অভিষেক চৌধুরী ও অর্ণব দাস: জামাইষষ্ঠী সেরে মেয়ে-জামাইয়ের সঙ্গে গাড়ি করে গ্রামের বাড়ি থেকে রওনা দিয়েছিলেন সোদপুরের নতুন ফ্ল্যাটে। কয়েকদিন যেতে না যেতেই সেই বৃদ্ধ দম্পতির নিথর দেহ ফিরল গ্রামেরই বাড়িতে। উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটিতে দণ্ড মহোৎসবে যোগ দিয়ে ওই দম্পতি-সহ আরও একজনের মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুর ঘটনার পর পরিবারের লোকজনের পাশাপাশি গ্রামের মানুষজনও যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। স্বাভাবিক কারণেই শোকস্তব্ধ গোটা গ্রাম। সোমবার সকালে ওই বাড়িতে যান এলাকার বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়।
পূর্বস্থলীর যজ্ঞেশ্বরপুর গ্রামের বাসিন্দা ও বৃদ্ধ দম্পতি সুভাষ পাল ও শুক্লা পালের মরদেহ মেয়ে জামাইরা গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসে রবিবার মধ্যরাতে। কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা পরিবার-সহ অন্যরা। সোমবার সকালে যজ্ঞেশ্বরপুর শ্মশানঘাটে মরদেহ নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তার দু’ধারে নামা মানুষের ঢলই বুঝিয়ে দেয় সুভাষবাবুর জনপ্রিয়তা। তাঁর ভাই রঞ্জিত কুমার পাল জানান, “দাদা যেমন স্কুলের শিক্ষক ছিলেন, তেমনই বিভিন্ন সংঘ,সংগঠন, স্কুল,পাঠাগারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সমাজসেবা মূলক কাজ করার পাশাপাশি স্থানীয় সমবায়ের সভাপতিরও পদেও ছিলেন বর্তমানে। সম্প্রতি সোদপুরে তিনি নতুন ফ্ল্যাট কিনে আসা-যাওয়া করতেন গ্রামের বাড়ি থেকে।”
[আরও পড়ুন: টানা চতুর্থ দিন রাজ্যের দৈনিক করোনা সংক্রমণ ১০০ পার, বেড়েই চলেছে অ্যাকটিভ কেস]
শ্মশানঘাটে ওই দম্পতির দেহ পাশাপাশি রেখে একসঙ্গে তাঁদের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। আর তার কয়েক ঘণ্টা পর পানিহাটিতে ঘটে যাওয়া ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন ভিড়ের চাপে আহত হওয়া যজ্ঞেশ্বরপুরের কয়েকজন পুণ্যার্থী। চন্দনা দাস কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “ভাবতেই পারছি না এইরকম একটি দুর্ঘটনা হঠাৎ করে ঘটে যাবে। রবিবার ভোরের ট্রেনে এখান থেকে গিয়ে ওঁদের ফ্ল্যাটে উঠি। ওঁরা ওইদিন ভোরেই মন্দিরে পুজো দেন। ওখানে পৌঁছাতেই চিড়ে প্রসাদ আমাদের খাওয়ান। আমাদের জন্য পটলভাজা, পাঁপড় ও খিচুরি প্রসাদ করে রেখেছিলেন। তা খেয়েই ব্রতভঙ্গ করি।” তিনি আরও জানান, “এরপরেই ওঁদের দু’জনের সঙ্গে গ্রাম থেকে যাওয়া ছ’জন মিলে ফ্ল্যাট থেকে বের হই। বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ফেরার পথে ঠাসা ভিড়ে চারদিক দিয়ে জোর ধাক্কা লাগে। সামলাতে না পেরে মন্দিরের গেটের সামনে প্রথমে শুক্লাদেবী পড়ে যান। তারপর সুভাষবাবু স্ত্রীকে তুলতে গিয়ে জোর ধাক্কা আসতেই আমরাও পড়ে যাই। আমাদের গায়ের উপর অনেকেই পড়ে যায়। আমি জ্ঞান হারাই। জ্ঞান ফিরতেই মৃত্যুর খবরে দিশেহারা হয়ে পড়ি।”
এমনই বক্তব্য পুণ্যার্থী বকুল দে,পুষ্প বৈদ্য, জ্যোৎস্না দাসদেরও। ঘটনার সময় ওই ভিড় থেকে হাঁটু গেড়ে হামাগুড়ি দিয়ে কোনওরকমে বেঁচে ফিরেছেন বলে জানান পুষ্প বৈদ্য। তাঁরও বুকে লাগে। পানিহাটির ওই এলাকায় চরম অব্যবস্থার অভিযোগ তোলেন সকলেই।
পানিহাটি দন্ড মহোৎসব (Danda Mahotsab) বা দই-চিঁড়ের মেলায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু এবং বহু ভক্তের অসুস্থ হওয়ার পরই সাতদিনের জন্য মেলা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরপ্রশাসন। যদিও অন্যান্য দিনের মতো এদিনও মন্দিরে নিত্যপুজো হয়। এলাকায় মোতায়েম ছিল পুলিশ। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার মৃতদের পরিবারের হাতে ২ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে।