রমেন দাস: সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-এর খবরেই সিলমোহর। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়া অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হচ্ছেন অধ্যাপক বুদ্ধদেব সাহু। ১৭ তারিখের বিজ্ঞপ্তি ১৯ তারিখে প্রকাশ করার মাধ্যমেই রাজভবন জানিয়েছে, তিনিই উপাচার্যের দায়িত্ব সামলাবেন তিনিই। সোমবার থেকেই দায়িত্বভার গ্রহণ করার কথা বুদ্ধদেব সাহুর। দায়িত্ব নিয়েই ‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল’-এ প্রথম মুখ খুললেন তিনি।
প্রশ্ন: উত্তাল সময়ে কঠিন দায়িত্ব পেয়েছেন। এরপর কী করবেন? কীভাবে সামলাবেন পরিস্থিতি?
বুদ্ধদেব: আমি প্রথমত বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক যে পরিবেশ বর্তমানে রয়েছে। তা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক করার চেষ্টা করব। আমার সন্তানসম ছাত্র-ছাত্রীদের কী দাবি, তাঁরা কী চাইছেন, আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করব। আমি নিশ্চিত, আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা অত্যন্ত ভাল, তাঁরা মোটেও অবুঝ হবে না।
[আরও পড়ুন: পদ গেলেও আপত্তি নেই, পঞ্চায়েতে জয়ীদের ‘অঙ্গীকার’পত্রে সই করাচ্ছে তৃণমূল]
প্রশ্ন: কঠিন চ্যালেঞ্জ। ছাত্রমৃত্যুর আবহ? পারবেন সামলাতে?
বুদ্ধদেব: কেন পারব না। যে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে, সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না নিশ্চিত। কিন্তু এই একটি ঘটনার জন্য তো আমাদের সম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় কালিমালিপ্ত হতে পারে না। যাঁদের সন্তান গিয়েছে তাঁদের হাহাকার দেখে আমিও চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি। তবুও তো এগোতে হবে। কালো মুছে আলোর দিকে যেতেই হবে।
প্রশ্ন: হোক কলরব আন্দোলন। উপাচার্যের পদত্যাগ। যদি সেই অবস্থায় পড়েন?
বুদ্ধদেব: পড়ব না হয়ত। ওঁরা সকলে আমার সন্তানের মতো। আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু বছর পড়াচ্ছি। সমস্যা হলে তার সমাধান আমরা করতে পারি। কারণ, আলোচনাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সমাধানের পথ।
প্রশ্ন: কীভাবে?
বুদ্ধদেব: আমি আমার ছাত্র-ছাত্রীদের মতকেও প্রাধান্য দেব। তাঁরা কী বলছেন? সমস্যা সমাধানের বিকল্প পথ কী। নিশ্চিত তাঁরা বলবেন। সময় দিন। অবশ্যই সব ঠিক হবে।
প্রশ্ন: কিন্তু এই সময়ের আবহে তো প্রাণ ঝরে গেল! তারপর?
বুদ্ধদেব: সত্যিই তো। এই ঘটনার পক্ষে কিছু বলার মতো দুঃসাহস আমার নেই। যা হয়েছে এই জিনিস আমাদের গর্বের বিশ্ববিদ্যালয়কে খানিকটা ছোট করেছে। এটা অন্যায় হয়েছে। আমাদের ছাত্রছাত্রীরাও তো এর বিচার চাইছেন। আমিও বিচার চাই। দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি হোক কঠোর।
প্রশ্ন: কিন্তু আপনিও এখানকার অধ্যাপক। এতদিন বিচার চাননি কেন?
বুদ্ধদেব: কে বলেছেন বিচার চাইনি! বারবার আমরা অধ্যাপকদের একাংশ, পড়ুয়ারা সরব হয়েছি। বিচার চেয়েছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হেলদোল ছিল না। আরও সতর্ক তাঁরা হলে এই ছেলেটির মৃত্যু হত না।
দেখুন ভিডিও:
[আরও পড়ুন: ভিনরাজ্যে পড়তে গিয়ে বাংলার পড়ুয়ার রহস্যমৃত্যু, হস্টেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক বাবা-মা]
প্রশ্ন: আপনার প্রথম কাজ?
বুদ্ধদেব: স্বপ্ন মৃত্যুর সঠিক বিচারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে সাহায্য করা। আমার সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে, বাকি আধিকারিক, অধ্যাপক, পুরো যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবার মতামত নিয়ে যা যা করা যায় করব।
প্রশ্ন: সিসিটিভি?
বুদ্ধদেব: এই বিষয়ে আলোচনা চলছে। ভাবা হবে। এই বিষয়ে এখনই কোনও সিদ্ধান্ত বলতে পারব না।
প্রশ্ন: হস্টেল?
বুদ্ধদেব: অবশ্যই। হস্টেল ভিজিট থেকে শুরু করে নজরদারি, হস্টেলে যাতে এই অন্যায় রোধ করা যায়। কড়া নজর চালাতে হবে।
প্রশ্ন: না হলে পুলিশ ডেকে…
বুদ্ধদেব: একদমই নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মতানৈক্য থাকবে। অশান্তি হবেই। তাই বলে বাইরের কিছুই প্রয়োজন নয় বলে আমি মনে করি।
প্রশ্ন: আপনি বিজেপি ঘনিষ্ঠ শিক্ষক সংগঠনের যুক্ত বলেই কি এই পুরস্কার?
বুদ্ধদেব: রাজনীতি এখানে কেন আসছে জানি না। কিন্তু এটা বলব, আমি মানুষ হিসাবে দায়িত্ব নেব। সেখানে আবার রাজনীতি?
প্রশ্ন: কেন আপনিই পেলেন এই গুরু দায়িত্ব?
বুদ্ধদেব: মাননীয় আচার্য যা ভাল বুঝেছেন করেছেন।
প্রশ্ন: কীভাবে জানলেন এই খবর?
বুদ্ধদেব: আমার নাম নিয়ে একটা জল্পনা চলছিল। কোর্ট বৈঠকের পরে আমি জানতে পারি পরবর্তী উপাচার্য হিসাবে আমার উপর ন্যস্ত হতে পারে দায়িত্ব।
প্রশ্ন: তারপর?
বুদ্ধদেব: গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজভবনে যাই আমি। মাননীয় রাজ্যপাল ডাকেন। তিনি কতদিন পড়াচ্ছি, কত বছর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িত। একাধিক প্রশ্নের মধ্যেই রাজ্যপাল বলেন, আমাকে বড় দায়িত্ব দেওয়া হলে কী করবেন।