বিশেষ সংবাদদাতা: বঙ্গ বিজেপিতে বিদ্রোহের জলঘোলা অব্যাহত। যুযুধান দুই শিবিরই দিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তবে অভ্যন্তরীণ সমীকরণে কিছু তাৎপর্যপূর্ণ রদবদল চলছে। দুই শিবিরই হাতের আসল তাস আড়াল করে রাখছে। পুরুলিয়ায় পাঁচ বিধায়ক নাড্ডাকে চিঠি দিয়ে জেলা সভাপতি বদলের দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে, বিদ্রোহীদের নামের দীর্ঘ তালিকা দিয়ে অভিযোগ দিল্লিতে পাঠিয়েছে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী। তবে এরই মধ্যে রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar) জানিয়েছেন, তিনি দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে কোনও নালিশ করেননি।
বিজেপি সূত্রের খবর ছিল, ক্ষমতাসীনরা মনে করছেন দিলীপবাবু বিদ্রোহীদের মদত দিচ্ছেন। তাই তাঁর নামেও দিল্লিকে বলা হয়েছে। কিন্তু সুকান্তর তরফ থেকে বলা হয়েছে, দিলীপের বিরুদ্ধে তিনি কোনও নালিশ করেননি। এ সংক্রান্ত রটনা ভুল এবং অবমাননাকর। এই জল্পনা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই খবর রটানো হচ্ছে। আবার এদিনই বিজেপির একাধিক সূত্র বলেছে, বিক্ষুব্ধদের নামের তালিকা দিয়ে নালিশ পাঠিয়েছেন সুকান্ত, অমিতাভ চক্রবর্তীরা। বিদ্রোহী শিবির সূত্রে খবর, তাঁরা জঙ্গলমহল দিয়ে জেলাসফর শুরু করছেন। শান্তনু ঠাকুর চেষ্টা করছেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জে পি নাড্ডা বা বি এল সন্তোষের (BL Santosh) সঙ্গে দেখা করতে। এর মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ হল, বিদ্রোহীদের কাছে এমন কিছু তথ্য এসেছে যাতে তাঁরা সুকান্তর উপর অতটা রেগে নেই। এঁদের ধারণা হয়েছে সুকান্তর কাঁধে বন্দুক রেখে দু-তিনজন নিজেদের দখলদারি চালাচ্ছেন। সুকান্ত নিজেও অনেক ঘটনা জানেন না। শাসকগোষ্ঠীর খবর, দিল্লি থেকে অমিত মালব্য এবং এখানে শুভেন্দু অধিকারী পুরো অমিতাভ চক্রবর্তীর পক্ষে। মালব্য নাকি কড়া হাতে বিদ্রোহ দমনের পক্ষে।
[আরও পড়ুন: ফের পদ্মশিবিরে অসন্তোষ? পুরুলিয়ার জেলা বিজেপি সভাপতি বদলের দাবিতে সরব দলেরই একাংশ!]
আবার বিদ্রোহী শিবিরের খবর, আরএসএস নড়ে বসছে। সংগঠনের দায়িত্বে থাকা অমিতাভ চক্রবর্তীর সঙ্গে আপাতত দু’জন ডেপুটি বসিয়ে দেওয়া হতে পারে। উত্তরপ্রদেশের ঝামেলা যতক্ষণ না কমছে ততক্ষণ দিল্লির নেতারা বাংলার ঝগড়া মেটাতে তেমন সময় দিতে পারবেন না। তাঁদের কাছে খবর, অমিতাভ চক্রবর্তী এবং অন্য পেশা থেকে আসা এক তৎকাল বিজেপি সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে আসল সমস্যা। সূত্রের খবর, এদিনও শুভেন্দুর সঙ্গে অমিতাভর কথা হয়েছে। একটি মহল বলছে, সুকান্ত মজুমদার অকারণে অপ্রিয় হতে চাইছেন না। বিক্ষুব্ধ নেতাদের কয়েকজনের সঙ্গে তাঁর বাক্যালাপ শুরু হয়েছে। তথাগত রায় বুধবার বলেছেন, “বিজেপি আদর্শচ্যুত হয়েছে। সেই কারণেই অন্য স্রোতের লোকজন দলে ঢুকতে পারছেন এবং যার ফলে দল লাটে উঠছে।” জানা গিয়েছে, শান্তনু, সায়ন্তন, জয়প্রকাশ, রীতেশ-সহ বিক্ষুব্ধদের প্রতিনিধিদল পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম দিয়ে জেলা সফর শুরু করছেন। এঁরা ঠিক করেছেন মূলত অমিতাভ চক্রবর্তীর অপসারণের দাবিকেই পাখির চোখ করবেন তাঁরা। দেখতে হবে শুভেন্দু কতখানি আড়াল করতে পারেন অমিতাভকে।
