শুভঙ্কর বসু: সবেমাত্র স্কুটার কিনেছেন। তখনও পুরোদস্তুর লাইন্সেস পাননি। বলা নেই, কওয়া নেই। আচমকাই মাঝ রাস্তায় স্কুটারে উঠে পড়লেন খোদ বিডিও। বিপদের আশঙ্কা করেছিলেন পুরুলিয়ার শ্রীমান মিশ্র। কিন্তু, কে শুনে কার কথা! বাধ্য হয়ে বিডিওকে লিফট দিতে গিয়ে দুর্ঘটনাটি ঘটিয়ে ফেলেন তিনি। স্কুটার চালককে তিন লক্ষ টাকা জরিমানা দেওয়ার নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট।
[ডাক্তারের পর কলেজ ছাত্রী, এবার মাদক পাচারের চেষ্টা দমদম সেন্ট্রাল জেলে]
১৯৯৯ সাল। সবেমাত্র একটি স্কুটার কিনে হাত পাকাচ্ছেন পুরুলিয়ার হুড়ার বাসিন্দার শ্রীমান মিশ্র। কোনওমতে একটি ‘লার্নার লাইন্সেস’ জোগাড় করেছেন তিনি। একদিন পুরুলিয়ার কাশীপুর থেকে স্কুটার চালিয়ে লালপুর মোড়ের দিকে যাচ্ছিলেন শ্রীমান। মাঝ রাস্তায় হুড়ার তৎকালীন বিডিও কৃষ্ণকান্ত সিংয়ে দেখা। একগাল হেসে সটান স্কুটারে চেপে বসলেন বিডিও সাহেব। হাত তখনও সড়গড় হয়নি। কিন্তু, শ্রীমানের শত আপত্তিতেও স্কুটার থেকে নামতে রাজি হননি বিডিও। বাধ্য হয়েই কৃষ্ণকান্ত সিং-কে লিফট দিতে হয়েছিল তাঁকে। লালপুর মোড় থেকে কিছুটা দূরেই একটি ট্রেলারকে ধাক্কা মারে স্কুটারটি। স্কুটারটির তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েইছিল, দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন চালক শ্রীমান মিশ্র ও বিডিও কৃষ্ণকান্ত সিং। দু’টি পা-ই বাদ দিতে হয় বিডিও-র। চলাফেরার ক্ষমতা হারান তিনি।
২০০০ সালে ১৬ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে হুড়ার তৎকালীন বিডিও কৃষ্ণকান্ত সিং আবেদন জানান পুরুলিয়া জেলা মোটর অ্যক্সিডেন্ট কেস ট্রাইব্যুনালে। তবে স্কুটার চালক শ্রীমান মিশ্রের বিরুদ্ধে অবশ্য কোনও অভিযোগ ছিল না। বরং ট্রেলার মালিকের কাছেই ক্ষতিপূরণ চেয়েছিলেন বিডিও। কিন্তু শুনানি চলাকালীন বারবারই স্কুটার চালককেও মামলার পক্ষ করার মৌখিক নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারক। কিন্তু ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ মানেননি পুরুলিয়ার হুড়ার তৎকালীন বিডিও। পাঁচ বছর ধরে মামলা চলে। শেষপর্যন্ত, দুর্ঘটনার আহত বিডিওকে সাড়ে সাত লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয় পুরুলিয়া জেলা মোটর অ্যক্সিডেন্ট কেস ট্রাইব্যুনালে। ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ, ক্ষতিপূরণের সাড়ে চার লক্ষ টাকা দেবে ট্রেলার মালিক তথা ইনসিওরেন্স কোম্পানি। আর তিন লক্ষ টাকা দিতে হবে স্কুটার চালক শ্রীমান মিশ্রকে। ট্রাইব্যুনালের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাই কোর্টের মামলা করেন তিনি। এবার তিনি স্কুটার চালককেও মামলার সঙ্গে যুক্ত করেন বটে। তবে শুনানিতে তাঁকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যান বিডিও-র আইনজীবী। কিন্তু, লাভ হয়নি। হাই কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ, দুর্ঘটনার দায় কোনওভাবেই এড়াতে পারেন না স্কুটার চালক। ক্ষতিপূরণের একাংশ তাঁকে দিতেই হবে। শুধু তাই নয়, স্কুটার চালককেই আগে তিন লক্ষ টাকা দিতে হবে। তারপর বাকি টাকা মেটাবে ট্রেলার চালক ও ইনসিওরেন্স কোম্পানি।
[শুদ্ধিকরণের নামে আংটি নিয়ে চম্পট পুরোহিতের, থানায় অভিযোগ দায়ের গৃহবধূর]
The post কাঁচা হাতে লিফট, স্কুটার চালককে তিন লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ হাই কোর্টের appeared first on Sangbad Pratidin.