শুভঙ্কর বসু, কলকাতা: অবশেষে কলকাতা হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চে চলা পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে মামলার শুনানি শেষ হল বৃহস্পতিবার দুপুরে৷ এদিন বাম, বিজেপি, পিডিএস-সহ বিরোধীদের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের তরফেও আদালতে সওয়াল করা হয়। রাজ্য সরকারের তরফেও আদালতে বক্তব্য রাখা হয়। বেলা দেড়টা নাগাদ শুনানি শেষ হলেও বিচারক সুব্রত তালুকদার রায়দান আগামিকাল শুক্রবার বিকাল সাড়ে চারটেয় জানাবেন বলে ঘোষণা করেছেন। একইসঙ্গে কাল রায় দেওয়া পর্যন্ত নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
এদিন বামেদের তরফে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য সওয়াল করে বলেন, “বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে মানেই আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারবে না এমন মত সঠিক নয়। কারণ, সাধারণ ভোটারদের ভোটাধিকার লঙ্ঘিত হলে কোর্টই সঠিক পথ দেখাতে পারে।” বিরোধীদের তরফে ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত মামলার উদাহরণ তুলে ধরে ভোটগ্রহণের দিন পরিবর্তনের কথা বলা হয়। নির্বাচন কমিশনের তরফে সওয়ালে বলা হয়, রাজ্যের সর্বত্রই শান্তি এবং ভোটগ্রহণের স্বাভাবিক পরিস্থিতি রয়েছে। বিরোধীরা ৭০ হাজারের বেশি মনোনয়ন জমা দিয়েছে। বিরোধীদের সব অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে ব্যবস্থা নিয়েছে কমিশন৷
গতকালের মামলার শুনানির শুরুতেই বিচারপতি সুব্রত তালুকদার জানিয়ে দেন, সুপ্রিম কোর্ট এবং হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, দ্রুত এই মামলার নিস্পত্তি করতে হবে৷ তাই অন্যান্য রাজনীতিক দলগুলিকে হলফনামা জমা দিতে হবে না। সময় কম, তাই সকলের বক্তব্য শোনা হবে আইন মোতাবেক, মন্তব্য করেন বিচারপতি।
আদালতকে রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কোন কোন ব্লকে প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি, তা জানাক বিরোধীরা। প্রশ্ন তোলেন, পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি, অথচ আদালতে এসে বিরোধীরা কি আদালতকেই প্রতারণা করছেন না? দ্বিতীয়ত, সংবাদপত্র বা টেলিভিশনের ফুটেজ কখনও প্রমাণ বলে বিবেচিত হতে পারে না। তাই বিজেপির এই আবেদন কি আদৌ গ্রহণযোগ্য? কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, বিরোধীরা বলছে নির্বাচন কমিশন হাই কোর্টের নির্দেশ অমান্য করেছে। তাহলে তাঁরা কেন কোর্টে এল না? মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে পুলিশের কাছে কটা অভিযোগ জমা পড়েছে, খোঁজ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন কল্যাণবাবু। এছাড়া বাম আমলে কজন বিজেপি প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেন, ও এবছর ক’জন জমা দিতে পেরেছেন সেটারও খোঁজ নেওয়া হোক বলে দাবি করেন রাজ্যের আইনজীবী। ২০০৩ ও ২০০৪-এ বাম আমলে বিজেপি নির্বাচনগুলিতে কতগুলি মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছে ও এবারের নির্বাচনে কতগুলি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে, তার তুলনা করলেই গোটা বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন কল্যাণবাবু। বিরোধীরা মঞ্চে ও ঠান্ডা ঘরে বসে মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন বলেও আজ জানান রাজ্যের আইনজীবী।