গোবিন্দ রায়: পুলিশ হেফাজতে মারের জেরে ঢোলাহাটের যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ কলকাতা হাই কোর্ট। শনিবারের মধ্যে এই দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করতে হবে। হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, তথ্যপ্রমাণ জোগাড় ও স্বচ্ছ তদন্তের স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে নথি জোগাড় করা দরকার। আর তাই দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করা জরুরি। হেফাজতে মৃত্যুর ক্ষেত্রে যেসব গাইড লাইন মানতে হয় সেসব মানতে হবে। ভিসেরার নমুনা সিএফএসএল হায়দরাবাদে পাঠাতে হবে। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আগামী ২২ জুলাই আদালতে পেশ করতে হবে। মৃতের কাকা-সহ পরিবারের লোকেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ঢোলাহাট থানার আইসি তদন্তে কোনভাবে যুক্ত থাকতে পারবেন না বলেও হাই কোর্টের তরফে জানানো হয়েছে।
গত সোমবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা ঢোলাহাটে চুরির দায়ে অভিযুক্ত যুবকের রহস্যমৃত্যুর ঘটনার তদন্তে মামলা দায়ের হয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টে। আবেদনকারীর আইনজীবীর দাবি, জামিন নিশ্চিত করতে পুলিশকে দিতে হয়েছে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। একইসঙ্গে, চুরির দায়ে ধৃত ওই যুবককে ইলেকট্রিক শকও দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। আদালতে রাজ্য জানিয়েছে, গত ৩ জুলাই রাত ৮ টা ৫ মিনিটে মৃত যুবকের কাকা মহসিন হালদার থানায় সোনার গয়না এবং নগদ টাকা চুরির অভিযোগ দায়ের করেন।
[আরও পড়ুন: এবার বর্ধমান, চোর সন্দেহে গণপিটুনি ৪ জনকে, উদ্ধারে গিয়ে আক্রান্ত ২ পুলিশকর্মী]
তার ভিত্তিতেই এর পরের দিন অর্থাৎ গত ৪ জুলাই ভোর ৩ টে ৪৫ মিনিটে তাঁকে হেফাজতে নেওয়া হয়। রাজ্য পুলিশ হেফাজতের আবেদন জানায়, কিন্তু বিচারক জামিন দেন। পরিবারের বক্তব্য, জামিনে মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফেরার পরেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে প্রথমে মথুরাপুর ব্লক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। একের পর এক হাসপাতাল ঘুরে চিত্তরঞ্জন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় তাঁকে। কিন্তু সেখানেও চিকিৎসকরা সাড়া না দেওয়ায়, তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় পার্ক সার্কাসের বেসরকারি হাসপাতালে। সোমবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়।
বৃহস্পতিবার সেই মামলায় হাসপাতালে মৃত যুবকের মেডিক্যাল রিপোর্ট তুলে ধরে রাজ্য। রাজ্যের কৌঁসুলি আদালতে জানান, হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে যে, মৃতের জন্ডিস ছিল। যে কারণে তাঁর ইউরিয়া এবং ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে গিয়েছিল। অভিযোগকারী কাকাই তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যায় বলে জানিয়েছে রাজ্য। তার প্রেক্ষিতে মৃত যুবকের দেহ সংরক্ষণের পাশাপাশি তাঁর ময়নাতদন্তের ভিডিও রেকর্ডিং সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। একইসঙ্গে, আদালতের নির্দেশ, কাকদ্বীপ সাব-ডিভিশনাল হাসপাতালের ৪ জুলাইয়ের ভিডিও ফুটেজও সংরক্ষণ করতে হবে হাসপাতালকে। সেই সঙ্গে, যে হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে তার সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।শুক্রবার এই মামলার শুনানিতে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি।