সৌরভ মাজি, বর্ধমান: বর্ধমানের নান্দুরে তরুণী খুনে জড়িত খুব কাছের বন্ধু। প্রাথমিক তদন্তে এমনটাই জানতে পেরেছে পুলিশ। এই খুনের তদন্তে স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম বা সিট গঠন করেছে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে কাজ শুরু করেছে সিট। তবে ওই তরুণীকে খুনের আগে ধর্ষণ করা হয়নি বলে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানতে পেরেছে পুলিশ। এদিকে, আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে 'রাত জাগরণ' কর্মসূচির দিন নান্দুরে বছর চব্বিশের প্রিয়াঙ্কা হাঁসদা খুন হন। এই নিয়ে সমাজ মাধ্যমে বিভিন্ন বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট হতে থাকে। যা নিয়েও পুলিশ কড়া অবস্থান নিয়েছে। বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট করায় ইতিমধ্যে কয়েকজনকে চিহ্নিত করে নোটিস পাঠিয়েছে সাইবার ক্রাইম বিভাগ।
নান্দুরের ঝাপানতলার বাসিন্দা ছিলেন তরুণী। স্নাতকোত্তর পাশ করেছিলেন। একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি পান। সেই সংস্থার তরফে প্রিয়াঙ্কাকে বেঙ্গালুরুতে কয়েকদিনের ট্রেনিংয়ের জন্য পাঠিয়েছিল। সেখান থেকে গত ১২ আগস্ট বাড়ি ফেরেন। বুধবার রাতে শৌচের জন্য বাইরে যাচ্ছে বলে বেরিয়েছিলেন। তার পর আথ ফেরেননি। পরে কাছের মাঠে রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলার নলি কেটে খুন করা হয়েছে। শুক্রবার পুলিশ সুপার আমনদীপ সিং বলেন, "পুলিশের হাতে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এসেছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে ধারাল অস্ত্রেই খুন করা হয়েছে ওই তরুণীকে। ধর্ষণের কোনও কিছু উল্লেখ নেই।"
তিনি জানান, ঘটনার তদন্তে ৯ সদস্যের সিট গঠন করেছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে সিট তদন্তে নেমেছে। ইতিমধ্যেই পুলিশের হাতে বেশ কিছু তথ্যও এসেছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, মেয়েটির খুব পরিচিত এক বন্ধু এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। ফাঁকা মাঠ থেকে দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে সেই ধারালো অস্ত্র বা মেয়েটির ফোন কোনও কিছুই উদ্ধার হয়নি। তবে যা তথ্য প্রমাণ এসেছে, তাতে মেয়েটির ওই বন্ধু একাই ছিল বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। পুলিশ সুপার বলেন, "আশা করা যাচ্ছে খুব শীঘ্রই তাকে ধরতে পারবে পুলিশ। তারপরেই খুনের কারণ জানা যাবে।"
[আরও পড়ুন: আর জি করের প্রতিবাদে সরকারি পুজো অনুদান প্রত্যাখ্যান একাধিক ক্লাবের, কড়া প্রতিক্রিয়া কুণালের]
এদিকে, খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকে সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্ট হতে থাকে। কোথাও লেখা হয়, মেয়েটিকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। কেউ লেখে, বর্ধমান শহরের কার্জন গেটে মহিলাদের রাত দখলের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসার আগে খুন করা হয়েছে। কেউ লেখে, মেয়েরা স্বাধীন হতে চাইলেই খুন করা হয় স্বাধীনতা দিবসের আগেই। কেউ কেউ আবার তরুণীর বাবা সিবিআই তদন্ত চেয়েছে বলেও পোস্ট করে সামাজিক মাধ্যমে। এমনই বেশ কিছু বিভ্রান্তিকর তথ্যে জেলার সাইবার ক্রাইম বিভাগের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজনকে পুলিশ সাইবার ধারায় নোটিস পাঠিয়েছে।
এই প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলেন, "বিভিন্ন সোশাল মিডিয়ায় নানা ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে অকারণে উত্তেজনা তৈরি করা হচ্ছে। আমরা সবাইকে স্পষ্ট করেই জানাতে চাই, নিজের সোশ্যাল মিডিয়ার পেজে যা লিখবেন, একবার যাচাই করে লিখবেন। মিথ্যা কথা লেখার জন্য আইনগত ব্যবস্থা পুলিশ নিচ্ছে। আর নেবেও সেটা।" ওই তরুণীর বাবা সুকান্ত হাঁসদা বলেন, "পুলিশি তদন্তে আমাদের ভরসা রয়েছে।" ওই তরুণীর মা কাজল হাঁসদা বলেন, "আমার মেয়ের কোনও ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল বলে আমার জানা নেই। মেয়েক তো নজরেই রাখতাম।"