গৌতম ভট্টাচার্য: বিরাট কোহলিকে (Virat Kohli) নিয়ে মঙ্গলবার দিনভর চলা নাটকের যবনিকা পতন ঘটল রাতে। ঘটালেন ভারতীয় বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় স্বয়ং! এ দিন রাতে এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সৌরভ বলে দিলেন যে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজ না খেলা নিয়ে আলোড়ন স্রেফ রটনা-জল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়। “দক্ষিণ আফ্রিকায় ওয়ান ডে সিরিজ খেলছে বিরাট,” বলে দিলেন সৌরভ (Sourav Ganguly)।
মুশকিল হল, উপরের অনুচ্ছেদ পড়তে ঠিক যতটা কাঠ-কাঠ, নিরুত্তেজক লাগছে, এ দিনের ঘটনাপ্রপাত ঠিক ততটাই উল্টো ছিল। গনগনে। সংঘর্ষের উত্তেজক প্রেক্ষাপট সমেত। গত অর্ধশতাব্দীতে ভারতীয় ক্রিকেটে কেউ কখনও শোনেনি অধিনায়কত্ব চলে গিয়েছে ক্ষুব্ধ ক্রিকেটার বলছে, সিরিজ খেলবে না! বাড়ি চলে যাবে! একাত্তরে টাইগার পটৌডি অধিনায়কত্ব হারানোর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ খেলেননি। রাগে। সেই ঘটনার পঞ্চাশ বছর পর এক ক্রুদ্ধ অধিনায়ককে ঘিরে একই রকম উত্তেজনা তৈরি হল। না, কোহলি কিছু বলেননি। কিন্তু এ দিন সকালে দেশের মিডিয়ায় ফলাও করে বেরিয়ে যায় যে, বিরাট টেস্ট সিরিজ খেলে দেশে ফিরে আসছেন। ওয়ান ডে সিরিজ খেলবেন না। কন্যা ভামিকার প্রথম জন্মদিন পালন করবেন তিনি দেশে ফিরে। বোর্ডকে সেই মতো অনুরোধও পাঠিয়ে দিয়েছেন।
[আরও পড়ুন: Virat Kohli: প্রকাশ্যে বোর্ড-বিরাট বিবাদ? দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ থেকে সরছেন কোহলি!]
অত্যাশ্চর্য ক্রিকেটমহল বুঝতে পারছিল না, কন্যার জন্মদিনের প্রসঙ্গ কোথা থেকে আসছে? কারণ, ভামিকার জন্মদিন ১১ জানুয়ারি। যখন তৃতীয় টেস্ট চলবে। যা কি না বিরাটের শততম টেস্টও বটে। তা হলে এক সপ্তাহ পর, আগামী ১৯ জানুয়ারি ওয়ান ডে সিরিজের সময় কী করে জন্মদিন উদযাপনের ব্যাপার আসে? তা হলে কি বোর্ড বনাম কোহলি সংঘাতের গ্রাফ ক্রমশ উর্ধ্বমুখী? রটনা-জল্পনা-সংশয় আরও উত্তরোত্তর বাড়ছিল কারণ, কোহলি নিজে কিছু বলছিলেন না। আজকালকার যুগে সোশ্যাল মিডিয়ায় এক লাইন লিখে দিলেই চলে। কোহলি যদি লিখে দিতেন, মি়ডিয়া রিপোর্ট পুরো ভুল। সব মিটে যেত। কিন্তু কোহলি কিছুই করেননি। কিছুই বলেননি। যে কারণে বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জল্পনা আরও বাড়তে থাকে। আজহার ঢুকে পড়েন। বোর্ড বিভক্ত হয়ে যায়। ভারতীয় টিমের কেউ কেউ সংশয়াচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। বলাবলি চলতে থাকে, কোহলি কি তা হলে ওয়ান ডে ক্রিকেট ছেড়ে দিচ্ছেন?
আগুনে আরও ঘৃতাহুতি হয় আজহারের (Azharuddin) টুইটে। এ দিন দুপুরে হঠাৎ প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক লিখে বসেন, ‘আমি শুনছি, বিরাট নাকি দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজ খেলবে না। আর রোহিত চোটের কারণে খেলবে না টেস্ট সিরিজ। বিশ্রাম যে কেউ নিতেই পারে। কিন্তু টাইমিংটা ঠিকঠাক হওয়া উচিত। এ সব ঘটলে সংঘাত ঘিরে জল্পনাই ছড়ায় শুধু। তবে এটুকু বলি, দু’জনের একজনও কোনও ফর্ম্যাট ছেড়ে দিচ্ছে না!’
বোর্ডের একাংশ আবার বলতে শুরু করে, বিরাট দক্ষিণ আফ্রিকা ওয়ান ডে সিরিজ না খেলার কোনও অনুরোধই করেননি বোর্ডের কাছে। কিন্তু সেই ব্যাখ্যা প্রথমে সবাইকে সন্তুষ্ট করেনি। সন্ধিগ্ধ ভাবে অনেকেই বলছিলেন, সেটাই যদি হবে তা হলে কোহলি নিজে কিছু বলছেন না কেন? তিনি নিশ্চয়ই কিছু না কিছু বলেছেন। বা তাঁর ঘনিষ্ঠরা কিছু বলেছে। নইলে মিডিয়ায়ই বা খামোখা লিখবে কেন?
রাতে সৌরভের বক্তব্যের পর ধোঁয়াশা কাটল আপাতত। কিন্তু বিরাট-নাটকের শেষ অঙ্ক এটা কি? পরে আবার কিছু হবে না তো? কে জানে, কী হবে। শুধু একজনের কথা ভেবেই খারাপ লাগবে।
কোচের জ্যাকেটে নতুন সফর শুরু করা রাহুল শরদ দ্রাবিড় নিশ্চিত ভাবেননি এ রকম বিড়ম্বনায় তাঁকে পড়তে হবে। গ্যারান্টি!