গোবিন্দ রায়: বিয়ের পর মেয়েরা বাবার সম্পত্তির অংশীদার, তাহলে কেন পরিবারের সদস্য হবেন না? কেনই বা উত্তরাধিকার সূত্রে চাকরি পাবেন না? বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের এক মামলায় এই প্রশ্ন তুলে বীরভূমের বাসিন্দা রেখা পাল কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta HC) দ্বারস্থ হন। রাজ্য সরকার পালটা বিবাহিত মেয়ে – এই যুক্তি দেখিয়ে চাকরির বিষয়টি নাকচ করে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেই মামলা হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ, ডিভিশন বেঞ্চে ঘুরে প্রায় ১০ বছর কেটে গিয়েছে। রাজ্য সরকারের দীর্ঘসূত্রিতা ও মামলা ঝুলিয়ে রাখার কারণে মামলাই খারিজ করে দিল হাই কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ।
বীরভূমের (Birbhum) বাসিন্দা রেখা পাল। বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য তাঁর বাবার জমি অধিগ্রহণ করে রাজ্য সরকার। সে ২০১২ সালের ১২ অক্টোবরের ঘটনা। জমিদাতাদের চাকরি, ক্ষতিপূরণের জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়। সেই নির্দেশিকা অনুসারে বিশেষ কোটায় চাকরির জন্য আবেদন জানান রেখা পাল। সম্পত্তির ক্ষতিপূরণ হিসেবে রেখাদেবী চাকরির আবেদন করেন। কিন্তু রাজ্য সরকার তাঁর আবেদন খারিজ করে জানায়, রেখা পাল বিবাহিত। তাই বিশেষ কোটায় চাকরি পাওয়ার উপযুক্ত প্রার্থী নন।
[আরও পড়ুন: কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের চতুর্থ দিনে থাকছে কী কী চমক? নজর থাকুক ইউক্রেনের তথ্যচিত্রে]
রেখাদেবী জানান, বাবার মৃত্যুর পর থেকেই তাঁর বিধবা মায়ের দেখাশোনা, সমস্ত দায়-দায়িত্ব তিনিই পালন করে আসছেন। তাই রাজ্য সরকারের প্রকাশিত নির্দেশিকাকে চ্যালেঞ্জ করে ২০১৩ সালে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন রেখাদেবী। বিচারপতি অশোক দাস অধিকারী ২০১৪ সালে রাজ্য সরকারের ওই নির্দেশিকা খারিজ করে দেন। পাশাপাশি রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেন, রেখা পালকে পরিবারের সদস্য হিসাবে ঘোষণা করে বিশেষ কোটায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। জমিহারা হিসেবে বিশেষ কোটায় চাকরি পাওয়ার যোগ্য রেখা পাল, রায়ে সেকথাও বলেন বিচারপতি।
[আরও পড়ুন: Mahua Moitra: প্রয়াত সোমনাথবাবুর সিদ্ধান্তকে ঢাল করেই সংসদে বলতে দেওয়া হল না মহুয়াকে]
সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য সরকার ডিভিশন বেঞ্চে দ্বারস্থ হয়। কিন্তু দীর্ঘ ১০ বছর কলকাতা হাই কোর্টের বিভিন্ন এজলাস ঘুরে অবশেষে মামলা আসে বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চে। সেখানে মামলাকারী রেখা পালের পক্ষের আইনজীবী আশিস কুমার চৌধুরী একাধিক প্রশ্ন তোলেন, কেন বিবাহিত মেয়েকে তাঁর পিতার পরিবারের সদস্য বলে গণ্য করা হবে না? যদি পুত্র/বিধবা/বিবাহবিচ্ছিন্না মেয়েরা পরিবারের সদস্য হন, তাহলে বিবাহিত মেয়েরাও তাঁর পিতার পরিবারের সদস্য। তাই রাজ্যের নির্দেশিকা ‘অসাংবিধানিক’। তিনি আর বলেন, রাজ্য সরকার লিঙ্গ বৈষম্যের কারণ দেখিয়ে পুত্র/কন্যা/বিধবা এবং বিবাহ বিচ্ছেদ দেখিয়ে কাউকে এভাবে তার সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে না।
এনিয়ে প্রায় ১০ বছর কেটে যায়। শুক্রবার বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি সাব্বির রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকারের দীর্ঘসূত্রিতা ও মামলা এতদিন ধরে ঝুলিয়ে রাখার জন্য মামলাটি খারিজ করে দিলেন।