গোবিন্দ রায়: মদন তামাং হত্যা মামলায় নয়া মোড়। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতা বিমল গুরুংকে (Bimal Gurung) খুনের মামলায় অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। এই খুনে সিবিআই যে তদন্ত করছে, সেই মামলায় গুরুংকে যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি শুভেন্দু সামন্ত।
হাই কোর্টের বিচারপতি শুভেন্দু সামন্ত নির্দেশ দিয়েছেন, গুরুংয়ের বিরুদ্ধেও চার্জ গঠনের আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। ২০১৭ সালে নগর ও দায়রা আদালত গুরুংকে স্বস্তি দিয়ে ওই মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া থেকে তাঁকে রেহাই দিয়েছিল। সেই নির্দেশ বাতিল করে দিল হাই কোর্ট (Calcutta High Court)। নগর ও দায়রা আদালতের নির্দেশের বিরুদ্ধে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন মদন তামাংয়ের স্ত্রী ভারতী তামাং এবং সিবিআই। তাদের আবেদন মঞ্জুর করে এই মামলায় ফের যোগ করা হল গুরুংয়ের নাম।
[আরও পড়ুন: প্রবল বৃষ্টিতে জল বাড়ছে তিস্তায়, সিকিমে হড়পা বানে নিখোঁজ ৫, নিশ্চিহ্ন বহু এলাকা]
২০১০ সালের মে মাসে দার্জিলিংয়ে সভা করতে এসে সকালে রাস্তার উপরে খুন হয়ে যান মদন তামাং। এই খুনে অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে নিকল তামাংকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু নিকল পিনটেল ভিলেজে পুলিশি হেফাজত থেকে পালিয়ে যান। এই মামলার তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। সিবিআই যে চার্জশিট পেশ করে তাতে বিমল গুরুং-সহ ৪৮ জনের নাম ছিল। মামলায় ৪৮ জনের মধ্যে মাত্র একজনকে অব্যহতি দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন ওঠে হাই কোর্টে। আদালতে সিবিআইয়ের আইনজীবী অনির্বাণ মিত্রর দাবি ছিল, "তদন্তে বিমল গুরুংয়ের বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ উঠে এসেছে। এই ঘটনায় তাঁর যে প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে, তা নিয়ে বেশ কয়েকজনের বক্তব্য রয়েছে।" সিবিআইয়ের আবেদন, যদি সে নির্দোষও হয়, তাহলে তা বিচারে প্রমাণ হোক। কিন্তু একাধিক ক্ষেত্রে তার নাম উঠে আসার সত্বেও বিচার প্রক্রিয়া থেকে তাঁকে রেহাই দেওয়া যায় না। পাল্টা এই মামলার গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে এবং মামলা খারিজের আবেদন জানিয়ে বিমল গুরুংয়ের আইনজীবী সায়ন দের দাবি ছিল, "বিমল গুরুংয়ের বিরুদ্ধে যে খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে তা আইন বিরুদ্ধ। কারণ সেসময় তিনি এলাকাতেই ছিলেন না।" এছাড়াও আইনজীবীর আরও দাবি, "তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তাও ভিত্তিহীন। কারণ তিনি যে এই ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন, কোনও মাধ্যমেই তার কোনও প্রমাণ নেই। না আছে, কল রেকর্ডিং না আছে কোনও প্রমাণ। যেমনটা রয়েছে অন্যান্য নেতার বিরুদ্ধে। শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক সভায় তাঁর দেওয়া বক্তব্যের ওপর ভিত্তিতে এই ধারা যোগ করা হয়েছে।" আইনজীবীর যুক্তি, "তিনি যদি সত্যিই দোষী হতেন তাহলে তিন বার তদন্ত শেষ করে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তাঁর নাম যুক্ত করতে হত না।"
[আরও পড়ুন: কুয়েতের অগ্নিকাণ্ডে মৃতদের পরিবারের পাশে প্রধানমন্ত্রী মোদি, ঘোষণা আর্থিক সাহায্যের]
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, মদন তামাং খুনে প্রথমে চার্জশিট দিয়েছিল সিআইডি। তাতে বিমল গুরুংয়ের নাম ছিল না। এমনকী, সিবিআই চার্জশিট ও এফআইআরেও তাঁর নাম ছিল না। পরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পুনরায় তদন্ত চালিয়ে চার্জশিট জমা দেয় সিবিআই, তখন চার্জশিটে নাম ওঠে বিমল গুরুংয়ের। কিন্তু কলকাতা নগর দায়রা আদালতে চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া শুরুর আগে তাঁর বিরুদ্ধে পেশ করা চার্জশিটের প্রেক্ষিতে 'ডিসচার্জ পিটিশন' দাখিল করেন তিনি। তা মঞ্জুর করে তাঁকে মামলা থেকে রেহাই দেয় নিম্ন আদালত। মামলা থেকে একমাত্র অব্যাহতি পান মোর্চা সুপ্রিমো। বাকি ৪৭ জনের বিরুদ্ধে অবশ্য চার্জ গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল নগর দায়রা আদালত। যার মধ্যে ছিল বিমল গুরুংয়ের স্ত্রী আশা গুরুং, রোশন গিরির মতো নেতারা। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে নিম্ন আদালতের দেওয়া এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন মদন তামাংয়ের স্ত্রী। একই সঙ্গে, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইও নিম্ন আদালতের নির্দেশের প্রেক্ষিতে হাই কোর্টে মামলা করেছিল। ২ মে শুনানি শেষ করে রায় দান স্থগিত রাখে আদালত।