গোবিন্দ রায়: সিবিআই হেফাজতে বগটুই কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত লালন শেখের ‘রহস্যমৃত্যু’র ঘটনায় সিবিআইকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দিল কলকাতা হাই কোর্ট। আগামী ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে বিভাগীয় তদন্তের রিপোর্ট আদালতে পেশ করার প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের। এই ঘটনার পরবর্তী শুনানি হবে সেদিনই। এদিকে, ১২ ডিসেম্বরের ‘হুঁশিয়ারি’র প্রসঙ্গ উল্লেখ করে লালন শেখের মৃত্যুর ঘটনায় শুভেন্দু অধিকারীকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি তৃণমূলের।
সিবিআই বৃহস্পতিবার হাই কোর্টে জানায়, লালন শেখের মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক। সিবিআইয়ের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে সিআইডি। আমরা এই তদন্তে ভরসা রাখতে পারছি না। প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হয়েছে লালনের। মৃত সুস্থ ছিলেন। এটি আত্মহত্যার ঘটনা। কিন্তু খুনের ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। পুরোটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিভাগীয় তদন্ত চলছে, সেই রিপোর্ট আদালতে পেশ করতে চাই। পাশাপাশি রাজ্যের বক্তব্য, “সিবিআইয়ের তদন্তে আমরা বাধা দিচ্ছি না। হেফাজতে মৃত্যু হলে তার তদন্ত কে করবে? অন্য তদন্তের সঙ্গে এই তদন্তের কোন সম্পর্ক নেই।” দু’পক্ষের সওয়াল জবাব শেষে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ আগামী ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে বিভাগীয় তদন্তের রিপোর্ট আদালতে পেশ করতে হবে সিবিআইকে।
[আরও পড়ুন: আসানসোল দুর্ঘটনা: ‘২১ তারিখ আবার কী ঘটবে?’, ডিসেম্বর তত্ত্ব নিয়ে শুভেন্দুকে বিঁধলেন অভিষেক]
উল্লেখ্য, সোমবার বীরভূমের রামপুরহাটে সিবিআইয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পে বাথরুমে লালন শেখের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। মঙ্গলবারই সিবিআই হেফাজতে অভিযুক্ত লালন শেখের রহস্যমৃত্যুর তদন্তে নামে সিআইডি। বুধবার আইজি সুনীল চৌধুরির নেতৃত্বে সাত সদস্যের সিআইডি দল ও পরে ফরেনসিক টিমও সিবিআইয়ের অস্থায়ী ক্যাম্প পান্থশ্রীতে গিয়ে ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত করে। সিআইডি তদন্তেরও সম্মতি দেয় কলকাতা হাই কোর্ট। বুধবার হাই কোর্টে বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর নির্দেশ, সিআইডিকে তদন্ত প্রক্রিয়ার ভিডিওগ্রাফি করতে হবে। তবে অভিযুক্ত সিবিআই আধিকারিকদের বিরুদ্ধে এখনই সিআইডি কোনও কড়া পদক্ষেপ করতে পারবে না।
সিআইডির প্রশ্ন, যেখানে অভিযুক্ত স্নান করতে বাথরুমে গেলেও তাঁর উপর নজর রাখা দস্তুর, সেখানে দরজা কি ভিতর থেকে বন্ধ ছিল? সাধারণত স্নানের সময় অভিযুক্তর শরীর মোছার জন্য ছোট কাপড় দেওয়া হয়, যাতে ফাঁস না লাগানো যায়। সেখানে এত বড় গামছা লালনকে কেন দেওয়া হল, চলছে তদন্ত। সিআইডি আধিকারিকরা তদন্তে দেখেছেন, ওই অস্থায়ী ক্যাম্পে মাত্র একটি সিসিটিভির ক্যামেরা ছিল। যে ঘরে ধৃত লালন শেখকে রাখা হয়েছিল, সেই ঘরের ভিতর কোনও সিসিটিভির সন্ধান পায়নি সিআইডি। বাথরুমের দরজা বন্ধ ছিল। ফলে ভিতর না কি বাইরে থেকে দরজাটি বন্ধ ছিল, তা তদন্তসাপেক্ষ।
এদিকে, শুভেন্দু অধিকারীর ১২ ডিসেম্বরের ‘হুঁশিয়ারি’র প্রসঙ্গ তুলে লালন শেখের রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় বিরোধী দলনেতার জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানিয়েছে তৃণমূল। শাসকদলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “সিবিআইয়ের বহু অফিসার দক্ষ, যোগ্য। তা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। তবে ব্র্যান্ড সিবিআইয়ের দক্ষতা, যোগ্যতা নষ্ট করে দিচ্ছে বিজেপি। সিবিআই অমুককে ধরে আনবে। অমুকের বাড়ি যাবে যদি বলতে পারে, তবে মৃত্যু ঘটানোরও নির্দেশ দিয়েছে তা হতেই পারে।”