সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: লোকসভা নির্বাচনের (Parliament Election) ঠিক আগে দেশজুড়ে কার্যকর হল সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ (CAA)। সোমবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই আইন চালু হওয়ার কথা ঘোষণা করল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু বিল পাশের ৪ বছর পর কার্যকর হওয়া এই ‘সিএএ’ আসলে কী? ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন আর বর্তমান সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের পার্থক্যটাই বা কী? কেনই বা সিএএ নিয়ে এত বিতর্ক?
পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে ভারতে আসা অ-মুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিতেই আনা হয় সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)। ২০১৯ সালে নাগরুিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হলেও বিধি নিয়ে জট থাকায় তা এতদিন বলবৎ করা যায়নি। সোম সন্ধ্যায় গেজেট নোটিফিকেশন জারি করে অবশেষে তা কার্যকরী করেছে কেন্দ্রের মোদি সরকার। লোকসভা ভোটের আবহে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মতুয়া গড়ে আনন্দোৎসবের পাশাপাশি অসমের আকাশে প্রতিবাদের মেঘ গাঢ় হচ্ছে।
তাৎপর্যপুর্ণ ভাবে, ১৯৫৫-র নাগরিকত্ব আইনের সঙ্গে সিএএ-র ফারাক উসকে দিয়েছে বিতর্ক। ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে কোনও ধর্মের উল্লেখ ছিল না। ২০১৯ সালে কেন্দ্র সরকার যে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাশ করিয়েছে তাতে স্পষ্টত ধর্মের উল্লেখ আছে। ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে স্পষ্ট বলা আছে, কোনও ভারতীয় বংশোদ্ভূত বা ভারতীয় উপমহাদেশে জন্মানো নাগরিক নির্দিষ্ট মেয়াদের বেশি সময় এদেশে থাকলেই তাঁকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে মুসলিম বা অমুসলিম উল্লেখ করা ছিল না। একই সঙ্গে বলা হয়েছিল নাগরিকত্ব পেতে টানা এক বছর ভারতে থাকতে হবে। এ ছাড়াও বিগত ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর ভারতে থাকা বাধ্যতামূলক। নতুন আইনে সেই ১১ বছরের সময়কাল কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: দেশজুড়ে লাগু হল CAA, বিজ্ঞপ্তি জারি কেন্দ্রের]
কী ভাবে সিএএ থেকে সুবিধা পাবেন শরণার্থীরা? আইন অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এদেশে আসা ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে নির্যাতিত শরণার্থীরা ভিসা বা পাসপোর্টের মতো নথি না থাকলেও ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
[আরও পড়ুন: আজই CAA লাগু! ‘নাগরিকত্ব বাতিল হলে চুপ থাকব না’, হুঙ্কার মমতার]
তবে ২০১৯ সালে সিএএ আইন পাশ হয়ে গেলেও তা কার্যকর হওয়ার বিষয়টি গত ৪ বছরের উপর ঝুলে ছিল। করোনা পর্বে দেশের নানা প্রান্তে এই আইনের বিরোধিতায় শুরু হয় আন্দোলন। যার জেরে অশান্তি, হিংসায় প্রাণ যায় প্রায় ১০০ জনের। এরাজ্যের মতুয়া সম্প্রদায়ের দাবি ছিল অবিলম্বে সিএএ লাগু করার। কিছুদিন আগে এ বিষয়ে বার্তা দিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর বলেছিলেন, “ভোটের আগেই সিএএ কার্যকর হচ্ছে।” সোমবার দেশব্যাপী সিএএ লাগু হওয়ার পর খুশিতে মেতে উঠতে দেখা যায় মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের।
অন্যদিকে, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বহু অবিজেপি নেতা-নেত্রীরা এই আইনের প্রতিবাদ জানান। তাঁদের অভিযোগ, সংশোধিত আইনে ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। যা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার পরিপন্থী। এছাড়াও, অসম-সহ গোটা উত্তর-পূর্বে আশঙ্কার মেঘ ঘনিয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে সংখ্যালঘু হিন্দুরা ব্যাপক হারে ভারতে চলে আসতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। তাছাড়া, অসমে থাকা বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদেরও (বাংলাভাষী) নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ প্রশস্থ হয়ে যাবে। ফলে অসমের জনবিন্যাস বদলে যেতে পারে। বিপন্ন হবে স্থানীয় ভাষা, সংস্কৃতি। এছাড়া, সিএএ চালুর পরেই নাগরিকপঞ্জি আপডেট করার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।