সুকান্তবাবুর ঘনিষ্ঠমহলের খবর, তিনি সভাপতি হিসাবে দলের সব অংশের কাছেই গ্রহণযোগ্যতা রাখবেন। আলোচনার দরজা খুলে রাখছেন। সরাসরি দিলীপবাবুর (Dilip Ghosh) নামেও তিনি নালিশ করেছেন বলে দলের ভিতর থেকেই একাধিক সূত্রে যে খবর রটছিল, কড়াভাবে তারও প্রতিবাদ করছেন সুকান্ত। তবে সুকান্তবাবুর তরফে কোথাও বলা হচ্ছে না যে দলে ক্ষোভবিক্ষোভ নেই। সভাপতির শিবির বলছে, তিনিও ক্রমশ বুঝতে পারছেন যে অনেক ভুল হচ্ছে। তাঁর কাঁধে বন্দুক রেখে অন্য দু-একজন স্বার্থসিদ্ধি করার চেষ্টা করছেন। বিক্ষুব্ধদের দাবি মেনে কমিটিতে বেশ কিছু রদবদলেও নাকি রাজি হচ্ছেন সুকান্ত মজুমদার। ফলে বিদ্রোহীরা আপাতত অমিতাভ চক্রবর্তী এবং তাঁর মদতদাতা দু-একজনের বিরুদ্ধেই সক্রিয় থাকছেন। অমিতাভ চক্রবর্তী নিজে অবশ্য প্রকাশ্যে এখনও একটিও বিবৃতি দেননি।
[আরও পড়ুন: রাজ্য বিজেপির বিক্ষুব্ধদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা? নামের তালিকা যাচ্ছে দিল্লি]
জানা গিয়েছে, অপসারিত সভাপতি দিলীপ ঘোষ বিদ্রোহীদের সম্পর্কে নরম মনোভাব নিয়ে চলছেন। তাঁর বিভিন্ন বিবৃতিতে বোঝাই গিয়েছে বিক্ষুব্ধ নেতাদের যুক্তিগুলি তিনি উড়িয়ে দিচ্ছেন না, বরং তিনি আলোচনার পক্ষে। সুকান্তবাবু সম্ভবত দিলীপ ঘোষের প্রতি নরম মনোভাব নিয়ে বিদ্রোহী শিবিরকেও বার্তা দিয়ে বলতে চান যে আপাতত বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা কোনওরকম দুষ্টচক্রের মধ্যে তিনি নেই। সুকান্ত আপাতত অ্যাডহক সভাপতি। যতক্ষণ না নির্বাচিত সভাপতি হচ্ছেন, ততক্ষণ পুরোদস্তুর জোর খাটাতেও পারছেন না তিনি। সুকান্ত-বিরোধী একটি শিবির বলছে, যদি এই বিক্ষোভ চলতে থাকে এবং পুরভোটে বিজেপির ভরাডুবি হয়, তাহলে সুকান্তকে সরিয়ে লকেট চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে আসার ব্যাপারে সক্রিয় হবেন দিল্লির নেতা বি এল সন্তোষ। লকেটকে আপাতত বিতর্ক থেকে সরিয়ে উত্তরাখণ্ডের নির্বাচনের দায়িত্বে রাখা হয়েছে। সেখানে লকেট যদি ভাল ফল দেখান, তাঁকে বাংলায় সভানেত্রী করে পাঠানো হবে। তবে সুকান্তর শিবির আশাবাদী, নির্বিবাদী ভদ্রলোক নতুন সভাপতিকে রাতারাতি সরানোর কোনও ঝুঁকি দিল্লি নেবে না। শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে খবর, তিনি অমিতাভ চক্রবর্তীকে পুরোপুরি আগলে রাখছেন। দিল্লিকে বার্তা দিয়ে বলা হয়েছে, কিছুদিনের মধ্যেই বিদ্রোহীদের দম ফুরিয়ে যাবে। বিক্ষুব্ধ শিবির জয়প্রকাশের বাড়ি বৈঠক করেছে। একাংশ চায়, লড়াই চলুক। অন্য অংশ চায় আপাতত বাড়াবাড়ি না করে অপেক্ষা।