shono
Advertisement

উপাচার্যদের উনিই বেতন দিন! 'শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ' ইস্যুতে রাজ্যপালকে তোপ ব্রাত্যর

Published By: Paramita PaulPosted: 09:18 AM Apr 07, 2024Updated: 09:43 AM Apr 07, 2024

দীপালি সেন: একদিন শিক্ষামন্ত্রী অপসারণের সুপারিশ। পরদিনই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অপব্যবহারের অভিযোগে বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ। রাজ্যপাল-আচার্য সিভি আনন্দ বোসের দুই পদক্ষেপে রাজ্যে রাজনীতিতে চাপানউতোর চলছেই।  তৃণমূল, কংগ্রেস ও সিপিএম এক সুরে বলছে, এভাবে তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার এক্তিয়ার নেই রাজ্যপালের। এই আবহে শনিবার রাজ্যপালকে কড়া ভাষায় বিঁধলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তাঁর স্পষ্ট বার্তা, রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে রাজ্যপালই বেতন দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও অধ্যাপকদের।

Advertisement

রাজ্য-রাজভবন সংঘাত তুঙ্গে পৌঁছেছে বুধবার, রাজ্য সরকারের কাছে শিক্ষামন্ত্রীকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করার রাজ্যপালের সুপারিশে। গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে হওয়া তৃণমূলের অধ্যাপক সংগঠন ওয়েবকুপার রাজ্য সম্মেলনকে কেন্দ্র করেই সংঘাতের সূত্রপাত।  ৩১ মার্চ গৌড়বঙ্গের অন্তর্বর্তী উপাচার্য রজতকিশোর দে-কে অপসারণের নির্দেশ দেন রাজ্যপাল-আচার্য। পালটা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের উল্লেখ করে রজতবাবুকেই অন্তর্বর্তী উপাচার্যের দায়িত্ব সামলানোর নির্দেশ দেয় উচ্চশিক্ষা দপ্তর। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে রাজ্যের আইন মেনে চলার বার্তা দিয়ে উচ্চশিক্ষা দপ্তর নির্দেশিকা পাঠিয়েছে। পালটা সেই নির্দেশিকাকে ‘বেআইনি’ তকমা দিয়ে ‘রাজ্যপালের রিপোর্ট কার্ড’ প্রকাশ করেছে রাজভবন। রাজ্যপালকে কটাক্ষ করে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। এরপর সরাসরি শিক্ষামন্ত্রীকেই অপসারণের সুপারিশ করে বসেন রাজ্যপাল। সেখানেই শেষ নয়। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসের অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যপাল-আচার্য। 

[আরও পড়ুুন: ব্রাজিল সুন্দরীর সঙ্গে রাতভর পার্টিতে মত্ত আরিয়ান! শাহরুখপুত্রকে উড়ন্ত চুমু ‘ওগো বিদেশিনী’র]

এই রাজ্য-রাজভবন সংঘাত সার্বিকভাবে অনভিপ্রেত বলেই মত শিক্ষামন্ত্রীর। তাঁর বক্তব্য, “ওঁর সময়ই এটার সৃষ্টি হল। স্বাধীনতার পর এই ধরনের পরিস্থিতি কখনও বাংলায় হয়নি। শিক্ষাব্যবস্থার সবথেকে কলঙ্কময় আচার্য। এই জায়গাটা উনি দূর করতে পারতেন। এবং রাজ্যের সঙ্গে মিলে যদি কাজ করতেন, সত্যিই উচ্চশিক্ষা প্রচার ও প্রসারের কাজটা হত।” রাজ্যপালের এককভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টার কড়া সমালোচনা করেন ব্রাত্য। বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশ্ববিদ্যালয় পিছু কয়েক কোটি অনুদান দেয় রাজ্য। অধ্যাপক, শিক্ষাকর্মীদের বেতন দেওয়া হয়। উনি এখন বলছেন আমি এটা একা নিয়ন্ত্রণ করব। আপনি যদি নিয়ন্ত্রণ করতে চান, তাহলে অনুদান আপনি জোগাড় করুন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, শিক্ষাকর্মীদের বেতন আপনি জোগাড় করুন। সেই দায়িত্ব উনি নিচ্ছেন না। উনি বলছেন, বেতন সরকার দেবে। আমি শুধু ইচ্ছেমতো লোক বসাব আর তুলব।”

