রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: বঙ্গ বিজেপির অগ্রগতি নিয়ে খুব বেশি আশার আলো দেখতে পেলেন না রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। দু’দিনের রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠক শেষে সংগঠন নিয়ে নির্যাস এটাই। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কার্যত হতাশ। শুধু তাই নয়, রাজ্যে দলের কর্মসূচি নিয়ে দিল্লিতে জল মেশানো রিপোর্ট বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেওয়া হচ্ছে তা নিয়েও সতর্ক করে দিয়ে গেলেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনশল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান পালন নিয়ে দলের জেলা সভাপতিরা দিল্লির কাছে জল মেশানো রিপোর্ট পাঠানোয় বেজায় ক্ষুব্ধ বনসল।
তিনি বলেন, ‘‘জেলা থেকে জেলা সভাপতিরা রিপোর্ট দেন ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান প্রতি জেলায় পাঁচ থেকে ছয়শো জায়গায় শোনার ব্যবস্থা করা হয়। অথচ তার ছবি পাঠাতে পারেন না। এত জল মেশাবেন না।’’ এরপরই বনসল স্পষ্ট জানিয়ে দেন, প্রতি বিধানসভা পিছু ১০০ জায়গায় এই অনুষ্ঠান শোনানোর ব্যবস্থা করতে হবে। অনুষ্ঠানের ছবি সমেত পাঠাতে হবে। কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, ৩০ শতাংশ মণ্ডল কমিটিতে কাজ হলেও বাকি ৭০ শতাংশ খাতায় কলমে রয়েছে।
একে সংগঠন নিয়ে হতাশা প্রকাশ, অন্যদিকে কর্মসমিতির প্রথম দিন পদাধিকারীদের বৈঠকে কোর কমিটির সদস্য হওয়া সত্ত্বেও ডাক পাননি প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরি, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা থেকে শুরু করে স্বপন দাশগুপ্ত ও অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়-রা। আবার রাজ্যের অন্যতম সহ-সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডাকা হয়নি।
[আরও পড়ুন: টার্গেট ২৫, পূরণ কীভাবে? সংশয় নিয়েই ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গ সফরে অমিত শাহ]
দ্বিতীয় দিন বর্ধিত রাজ্য কমিটির বৈঠকে সায়ন্তন বসুকেও ডাকা হয়নি। ফলে কেউ প্রথম দিন, কেউ দ্বিতীয় দিন, কেউ আবার দু’দিনই ডাক না পাওয়া নিয়ে দলের অন্দরেই চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে খবর। দলের একাংশের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন শিবিরের পছন্দের তালিকায় নেই বলেই অনেককে ডাকা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে অবশ্য জলঘোলা শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছেও অমিতাভ চক্রবর্তী শিবিরের বিরুদ্ধে নালিশ জমা পড়েছে। আর হোটেলের ঘর নিয়েও একাধিক নেতার ক্ষোভ সামনে এসেছে।
একেবারে শীর্ষ নেতারা কেন্দ্রীয় সরকারের অতিথিশালায় ছিলেন। আর হোটেলের বিলাসবহুল ঘরে অমিতাভ ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতা ও তাঁদের কাছের লোকজন ছিলেন। একাধিক রাজ্য নেতাকে নিজেদের ঘরের ব্যবস্থা আলাদাভাবে করতে হয়। কয়েকজন রাজ্য নেতার জন্য ঘরের ব্যবস্থাই করা হয়নি। ফলে তাঁরা বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ। আবার রাজ্য কমিটির সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও ওবিসি মোর্চার তিন মহিলা নেত্রী কীভাবে কর্মসমিতির বৈঠকে ঢুকলেন, কে তাঁদের কার্ড দিল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এক রাজ্য নেতা।
এদিকে, যেখানে বৈঠক হল তা দলের ঘনিষ্ঠ এক কয়লা মাফিয়ার হোটেল। তা নিয়ে তো বিতর্ক ছিলই। পাশাপাশি প্রতিনিধিদের খাওয়ার খরচ প্রতিদিন দেড় হাজার টাকার বেশি। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। দলের পুরনো এক রাজ্য নেতার প্রশ্ন, পার্টি কর্মীদের সাহায্যে টাকা দেওয়া হচ্ছে না, তখন এত টাকা খরচ করে বৈঠক কেন? এর নীরব প্রতিবাদ করে কয়েকজন রাজ্য নেতা বৈঠক উপলক্ষে যে খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল তা খাননি। দু’দিনের কর্মসমিতির বৈঠকে সংগঠনের বেহাল অবস্থা, কোন্দল থেকে বিভিন্ন বিষয়ে ক্ষোভ উঠে এলেও, তার মধ্যেও কড়া বার্তা দিয়ে সুনীল বনশল, মঙ্গল পাণ্ডেরা বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন, কাজ না করলে কাউকেই রেওয়াত করা হবে না।