সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মনস্তত্ববিদরা বলেন, স্বপ্ন (Dream) হল আয়না। আমাদের সারাদিনের কাহিনিই তো রাতের সিনেমা হয়ে দেখা দেয় ঘুমের মধ্যে! অবচেতন মনে জমে থাকা অপূর্ণ ইচ্ছে, আশা-আকাঙ্খা, ব্যথা-বেদনা, ভয়-স্মৃতি-ভালবাসাকেই আশ্চর্য অক্ষরে লেখে স্বপ্ন। কিন্তু, কথায় বলে ‘স্বপ্ন দেখা’। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠে, জন্মান্ধরা (Born Blind) কি স্বপ্ন দেখেন? দেখলে কীভাবে দেখেন?
উত্তর দেওয়ার আগে দু’জন কিংবদন্তির কথা বলে নিতে হবে। একজন হলেন বিটোফেন (Ludwig van Beethoven)। তখন তিনি খ্যাতির শীর্ষে, সেই সময়েই সম্পূর্ণভাবে শ্রবণশক্তি হারান। আশ্চর্যের হল, এরপরেও একাধিক সংগীত সৃষ্টি করেন। ভারতীয় চিত্রকলার অন্যতম নাম বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের (Binod Bihari Mukherjee) ঘটনাও কতকটা এক। জন্ম থেকেই একটি চোখে দেখতে পেতেন না, অন্য চোখে অল্প দেখতেন। মধ্য বয়সে এসে সম্পূর্ণ অন্ধ। যদিও জীবনের এই দুর্ভাগ্য মাথায় করেই অসংখ্য বিশ্বমানের ছবি আঁকেন। অর্থাৎ শুনতে না পাওয়া ও দেখতে না পাওয়ায় কিছু এসে যায়নি তাঁদের। যদিও শিল্পও আদতে ‘স্বপ্ন’ বা কল্পনা। অবচেতন মনেরই চারুকর্ম। তাহলে?
[আরও পড়ুন: এ কী কাণ্ড! মটন রাঁধেননি স্ত্রী, ১০০ ডায়াল করে পুলিশে অভিযোগ জানালেন যুবক!]
তাহলেও বিনোদবিহারী ও বেটোফেনের সঙ্গে তুলনা চলে না একজন জন্মান্ধের। যেহেতু তাঁর দেখার বিন্দুমাত্র অভিজ্ঞতা নেই। এখানেই প্রশ্ন, তাহলে তিনি কীভাবে স্বপ্ন দেখবেন? যেখানে তাঁর কাছে দর্শন বিষয়টি কী তাও স্পষ্ট নয়। রহস্যময় এই দিকটি নিয়ে হাজারও গবেষণা হয়েছে।
খুব সম্প্রতি ২০১৪ সালে এই বিষয়ে গবেষণা করেন ড্যানিশ গবেষকদের একটি দল। ৫০ জন ব্যক্তিকে নিয়ে গবেষণাটি হয়। এদের মধ্যে ১১জন ছিলেন জন্মান্ধ, ১৪ জন এমন যাঁরা জন্মের কয়েক বছর পরে দৃষ্টিশক্তি হারান এবং বাকি ২৫ জন এমন ব্যক্তিকে রাখা হয়েছিল যাঁরা অন্ধ নন। ৪ সপ্তাহ ধরে চলে গবেষণা। গবেষকরা নির্দেশ দেন, এই ২৮ দিনে প্রত্যেকে স্বপ্নে যা ‘দেখবেন’ তা লিখে ফেলবেন। অন্ধদের লেখার জন্য টেক্সট টু স্পিচের ব্যবস্থা হয়।
এইসঙ্গে বেশ কিছু প্রশ্ন দেওয়া হয়, তার উত্তর লিখতে বলা হয়। প্রশ্নগুলি ছিল এরকম, আপনি কি কিছু দেখতে পেয়েছেন? তা যদি হয় তাহলে তা কি রঙের ছিল? আপনি কি কোনও স্বাদ পেয়েছিলেন বা কোনও গন্ধ বা ব্যথা অনুভব করেছিলেন? এছাড়াও ছিল কিছু সংবেদনশীল প্রশ্ন। যেমন, আপনি কি রাগ করেছিলেন বা দুঃখিত হন বা ভয় পেয়েছিলেন স্বপ্নে? কেউ দুঃস্বপ্ন দেখেছিলেন কিনা তাও গবেষকদের জিজ্ঞাসায় রাখা হয়।
[আরও পড়ুন: লড়েছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে, দেশ বাঁচাতে ইউক্রেনের সেনায় যোগ দিতে চান ৯৮ বছরের ‘যুবতী’]
যাঁরা অন্ধ নন তাঁরা সকলেই স্বপ্নে ভিজুয়াল ইম্প্রেশনের বর্ণনা দিয়েছিলেন। যাঁরা জন্মান্ধ তাঁরা কিন্তু তা পারেননি। তবে, গবেষণায় দেখা যায় তাঁদের ঘুমেও স্বপ্ন এসেছিল। তবে অন্য কায়দায়। ঠিক যেভাবে স্বাদ, স্পর্শ, গন্ধ ও শ্রবণ দিয়ে এই পৃথিবীকে কল্পনা করে নেন তাঁরা, সেভাবেই স্বপ্নের অভিজ্ঞতাও হয়েছে তাঁদের। দেখা গিয়েছে অন্ধদের একটি অংশ স্বাদ পেয়েছেন স্বপ্নে, একটি অংশ গন্ধ ও অন্য একটি অংশ শুনতে পেয়েছেন ঘুমের ভেতরে।
এই গবেষণায় আরও একটি আশ্চর্য বৈশিষ্ট্য দেখা যায়, তা হল জন্মান্ধদের দুঃস্বপ্ন দেখার প্রবণতা। জন্মান্ধরা জানান, তাঁরা কেউ কেউ স্বপ্নের মধ্যে গাড়িতে ধাক্কা খেয়েছেন, অনেকে ম্যানহোলে পড়ে গিয়েছেন, অনেকে সঙ্গের কুকুরটিকে হারিয়ে ফেলেছেন, যে তাঁর গাইডের কাজ করত। যা আসলে বাস্তব। স্বপ্ন তো আসলে আয়না, মানে অবচেতনের শিল্প!