেই পদ অবিলম্বে ছেড়ে দেওয়া উচিত। তাতে আবার বিকাশবাবুর দাবি, ''উনি (শুভঙ্কর সরকার) আমার বক্তব্য বোঝেননি।'' এনিয়ে সোশাল মিডিয়ায় কংগ্রেস সমর্থকরা সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। অশোক ভট্টাচার্য নিজের পোস্টে বিকাশবাবুকে আরএসএসের স্লিপিং সেল বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর দাবি, সংঘ পরিবারের অঙ্গুলি হেলনেই মিডিয়ার সামনে এসব মন্তব্য কংগ্রেসের ক্ষতি করার চেষ্টা করছেন। এদিকে, রাজ্য যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অর্ঘ্য গণ মন্তব্য করেন, ''দলের অপমান সহ্য করব না। আপনার কাছ থেকে কংগ্রেসকে RSS-এর বিরুদ্ধে লড়াই শিখতে হবে না। ''