সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেশের প্রাচীন ইতিহাস সংরক্ষণে কাজে নামছে কেন্দ্র। চমকপ্রদ ঘোষণা এবারের কেন্দ্রীয় বাজেটে। দেশের পাঁচটি ইতিহাস সম্বলিত স্থানে সংগ্রহশালা তৈরির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাডু, গুজরাট, অসম, হরিয়ানা – এই পাঁচ জায়গায় প্রাচীন সভ্যতার নির্দশন রয়েছে, রয়েছে তৎকালীন স্থাপত্যকীর্তিও। আর তা ঘিরে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীনে তৈরি হবে সংগ্রহশালা। পাশাপাশি আদিবাসী সংস্কৃতি রক্ষায় রাঁচিতে মিউজিয়াম তৈরির কথাও জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বাংলার প্রাপ্তি অবশ্য নামমাত্র। কলকাতায় ভারতীয় জাদুঘরের সংস্কারের দায়িত্ব নেবে কেন্দ্র। এ বাদে এই রাজ্যের ঐতিহাসিক স্থানগুলি ব্রাত্যই থেকে গেল।
যে পাঁচটি ঐতিহাসিক স্থানকে সংগ্রহশালা তৈরির জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে, সেগুলির ইতিহাস দেখে নেওয়া যাক একঝলকে।
রাখিগড়ি, হরিয়ানা: এখানে হরপ্পা সভ্যতার নিদর্শন আছে। হরিয়ানা সরকারের দাবি, খননকাজে হরপ্পা সভ্যতার নানা চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। ঐতিহাসিকরা জানিয়েছেন, পাতালে কাদা এবং ইট,পাথর দিয়ে তৈরি পরিকল্পিত শহরের অস্তিত্ব মিলেছে, যেখানে উন্নত পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থাও ছিল। দেশভাগের পর মহেঞ্জোদাড়ো-সহ হরপ্পা সভ্যতার বাকি চারটি শহর পাকিস্তানের অধীন।
[আরও পড়ুন: দিল্লিতে জমেছে কুর্সি দখলের লড়াই! অধিকাংশ AAP প্রার্থীর বিরুদ্ধেই রয়েছে ফৌজদারি মামলা]
ঢোলাভীরা, গুজরাট: এখানেও হরপ্পা সভ্যতার চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। ১৮০০ থেকে ৩০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ, প্রায় ১২০০ বছরের প্রাচীন সভ্যতাস্থল খুঁড়ে উদ্ধার হয়েছে অনেক কিছু। ১৯৯০ সাল থেকে শুরু হওয়া খননকাজে মিলেছে টোরাকোটার সামগ্রী, মালা, সোনা-রুপোর গয়নার অংশবিশেষ, যা মেসোপটেমিয়া অর্থাৎ বর্তমানের ইরান-তুরস্ক এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠা পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা থেকে এখানে আমদানি করা হয়েছিল। সিন্দু সভ্যতার নিদর্শনও পাওয়া গিয়েছে এখানে। সেই এলাকার প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী নিয়ে গড়ে তোলা হবে সংগ্রহশালা।
হস্তিনাপুর, উত্তরপ্রদেশ: মিরাটের কাছে হস্তিনাপুর মহাভারতের বর্ণিত কৌরব ও পাণ্ডবদের সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব রয়েছে বলে প্রত্নতাত্বিকদের মত। খননকাজে উঠে এসেছে তার বেশ কিছু নিদর্শন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধস্থলটিও এখানকারই একটি গ্রামে ছিল বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। এই হস্তিনাপুরকে ঘিরে তৈরি হবে মিউজিয়াম।
শিবসাগর, অসম: ষোড়শ-সপ্তদশ শতকে অহম রাজারা সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিলেন আজকের শিবসাগরের এই এলাকায়। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় উঠে এসেছে বহু ঐতিহাসিক নিদর্শন। রং ঘর, তলাতল ঘর, রুদ্রসাগর মন্দির, নামডাংয়ের প্রস্তর সেতুর মতো প্রাচীন স্থাপত্যের অংশ পাওয়া গিয়েছে। চলতি বাজেটে গুরুত্ব পেয়েছে শিবসাগরকে ঘিরে অহম সাম্রাজ্যের চিহ্ন রক্ষায় সংগ্রহশালা নির্মাণ।
[আরও পড়ুন: নির্মলার বাজেটে অখুশি শেয়ার বাজার, হু হু করে পড়ছে সূচক]
আদিচানাল্লুর, তামিলনাডু: প্রাচীন তামিল সভ্যতার চিহ্ন রয়েছে এখানে। বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার করে কার্বন ডেটিংয়ের মাধ্যমে গবেষকরা বুঝেছেন, প্রায় ৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৯০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত একটি সভ্যতা তৈরি হয়েছিল তুতিকোরিনের এই এলাকা ঘিরে। একে যত্ন করে রাখতে সংগ্রহশালা তৈরির ভাবনা কেন্দ্রের।
জানা গিয়েছে, সংস্কৃতি মন্ত্রকই এই পাঁচ জায়গায় মিউজিয়াম তৈরির কাজ করবে। শনিবারের বাজেটে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর এই ঘোষণায় ইতিহাসপ্রেমী মানুষজন বেশ খুশি হলেও, মন খারাপ বঙ্গবাসীর। এখানকার কয়েকটি জেলায় সুপ্রাচীন ইতিহাসের নিদর্শন জ্বলজ্যান্ত। তাহলে কেন সেসব জায়গায় সংগ্রহশালা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নজর দিল না কেন্দ্র, এনিয়ে ক্ষোভও বাড়ছে স্থানীয় বাসিন্দারা। এক্ষেত্রেও বাংলার প্রতি বঞ্চনার অভিযোগে সুর চড়ছে।
The post বাজেট ২০২০: দেশের পাঁচ ঐতিহাসিক স্থান ঘিরে সংগ্রহশালা তৈরির সিদ্ধান্ত, ব্রাত্যই বাংলা appeared first on Sangbad Pratidin.