দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে কোনওরকমে চলছিল ওঁদের। কিন্তু দুই সন্তান হঠাৎ অসুস্থ হওয়ার পরই যেন তাঁদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে তাদের চিকিৎসা করাচ্ছিল পরিবারটি। সেই আশাও শেষ হয়ে গেল সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী অসুস্থ হওয়ার পরই। এখন সরকার-ই একমাত্র ভরসা তাঁদের। তাই সাহায্য চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM Mamata Banerjee) দ্বারস্থ ক্যানিংয়ের হতদরিদ্র পরিবারটি।
ক্যানিং (Canning) থানার ইটখোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ রেদোখালি গ্রামে। মাতলা নদীর তীরবর্তী সেই গ্রামের খাসের ঘেরী পাড়ার বাসিন্দা নিমাই সরদার। ১৮ বছর আগে স্থানীয় গোলাবাড়ি গ্রামের উত্তরাদেবীর সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। দম্পতির এক সন্তান হয়। নাম বিশ্বজিৎ সরদার। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করত। পাঁচ বছর বয়স থেকে অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে সে। কথা বন্ধ হয়ে যায়। মাঝেমধ্যেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যেত। বেশ কিছুদিন নিখোঁজও ছিল সে। অনেক খোঁজাখুজির পর সরদার পরিবার তাকে ফিরে পায়। তার পর থেকেই অস্বাভাবিক আচরণের জন্য তাকে বাড়িতেই বেঁধে রাখতেন পরিবার সদস্যারা।
[আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: দুর্গাপুজোয় মানতে হবে এই নিয়মবিধি, জানাল নবান্ন]
ইতিমধ্যে আরও এক পুত্র সন্তান হয় সরদার দম্পতির। নাম অজয় সরদার। কিন্তু বিধিবাম। বছর ছয় পর অজয়ও অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। এখানে ওখানে পালিয়ে যেতে থাকে। তাকে চোখে চোখে রাখার জন্য বাড়িতেই বেঁধে রাখেন সরদার দম্পতি। শুরু হয় দুই সন্তানের চিকিৎসা। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করিয়েও কোনও ফল মেলেনি। বরং দুই সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রায় পথে বসে পরিবারটি। ইতিমধ্যে পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারী নিমাই সরদার দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর শরীরের ডানদিকের কিডনি অকেজো।
বর্তমানে উত্তরাদেবী অসুস্থ স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে কোনওভাবে দিন গুজরান করছেন। তাঁর কথায়, “সরকারিভাবে আমার দুই সন্তান ও আমার স্বামীর সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করার আবেদন জানাচ্ছি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। তাহলে হয়তো আমাদের মতো দরিদ্র পরিবার বাঁচতে পারবে না হলে অচিরেই শেষ হয়ে যাব।” পরিবারের আবেদন, সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা সঠিকভাবে পেলে তাঁদের দুই সন্তান হয়তো আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। সমাজের বুকে অন্যান্য ছেলেমেয়েদের মতো লেখাপড়া করে বড় হবে। খবর পেয়ে তাঁদের বাড়ি গিয়েছিলেন বিডিও শুভঙ্কর দাস। পরিবারটিকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।