দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: ক্রিকেট ছিল নেশা। আর সেই ক্রিকেট মাঠে খেলতে খেলতে জীবনদীপ নিভে গেল ১৮ বছরের এক উঠতি ক্রিকেটারের। ক্যাচ ধরতে গিয়ে বলের আঘাত পেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে ক্লাবের কর্মকর্তা ও স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে জানান। দীপঙ্কর দাসের মৃত্যুতে চন্দননগরের কাঁটাপুকুরে নেমেছে শোকের ছায়া।
দীপঙ্কর নারুয়া হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। খেলাধুলোর পাশাপাশি বাদ্যযন্ত্র বাজানোর প্রতিও তাঁর আগ্রহ ছিল। খোল বাজানোয় পারদর্শী দীপঙ্কর। ছোট থেকেই ক্রিকেটের প্রতি অগাধ টান। লেগ স্পিনার হিসেবে ক্রিকেট মাঠে পরিচিতি লাভ করেছিলেন দীপঙ্কর। সামনেই একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টও ছিল। তারই প্রস্তুতির জন্য শনিবার বন্ধুদের সঙ্গে সন্তান সংঘের মাঠে ক্রিকেট অনুশীলন করছিল। অনুশীলন করার সময় হঠাৎই একটি ক্যাচ ধরতে গিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন দীপঙ্কর। অনুমান করা হচ্ছে, ক্যাচ ধরতে গিয়ে কোনওভাবে বলের আঘাত লেগেছিল দীপঙ্করের।
[আরও পড়ুন: শুভেন্দুর মুখে বারবার বিচারপতি মান্থার নাম, ‘সাধারণভাবে নিচ্ছি না’, খোঁচা কুণালের]
দীপঙ্কর লুটিয়ে পড়ার পরই সতীর্থরা ছুটে আসেন। তাঁকে ডাকাডাকি করতে শুরু করেন। সাড়াশব্দ না পাওয়ায় ক্লাবের কর্মকর্তা ও প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে শেষরক্ষা হয়নি। চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে জানান। এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে আসে কাঁটাপুকুর এলাকায়। স্থানীয়রা জানান দীপঙ্কর অত্যন্ত মিশুকে এবং ভাল ছেলে হিসেবে পরিচিত পাড়ায়। বছর কয়েক আগে তাঁর দাদার মৃত্যু হয় দুর্ঘটনায়। বাবা দিনমজুরের কাজ করে কোনওমতে সংসার চালান। তাই ছোট ছেলেকে ঘিরে জীবনের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন বাবা-মা। আশা ছিল একদিন ছোটছেলেই তাঁদের জীবনের ভরসা হয়ে উঠবে। কিন্তু তার আগেই ছেলের জীবনদীপ নিভে যাওয়ায় গোটা পরিবার এখন অথৈ জলে।
মা অনামিকা দাস জানান, ক্রিকেট ছেলের প্রাণ। সেই ক্রিকেটেই তার প্রাণ কেড়ে নিল। ছোট থেকেই ক্রিকেট খেলতে ভালবাসত। শুক্রবার চা জলখাবার খেয়ে মাঠে খেলতে গিয়েছিল। হঠাৎই তার কাছে খবর আসে ছেলের বল লেগেছে। ছেলে আর নেই। বাবা শরদিন্দু দাস জানান ছেলের কোনও অসুস্থতা ছিল না। সুস্থই ছিল। ক্রিকেট প্র্যাকটিস করতে মাঠে গিয়েছিল। তিনি এখনও ভাবতে পারছেন না ছেলে নেই। আর কোনদিনই সে ফিরবে না। আর তাদেরকে বাবা-মা বলে কোনওদিন ডাকবে না। শুধু অস্ফুট স্বরে বলতে শোনা গেল, এই যন্ত্রণা নিয়ে আর কতদিন বেঁচে থাকতে হবে জানি না।