অভিরূপ দাস: গন্ধে মালুম হচ্ছে, চারপেয়ে কেউ আছে। কিন্তু বেরনোর নাম নেই। বহু ডাকাডাকিতেও সাড়া দিচ্ছে না। শেষমেশ জানা গেল সত্যিটা। মনখারাপ গুজিয়ার! হলদে দেশি সারমেয়টাকে ভালোবেসে এই নামেই ডাকতেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য (Buddhadeb Bhattacharya)। বৃহস্পতিবার যিনি পাড়ি দিয়েছেন না ফেরার দেশে। দুপুর দুটো নাগাদ শেষবারের মতো বুদ্ধবাবুকে নিয়ে পাম অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে গিয়েছে শববাহী গাড়ি। ঘর ছেড়ে বুদ্ধবাবুর আস্তানা তখন পিস ওয়ার্ল্ডে। ঝাড়ুদার লালু পাসওয়ান জানিয়েছেন, সকালে খাবার খেয়ে সেই যে বেঞ্চের তলায় ঘুমিয়েছে গুজিয়া, আর বেরনোর নাম নেই বুদ্ধবাবুর প্রিয় পোষ্যের!
এই দেশি কুকুরটিকে 'গুজিয়া' নামে ডাকতেন বুদ্ধবাবু। নিজস্ব চিত্র।
‘‘দেখবেন? ভিতরে আসুন।’’ ঘরের লোহার গেট খুলে লালু পাসওয়ান নিয়ে যায় অন্দরে। মোবাইলের টর্চের আলো জ্বেলে দেখায় তাকে। মনমরা গুজিয়ার চোখে জল বোধহয়! বছর খানেক আগের কথা। দেশি কুকুরটা কোত্থেকে ঘুরতে ঘুরতে এসে ঠাঁই নেয় টেলিফোন অপারেটর রুমে (Telephone Operator Room)। বুদ্ধবাবুর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য বলেছিলেন, ''তাড়িও না। থাক এখানেই।'' সেই থেকেই ‘গুজিয়া’র ঠিকানা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর টেলিফোন অপারেটর রুম।
[আরও পড়ুন: ‘ক্রিকেট আর সিনেমার প্রতি অসম্ভব প্রেম ছিল’, বুদ্ধ-স্মরণ শোকগ্রস্ত মহারাজের]
রুম মানে, ৫৯ পাম অ্যাভিনিউ, ব্লক এ ফ্ল্যাটের বাইরের সেই সেই বিখ্যাত দশফুট বাই দশফুট ঘর। পাম অ্যাভিনিউতে (Palm Avenue) বুদ্ধবাবু উঠে আসা ইস্তক যা ছিল রাজ্যের ব্যস্ততম টেলিফোন অপারেটর রুম। মুর্হুমুর্হূ রিং বাজত। দেশ-বিদেশের বিখ্যাত সব ব্যক্তিরা যেমন ফোন করতেন, তেমন এখান থেকে ফোন যেত তাবড় তাবড় লোকজনের কাছে। দেওয়ালে ক্রমশ ফিকে হয়ে আসা একের পর এক নম্বর। কার নম্বর নেই? 'গণশক্তি'র প্রাক্তন সম্পাদক অভীক দত্ত, বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের নম্বর, প্রতিটি দপ্তরের সচিবের নম্বর। আপাতত সেখানেই থাকে গুজিয়া। দেশি পোষ্য (Pet Dog)।
[আরও পড়ুন: কেমন কাটত সকাল-রাত? পছন্দের খাবার কী? বুদ্ধদেবের ‘দিনলিপি’ শোনালেন সর্বক্ষণের সেবক]
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাইরে বেরোয়নি সেও। মনখারাপ? ‘‘হবে হয়তো।’’ লালু পাসওয়ানের কথায়, ''ও হয়তো বুঝতে পেরেছে মালিক আর নেই।'' বহু ডাকাডাকিতেও সাড়া দেয়নি গুজিয়া। লালু জানিয়েছেন, ‘‘শববাহী গাড়ি বেরনোর সময় বাইরে এসেছিল। তার পর সেই যে ভিতরে ঢুকে গিয়েছে আর বেরচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রীকে খুব ভালোবাসত!’’ মুখ ফসকে প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী সম্বোধন করে ফেলেছেন লালু! তার আর দোষ কী? পাম অ্যাভিনিউয়ের রংচটা লেটারবক্সটায় এখনও যে লেখা, ‘‘চিফ মিনিস্টার বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।’’