কিশোর ঘোষ: সালভাদোর দালির বহু ছবিতে মানুষের মস্তিষ্ক গাছের আদল পেয়েছে। বট বা অশ্বত্থের মতো গাছ। আলো-ছায়াময় অসংখ্য ভাবনার ডালাপালা। মানুষের মন নাকি এমনই জটিল, বলেন মনস্তত্ত্ববিদরাও। এমনকী দীর্ঘদিন একসঙ্গে থাকা পরিবারের সদস্যরাও একে অপরকে ভাল করে চেনেন না তাই। ভাই জানে না বোনের কান্নার হদিশ! বোন জানে না ভাইয়ের সুখের স্বর্গের রং কী! বাবা-মার সুখী দাম্পত্য যে রঙিন পলিথিন, ভেতরে লোভ আর হিংসার আসবাবের ড্রয়িং-লিভিং, জানেই না বেচারা সন্তানেরা। এমন সব কঠিন বাস্তব, জটিল সত্যিকে আলো-আঁধারি ক্যামেরা-ভাষায় বোনা হয়েছে ডিজনি-হটস্টারের নতুন সিরিজ মাসুমে (Masoom)। প্রশ্ন উঠেছে কে মাসুম অর্থাৎ নিষ্পাপ আর কে নয়?
ছয় পর্বের সফল সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার নির্মাণ করেছেন পরিচালক মিহির দেশাই (Mihir Desai)। এই সিরিজ নিয়ে জনতার আগ্রহ ছিলই। বোমান ইরানির (Boman Irani) জন্য। হিন্দি ছবির সফল অভিনেতা প্রথমবার ওটিটি প্লাটফর্মে (OTT Platform) কাজ করলেন। এবং বড়পর্দার মতোই জাত চেনালেন। মাসুমের ‘হিরো’ ও ‘ভিলেন’ তিনি। তাঁকে কেন্দ্র করেই গল্প। পাঞ্জাবের ছোট্ট শহর ফালাউলির ধনী পরিবারের মাথা ডাঃ কাপুরের চরিত্রে অভিনয় করেছেন বোমান। অসুস্থ স্ত্রী, তিন সন্তান ও তিনি। এই হল পরিবার। ডাঃ কাপুরের স্ত্রী, সকলের কাছে যিনি ম্যাডামজি, তাঁর মৃত্যু দিয়ে শুরু হয় গল্প। প্রশ্ন হল, ম্যাডামজির মৃত্যু স্বাভাবিক না খুন? ম্যাডামজিকে কি নিজের বর, বিধায়কের টিকিট পেতে চলা প্রভাবশালী ডা. কাপুরই খুন করলেন? কেন করলেন? এই জন্যে যে তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে নিজেরই নার্সিংহোমের কর্মী রোমির?
[আরও পড়ুন: ‘এবার থেকে কথা বলার আগে দু’বার ভাবব’, ধর্মীয় হিংসা বিতর্কে মুখ খুললেন সাই পল্লবী]
উত্তর হ্যাঁ হতে পারে, না-ও হতে পারে। কারণ দর্শকের মনে যাবতীয় প্রশ্ন ওঠে তরুণী সানার মনের আয়নায়। সানার ভাবনা বাস্তব না কল্পনা? তার আগের প্রশ্ন সানা কে? সানা ডা. কাপুরের ছোট মেয়ে। ‘মনের অসুখের রোগী’, অস্থিরমতি। সে শহরে পড়তে গিয়েছিল। এই গল্পের শুরুতে মায়ের মৃত্যুর সময়েই ঘরে ফেরে। এবং যাবতীয় প্রশ্ন তুলে ধাঁধাঁয় ফেলে দেয় দর্শককে। কুয়াশা বাড়ায় ডা. কাপুরের অন্য দুই সন্তানও। তাঁরাও যাকে বলে ‘ডিস্টার্বড চাইল্ড’। একজন প্রায় ভাঙা বিয়ে নিয়ে মানসিকভাবে ভাঙাচোরা। বাপের বাড়িতে, মানে ডা. কাপুরের কাছে ফিরে এসেছে। আর সদ্য তরুণ ছোট ভাইটি সমকামী। সে পালাতে চায় বিকল্প যৌনতার সমাজে।
এমনিতে ওটিটি মানেই বদখত থ্রিলারের পাড়া (ব্যতিক্রম পঞ্চায়েত)! অধিকাংশই প্রতিহিংসা, ক্ষমতা, যৌনতা আর রাজনীতির একঘেয়ে গল্প। চমক দেখতে ভাল লাগে, কিন্তু কাহিনি শেষ হলেই ভাবনার নটেগাছ মরে। রেশ থাকে না। মির্জাপুর আর ক’টা হয়। জনপ্রিয় আইরিশ টিভি সিরিয়াল ‘ব্লাড’ থেকে অনুপ্রাণিত হলেও মিহির দেশাই মনের জিভের স্বাদ দেন দর্শককে। দেখতে দেখতে ‘মাসুমে’র চরিত্রদের আলো-অন্ধকারময় অস্বস্তিতে পড়েন দর্শকও। ক্যামেরা আর কালার এডিটিং আর আবহসঙ্গীতের গুণে সাইকোডেলিক বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে।
[আরও পড়ুন: গল্প নেই, চিত্রনাট্যে শুধু যৌনতা! জমল না ইমতিয়াজের সিরিজ ‘শি’]
অভিনয় – বোমান ইরানি, সামারা তিজোরি, উপাসনা সিং, মঞ্জরি ফড়ননিস, বীর রাজবন্ত সিং, মনু ঋষি চাড্ডা, আকাশদীপ অরোরা
পরিচালনায় –মিহির দেশাই