শুক্রবার গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে উপাচার্যের দপ্তর সিল করে দেওয়ার নির্দেশও দেন আচার্য। তরফে। প্রয়োজনে নিতে বলা হয় পুলিশের সাহায্য। রেজিস্ট্রার বিশ্বজিৎ দাস জানিয়েছেন, নির্দেশের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির সদস্য, উচ্চশিক্ষা দপ্তর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সকলকে জানানো হয়েছে। সব পক্ষ মিলেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “ওঁ (রজতকিশোর দে) তো দপ্তরে যাচ্ছেন। নিয়মিত দপ্তর করছেন। আমাদের থেকে পরামর্শ চাইলে, উচ্চশিক্ষা দপ্তর পরামর্শ দেবে।” শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, কার্যকর করা হয়নি আচার্যের নির্দেশ। শিক্ষামন্ত্রীও জানিয়েছেন, ঘর খোলা রয়েছে।

[আরও পড়ুন: মা কাজল শান্তিনিকেতনে শুটিংয়ে ব্যস্ত, দিদা তনুজাকে সামলাচ্ছে যুগ! সুশিক্ষাকে কুর্নিশ নেটপাড়ার]

রাজ্যপাল শুক্রবার সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, তিনি নিজে থেকে মন্ত্রীকে অপসারণের সুপারিশ করেননি। রাজভবনে ই-মেল মারফত শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। এবং শিক্ষামন্ত্রীকে সরানোর আবেদনও এসেছে। তিনি সেগুলিই রাজ্য সরকারকে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী কটাক্ষের সুরে বলেন, “উনি আগের দিন যা বলেছেন তার থেকে একটু পিছিয়েছেন। উনি এক পা পিছিয়ে, দুই পা এগিয়ে, এভাবে এগোতে চাইছেন। সকালে বলছেন সুপারিশ করছি, বিকেলে বলছেন, না করছি না। বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ আগামীকাল প্রত্যাহার হয়ে যায় কিনা, সেটাও দেখতে হবে।”  তিনি জানিয়েছেন, অফিশিয়ালি বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ এখনও রাজ্য সরকার পায়নি। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “নির্দেশ কোথায় দিলেন, কাকে দিলেন, এখনও জানি না। পুরোটাই ধোঁয়াশায় পরিপূর্ণ ব্যাপার। আজ-কাল ছুটি আছে। সোমবার পাব আশা করি।” তদন্তের নির্দেশের পিছনে ‘কেয়ারটেকার’ উপাচার্যদের ভূমিকা রয়েছে বলে মত ব্রাত্যর। তাঁর কথায়, “সুপ্রিম কোর্ট যাদের বলেছেন, কেয়ারটেকার উপাচার্য, তাঁরা গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা তৈরির চেষ্টা করছেন। নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। আমি চাইব, রাজ্যপাল তথা আচার্যের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। দু’টোর সমাধানের রাস্তার মধ্যে একটি বেছে নিন।” একটি সমাধানের রাস্তা, সার্চ কমিটি সংক্রান্ত বিল বা মুখ্যমন্ত্রী সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য করার বিলে স্বাক্ষর করা। দ্বিতীয়টি, রাজ্য সরকারের সঙ্গে মিলে কাজ করা। 

সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও। তাঁর বক্তব্য, “বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্ব আচার্যের। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয় আইন মোতাবেক ও সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী আচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান। বাংলার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে সন্ত্রাস ও হুমকির বাড়বাড়ন্ত। দুর্নীতির অভিযোগও আছে। এই ধরনের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে হতে দেওয়া যাবে না। কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে আমি বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। তাঁরা নির্দেশ পাবেন।”

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement