অর্ণব দাস, বারাকপুর: ২৭ সেপ্টেম্বর দুঃসংবাদ গিয়েছিল বারাকপুর নোনা চন্দনপুকুরের বাসিন্দা ভাস্কর দেব মুখোপাধ্যায় ও বেলঘড়িয়া রাইফেল রেঞ্জ রোড এলাকার বাসিন্দা সন্দীপকুমার ঠাকুরতার বাড়িতে। জানা গিয়েছিল, হিমাচলে ট্রেকিংয়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁদের। ছয়দিন পর রবিবার তাঁদের কফিনবন্দি দেহ ফিরল বাড়িতে। কান্নায় ভেঙে পড়লেন পরিবারের সদস্যরা।
অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মী ভাস্কর দেব মুখোপাধ্যায়, বারুইপুর হাইস্কুলের শিক্ষক সন্দীপকুমার ঠাকুরতা-সহ মোট ছ’জন ১১ সেপ্টেম্বর বারাসতের এক মাউন্টেনিয়ারিং ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে রওনা দিয়েছিলেন হিমাচলে। মোট ২৬ দিনের সফর ছিল তাঁদের। মানালি থেকে তাঁরা বাতাল পৌঁছন ১৭তারিখ। ওই দিনই শুরু করেন ট্রেকিং। খামেঙ্গার দিকে ট্রেক করতে গিয়েছিলেন তাঁরা। জানা গিয়েছে, ২৪ সেপ্টেম্বর খামেঙ্গা হিমবাহের কাছে প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার ফুট উচ্চতায় সন্দীপকুমার ঠাকুরতা এবং ভাস্কর দেবমুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু হয়। রবিবার সকালে মৃতদের কফিনবন্দি দেহ পৌঁছয় দমদম বিমানবন্দরে। সেখান থেকে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় বাড়িতে।
[আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: আসে না দুর্গা, শারদোৎসবে কোগ্রামে পূজিতা হন দেবী মণ্ডলচণ্ডীই]
এদিন ভাস্কর দেব মুখোপাধ্যায়ের প্রতিবেশী এবং দীর্ঘদিনের সহকর্মী পবনদেব মুখোপাধ্যায় বলেন, “স্থানীয় গাইড, শেরপা এবং ট্রেকিং দলের অন্যান্য সদস্যদের উদ্ধারের জন্য আইটিবিপি, আর্মি এবং ডোগরা স্কাউট একটি ৩২ সদস্যের দল গঠন করা হয়েছিল। তাঁরাই প্রত্যেককে উদ্ধার করে প্রথমে কাজায় পৌঁছান। এরপর চন্ডিগড় ও দিল্লি হয়ে বিমানে কলকাতায় এসে পৌঁছয় দু’জনের কফিন বন্দি দেহ।”
সন্দীপ এবং ভাস্কর দু’জনেই ট্রেকিং করতে ভালোবাসতেন। এর আগেও বহুবার তারা ট্রেকিংয়ে গিয়েছিলেন। সন্দীপবাবু ট্রেকিংয়ে যাওয়ার পর গত ১৯শে সেপ্টেম্বর তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়। কিন্তু সেই সময় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি বলে তিনি মায়ের মৃত্যু সংবাদ পাননি। এদিকে, ট্রেকিং ছাড়াও ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসতেন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মী ভাস্করবাবু। বাড়িতে তিনি এবং স্ত্রী বেনু মুখোপাধ্যায় থাকতেন। স্ত্রী স্কুলশিক্ষিকা ছিলেন। একমাত্র ছেলে কাজল মুখোপাধ্যায় পড়াশোনার সুত্রে আমেরিকায় থাকেন। এদিন ভাস্কর দেবমুখোপাধ্যায়ের কফিনবন্দি দেহ এলাকায় পৌঁছতেই শোকের ছায়া নেমে এসেছে আত্মীয়, পরিবার এবং স্থানীয়দের মধ্যে।
বারাকপুর পুরসভা পুরপ্রশাসক উত্তম দাস বলেন, “এমন একটা অবস্থা তৈরি হয়েছিল যে মৃতদেহ পরিবারের কাছে নিয়ে আসা সম্ভব হবে না বলেই শোনা যাচ্ছিল। বিধায়ক মদন মিত্রকে আমি জানাই। সরকারিভাবে মৃতদেহ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কথা বলা হয়। হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়ে কথা বলেন। মদন মিত্রই দেহ আনার ব্যবস্থা করেন।”