গৌতম ব্রহ্ম: ‘এক্সেম্পট হিউম্যান স্পেসিমেন। প্লিজ ডু নট স্ক্যান।’ দুধে সাদা বাক্সের গায়ে জ্বলজ্বল করছে লেখাগুলো। বিমান বন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অফিসারদের সতর্ক করার জন্যেই এই বার্তা। অর্থাৎ আর পাঁচটা বাক্সের মতো একে স্ক্যান করা যাবে না। এখানে আছে এক ইউনিট মহার্ঘ্য রক্ত। বম্বে নেগেটিভ। মহার্ঘ্যই বটে। বিশ্বে হাতে গোনা কয়েকজনের শরীরে বইছে এই অতিবিরল রক্ত। পূর্ব মেদিনিপুরের মানসুরা বিবির শিরা ধমনিতেও বইছে এই একই রক্ত! বছর চুয়ান্নর এই গৃহবধূ পিজি হাসপাতালে ভরতি। গুরুতর অসুস্থ। অপারেশন করতে হবে। চাই রক্ত। কিন্তু এই রাজ্যে হাজার খোঁজ করেও এই গ্রুপের রক্ত পাওয়া যায়নি। তাই কেরল থেকে উড়িয়ে আনা হচ্ছে রক্ত।
এদিন মানসুরা বিবির ছেলে মুস্তাকিম আলির সঙ্গে যোগাযোগ করে ‘সংবাদ প্রতিদিন’। তিনি জানান, এসএসকেএম হাসপাতালের গাইনোলজি বিভাগের চিকিৎসক ডা. এসএন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধীনে গত ২০ নভেম্বর থেকে এক দুরারোগ্য অসুখে আক্রান্ত হয়ে ভরতি পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা মানসুরা। হলদিয়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলা হাসপাতালে থাকার পর কলকাতায় রেফার করা হয় তাঁকে। এসএসকেএমে ভরতি হওয়ার পর চিকিৎসক জানান, তাঁর অস্ত্রোপচারের জন্য দরকার একটু রক্তের। কিন্তু তাঁর ধমনিতে এমন গ্রুপের রক্ত বইছে যা গোটা বিশ্বেই বিরল। বোম্বে O নেগেটিভ গ্রুপ। আর সেখানেই যত সমস্যা। মানসুরা বিবির রক্ত পরীক্ষা করে গ্রুপ চিহ্নিত করেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের হেমাটলজির প্রধান ডা. প্রসূন ভট্টাচার্য। তিনি জানাচ্ছেন, ১০ হাজারে মাত্র একজনের শরীরে মেলে বোম্বে গ্রুপের রক্ত। আর এক লাখে একজন হন নেগেটিভ। তাও কোনও রোগ-ব্যধী না হলে তা জানাও যায় না।”
[আরও পড়ুন: Lionel Messi: চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মেসি ম্যাজিক, জোড়া গোল টপকে গেলেন কিংবদন্তি পেলেকে]
বিরল এই রক্ত খুঁজে বের করতে গিয়ে হন্যে হয়ে যায় পরিবার। নানা বাধা বিপত্তি কাটিয়ে অবশেষে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যদপ্তরের সহযোগিতায় উদয়ের পথে নামক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দীপঙ্কর মিত্র ও মৃদুল দলুই তাঁদের নিজেদের চেষ্টার রক্ত জোগাড় করতে সফল হন।
কেরলের বন্দনা হাসপাতালে হদিশ মেলে বোম্বে O নেগেটিভ রক্তের গ্রুপটির। সেই রক্তই আজ, বুধবার সকালে কেরল থেকে বিমানে উড়ে আসছে কলকাতার উদ্দেশে। এসএসকেএম (SSKM) হাসপাতালের সুপারের হাতে তা পৌঁছে দেওয়া হবে।
উদয়ের পথে সংস্থার তরফে জানানো হয়, “আমাদের ক্লাবের দুই সদস্য দীপঙ্কর মিত্র ও মৃদুল দলুইয়ের অক্লান্ত চেষ্টায় এই অসাধ্যসাধন করা গিয়েছে। বিরল রক্তের গ্রুপটি মানসুরা বিবির শরীরে পৌঁছলে ‘রক্ত আন্দোলন’ পথের দিশা পাবে।” আজ রক্ত এসে পৌঁছলেই হবে অস্ত্রোপচার। মানসুরা বিবির আরোগ্য কামনা করে বিরল ঘটনার সাক্ষী হওয়ার প্রহর গুনছেন তাঁর বাড়ির লোকেরা।