চন্দ্রজিৎ মজুমদার, কান্দি: শোকজের জবাব দেওয়ার পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট মুর্শিদাবাদের বড়ঞার ওসি সন্দীপ সেনের। ‘মুকদ্দর কা সিকন্দর’ সিনেমার জনপ্রিয় গান ‘জিন্দেগি তো বেওয়াফা হ্যায়, এক দিন ঠুকরায়েগি’ অংশটি শনিবার ফেসবুকে আপলোড করলেন তিনি। কিশোর কুমার তাঁর প্রিয় শিল্পী। তার ওপর স্যাড সং আরও প্রিয় বড়ঞার ওসি সন্দীপ সেনের। স্রেফ পছন্দের গান বলেই কি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করলেন নাকি এর নেপথ্যে অন্য কোনও কারণ রয়েছে, তা নিয়ে শুরু জোর জল্পনা। তবে সে প্রসঙ্গে ওসি বা জেলার পুলিশকর্তারা কোনও উত্তর দিতে চাননি।
গত সোমবার রাতে তালবোনা শ্মশানকালী পুজোর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত। ওসির কথায়, “১০০ টাকার মধ্যে প্রথমেই ৪০ টাকা লেস করে (বাদ দিয়ে) কাজ ধরতে হয় ঠিকাকর্মীকে। তারপর তাকে লাভ করতে হয় ২০ টাকা। তাহলে দাঁড়াল ৬০ টাকা। ব্লক অফিসকে দিতে হয় ৪ টাকা। তাহলে দাঁড়াল ৬৪ টাকা। ৫ টাকা দিতে হত আগের ওসিদের অর্থাৎ পুলিশকে। এছাড়াও ৫ টাকা দিতে হয় শেয়ালের বাচ্চাদের। সবশুদ্ধ ঠিকা কর্মী দিতেই চলে যায় ১০০ টাকায় ৭৫ টাকা। ২৫ টাকায় কী কাজ হবে, আপনারাই বুঝুন।” গ্রামবাসীদের সামনে ওসি আরও বলেন, “আমি সব বন্ধ করে দিয়েছি। জীবনকে (জীবনকৃষ্ণ সাহা বিধায়ক) বলে দিয়েছি একটা কমিটি তৈরি করে দিতে।”
[আরও পড়ুন: ক্রমশ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু, প্রাণ গেল কলকাতা পুলিশের এএসআইয়ের]
ওসির এই মন্তব্যের ভিত্তিও ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাঁকে শোকজ করেন পুলিশ সুপার। শুক্রবার সন্ধেয় জবাব দেন তিনি। ওসির মন্তব্য নিয়ে শুরু রাজনৈতিক চাপানউতোর। বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী বলেন, “শাসক দলের অন্দরের কথা প্রকাশ্যে নিয়ে এসে ওই ওসি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত রয়েছেন। চরম টেনশনে রয়েছেন। তাই ওসি এ সব করছেন। তবে একদিক দিয়ে উনি বাস্তব সত্যটাকে তুলে ধরেছেন।”
যদিও বিজেপি দক্ষিণ মুর্শিদাবাদ জেলার সাংগঠনিক সভাপতি শাখারব সরকার বলেন, “বড়ঞার ওসি যেটা বলেছেন তা নতুন কিছু নয়। উনি হয়তো মুখ ফসকে সত্যি কথাটা বলে ফেলেছেন। অন্য সব আধিকারিকরা এই সত্যি কথাটা বলার অপেক্ষা করছেন। কিন্তু চাকরিতে অসুবিধা হওয়ার কথা ভেবে মুখ খুলছেন না। আপনারা একটু খোলা চোখে দেখলে বুঝতে পারবেন এই কাটমানির কারণে রাজ্যে কোথাও রাস্তার হাল ভাল নেই। উনি উচিত কথা বলায় এখন ওকে শাসকদলের রোষানলে পড়তে হচ্ছে। তবে এটা বেশি দিন চলবে না।”
অপরদিকে সিপিএমের মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির সম্পাদক জামির মোল্লা জানিয়েছেন, “করোনা না হলে যেমন সাধারণ মানুষ লকডাউন জানতেন না তেমনই তৃণমূল না থাকলে কাটমানি মানুষ জানত না। ওসি ভেবেছিলেন এক। আর হয়ে গেছে আর এক। এখানে ওসির কোনও দোষ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। উনি সত্যি কথা প্রকাশ্যে বলে ফেলাতেই যত দোষ।”