গোবিন্দ রায়: স্কুল শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশের ১৩ মাস পেরোলেও কাজে যোগ দিতে পারেননি শিক্ষিকা। তার জেরেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও টিচার ইনচার্জকে তীব্র ভর্ৎসনা করল কলকাতা হাই কোর্ট (Calcutta High Court)। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ওই শিক্ষিকাকে সংশ্লিষ্ট স্কুলে কাজে নিয়োগ করতে হবে না হলে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সোমবার এই শর্তে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও টিচার ইনচার্জকে রেহাই দিল হাই কোর্ট।
তবে বদলির নির্দেশ এর পরেও শিক্ষিকাকে নিয়োগ করা হল না কেন? কেনই বা তিনি এক বছরের বেশি সময় বেতন পাচ্ছেন না? এমন একাধিক প্রশ্ন তুলে অভিযুক্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও টিচার ইনচার্জকে ভর্ৎসনা করেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আসলে এটা পৌরুষত্বের আস্ফালন দেখানো ছাড়া আর কিছু নয়। তাই তো একজন মহিলাকে চাকরি পেতে একবছর ধরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হয়!”
বোর্ড কেন খালি পদের তালিকা না দেখেই শিক্ষিকাকে ওই স্কুলে পাঠাল। তা নিয়েও ক্ষোভ উগরে দেন বিচারপতি। “তারাও দায় এড়াতে পারে না। রাজ্যের অন্যতম একটা নামী স্কুল, যেখান থেকে বছরে মাধ্যমিকে বেশ কয়েক জন করে প্রথম দশে থাকে, তার এই হাল!” বলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
[আরও পড়ুন: ফের বাড়ল পেট্রল-ডিজেলের দাম, মধ্যবিত্তের চাপ বাড়িয়ে আরও মহার্ঘ্য রান্নার গ্যাস]
আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ওই শিক্ষিকাকে ওই স্কুলে কাজে যোগ দেওয়ার ব্যাবস্থা করতে হবে। না হলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও টিচার ইনচার্জের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেবে হাই কোর্ট। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী শুক্রবার।
জানা গিয়েছে, তেহট্টের উত্তর দিনাজপুর গোয়ালপোখরের তুতিকাটা হরমা আদিবাসী জুনিয়র গার্লস স্কুলের ইংরেজি শিক্ষিকা ছিলেন সংযুক্তা রায়। গত বছর পর্ষদ সংযুক্তা রায়ের বদলির আবেদন মঞ্জুর করে। পর্ষদের অনুমতি নিয়ে যোগদান করতে গেলে বাধা দেন রায়গঞ্জ করোনেশন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কালীচরণ সাহা। স্কুলের তরফে জানানো হয় শূন্যপদ না থাকায় তাঁকে স্কুলে যোগদান করানো সম্ভব নয়। ১৩ মাস শিক্ষিকা সংযুক্তা রায়কে চাকরিতে যোগ দিতে দেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে বিচার চেয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি।
শিক্ষিকার আইনজীবী অঞ্জন ভট্টাচার্যের অভিযোগ, খুনের আসামী এক শিক্ষক জেল থেকে বেরিয়ে পুনরায় ওই স্কুলে যোগ দেবে, তাই ওই পদে তাঁকে যোগদান করানো হচ্ছে না।
মামলার আগের শুনানিতে করোনেশন স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বেতন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। এদিন প্রধান শিক্ষককে সশরীরে তলব করেন বিচারপতি। জিন্স আর টি-শার্ট পরে হাজিরা দিতে এসে আদালতের ভর্ৎসনার মুখে পড়েন ওই শিক্ষক। আদালতের নির্দেশে ১০ মিনিটে টি-শার্ট বদলে এসে রক্ষা পান তিনি। আদালত জানিয়েছে, মঙ্গলবারের মধ্যে ওই শিক্ষিকার বেতন ও চাকরি ফেরত না দিতে পারলে প্রধান শিক্ষক ও টিচার ইনচার্জকে চাকরি থেকে বিতাড়িত করা হবে।