গোবিন্দ রায়: টোটো দৌরাত্ম্যে নাজেহাল শহরবাসী। অটোর ক্ষেত্রে তবুও পরিবহণ দপ্তরের স্বীকৃতি রয়েছে। কিন্তু টোটোর সেসবের বালাই নেই। এই যানের বৈধতা নিয়ে এবার রাজ্যের পরিবহণ দপ্তরের কী ভাবনা তা জানতে চাইল কলকাতা হাই কোর্ট। উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট পুরসভায় টোটোর বৈধতা নিয়ে পুরকর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত নিয়ে দায়ের হওয়া এক মামলায় এমনই নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। আগামী ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে এনিয়ে রাজ্যকে হলফনামা পেশের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে, বসিরহাটে অবৈধ টোটো টোটো নিয়ন্ত্রণে পুরসভা কী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সে ক্ষেত্রে রুট ম্যাপই বা কী ছিল তা নিয়েও পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য চেয়েছে আদালত।
পরিবহণ দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রত্যেক পুরসভা এলাকায় কত টোটো চলে, তার তালিকা তৈরি করে জমা দিতে বলা হয়েছে। তা পাওয়ার পরই টোটো চলাচলের ক্ষেত্রে একটা গাইডলাইন প্রকাশ করা হবে। শুধু তাই নয়, জাতীয়, রাজ্য সড়ক-সহ গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় টোটো চলাচল বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়েছে পরিবহণ দপ্তর। স্থানীয় পুরসভা, পঞ্চায়েতগুলোকে বৈঠক করে টোটো-অটোর রুট ঠিক করতে বলা হয়েছে। পুলিশকেও নজর রাখতে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট রুটের বাইরে যাতে অটো-টোটো চলাচল না করে। তবে কোন রুটে অটো-টোটো চলবে তা বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করেই ঠিক করতে হবে। একই সঙ্গে বে-আইনিভাবে টোটো বা ই-রিকশা বিক্রি রুখতে এবার ডিলারদের তলব করতে চলেছে পরিবহণ দপ্তর। চলতি সপ্তাহেই রাজ্যের প্রায় শ’দেড়েক ডিলারকে ডেকে পাঠানো হবে। ভবিষ্যতে রেজিস্টেশন নম্বর ছাড়া টোটো-বা ই রিকশা বিক্রি করলে সেই ডিলারকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে বলে জানানো হয়েছে। পরিবহণ দপ্তর সূত্রে খবর, রাজ্যে চলা কয়েক লক্ষ টোটো বা ই-রিকশার ৯০ শতাংশেরই কোনও রেজিস্ট্রেশন নেই। জানানো হয়নি আরটিও অফিসে। এবার এই ডিলারদের বিষয়েই কড়া মনোভাব নিচ্ছে সরকার।
[আরও পড়ুন: লোকাল ট্রেনের ভেন্ডারে বস্তাচাপা দিয়ে চোলাই মদ পাচার, উদ্বিগ্ন রেল কর্তৃপক্ষ]
সম্প্রতি, বসিরহাট পুরসভা এলাকায় ৫ হাজারের বেশি টোটো নিয়ন্ত্রণে আনতে সিদ্ধান্ত নেয় বসিরহাট পুরসভার বোর্ড অফ কাউন্সিলর। সেখানে রেজিস্ট্রেশন বাবদ ৫০০ টাকা ধার্য করা হয়। এবং নতুন গাড়ি নামাতে হলে পুরনো গাড়ির নম্বর প্লেট দেখানো-সহ একাধিক নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন ১৪০ টি টোটো চালক। তাঁদের তরফে আইনজীবী অর্জুন সামন্তের দাবি, “পুরসভা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সম্পূর্ণ এক্তিয়ার বহির্ভূত। কোনও মোটর বা যন্ত্রচালিত গাড়িতে অনুমোদন দেওয়ার এক্তিয়ার একমাত্র রাজ্যের পরিবহণ দপ্তর ও আঞ্চলিক পরিবহণ বিভাগের (আরটিও)।” পুরসভা এক্ষেত্রে কীভাবে রেজিষ্ট্রেশন দিতে পারে তা নিয়েও মামলায় প্রশ্ন তোলা হয়।
যদিও পুরসভার তরফে আইনজীবী দেবব্রত চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “বসিরহাট পুরসভার তরফে কোনও রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়নি।” তাঁর দাবি, “না আছে রেজিস্ট্রেশন নম্বর, না আছে নাম্বার প্লেট, না চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স। বে-আইনিভাবে বছরের পর বছর ধরে শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই তিনচাকার যান। বেপরোয়াভাবে চলাচলের জন্য বাড়ছে দুর্ঘটনাও। যা নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে এখন রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রশাসনকে। তাই যাত্রী সুরক্ষায় এই টোটোগুলোকে চিহ্নিত করতেই পুরসভার তরফে একটি গাইডলাইন করে দিয়েছিল।” যদিও দুপক্ষের বক্তব্য শুনে আপাতত পুরসভার সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর না করার কথা জানিয়েছে আদালত। এই মধ্যে ২০১৫ সালে টোটো নিয়ে রাজ্যের পরিবহণ দপ্তর যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। তা নিয়ে রাজ্যকে হলফনামা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।