নব্যেন্দু হাজরা: দুর্ঘটনা কমাতে সমস্ত গাড়ির ফিটনেসের উপর জোর দিচ্ছে রাজ্য। কিন্তু হলে কী হবে! তথ্য বলছে, আপনি যে গাড়িতে বসে গন্তব্যে পৌঁছচ্ছেন বা আপনার পাশ দিয়ে যে ভিড়ে ঠাসা বাসটি বেরিয়ে গেল তার অধিকাংশেরই বছরের পর বছর ধরে কোনও সিএফ বা ফিটনেস সার্টিফিকেট করা হয়নি। ভাঙা সিট, তোবড়ানো জানলা, রিসোল টায়ার। আর তা নিয়েই দিনে হাজার হাজার যাত্রী নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে বেসরকারি বাস। বাড়ছে দুর্ঘটনা। প্রাণ হাতে নিয়ে যানে উঠছেন সাধারণ মানুষ।
শুধু কি সিএফ! পরিবহণ দপ্তরের কর্তারা জানাচ্ছেন, বছরের পর বছর ধরে ট্যাক্স জমা করেন না গাড়ির মালিকরা। বিনা ট্যাক্সে যাত্রীবাহী গাড়ি ছোটান রাস্তায়। যার জেরে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব লোকসান হচ্ছে রাজ্যের। পরিবহণ দপ্তরসূত্রে খবর, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে গাড়ির সিএফ বাবদ বকেয়া ছিল ১৬.৭১ কোটি টাকা। ২০২১-২২ সালে তা বেড়ে হয় ২২ কোটির মতো। আর ২২-২৩ সালে সেই বকেয়া বেড়ে হয়েছে ৪৩ কোটি টাকা। তবে এই টাকার অঙ্ক বকেয়া সিএফ এবং তার জরিমানা মিলিয়ে। দপ্তরের এক কর্তার কথায়, বেসরকারি বাস, মিনিবাস, স্কুলবাস, পুলকার, ট্রাক, ছোট হাতি গাড়ি। সিএফ করাতে আসে না বেশিরভাগই। তারপর এখন তো আবার সিএফে এলেই তাতে ভেহিকেল লোকেশান ট্র্যাকিং ডিভাইস বসাতে হচ্ছে। ফলে সেই ভয়ে আরও আসছে না। সিএফেই যেখানে গত তিন বছরে বকেয়া ৫০ কোটি হয়ে গিয়েছে, ট্যাক্সের পরিমাণ সেখানে কয়েকশো কোটি হয়েছে। সরকার কোনও টাকাই এই গাড়ি থেকে পায় না। নিয়ম অনুযায়ী বাণিজ্যিক গাড়িকে পাঁচ বছর অন্তর ট্যাক্স জমা দিতে হয়। কিন্তু বেশিরভাগ গাড়ির মালিকই নিয়ম মেনে ট্যাক্স জমা করেন না। বাড়তে থাকে বকেয়া। এমনকী গাড়ির পলিউশন, ইনসিওরেন্সের ক্ষেত্রেও এই গড়িমসি লক্ষ করা যায় গাড়ির মালিকদের মধ্যে।
[আরও পড়ুন: তৃণমূলে যোগ দিতে চাপ, লেখানো হয় মুচলেকা! ঘরে ফিরে বিস্ফোরক ‘অপহৃত’ বিরোধী প্রার্থীরা]
রাজ্যের তরফে ট্যাক্স আদায়ে এবার তাই ছাড় দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। এককালীন টাকা দিলে বকেয়া কর মকুব করা হতে পারে। যদিও সিদ্ধান্ত কিছু হয়নি। এদিকে যাত্রী নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই শহরে নজরদারি আরও বাড়াচ্ছে পরিবহণ দপ্তর। ঠিক হয়েছে, শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় অভিযান চালানো হবে। সিএফ ছাড়া গাড়ি আটক হবে। তবে স্কুল এবং অফিস টাইম পার করে গেলেই এই ধরপাকড় চলবে বলে জানা গিয়েছে। যাত্রীদের অসুবিধা না করেই এই অভিযান চলবে বলে জানা গিয়েছে। অল বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের সংগঠনের সদস্যদের প্রত্যেককে সময়মতো সিএফ করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ পুলকার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুদীপ দত্ত বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে প্রত্যেককে গাড়িরই সময়মতো সিএফ করানো হয়।’’