অর্ণব আইচ ও নিরুফা খাতুন: স্ত্রীর বান্ধবীর নামে ৫০ লক্ষ টাকার ফ্ল্যাট কিনেছিলেন এসএসসির প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহ। এ ছাড়াও শান্তিপ্রসাদের স্ত্রীর একটি বিউটি পার্লারের সন্ধানও পেল সিবিআই। সেটি শান্তিপ্রসাদের স্ত্রী তাঁর এক ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’র সঙ্গে চালাচ্ছেন বলে দাবি সিবিআইয়ের। যদিও সিবিআইয়ের এই দাবির বিরোধিতা করেন শান্তিপ্রসাদের আইনজীবী। তদন্তের স্বার্থে এবার অপরূপাকে সিবিআই আতস কাচের নীচে আনতে চলেছে বলে খবর। বুধবার একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শান্তিপ্রসাদ সিংহ, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, অশোক সাহা, আব্দুল খালেক, সমরজিৎ আচার্য ও আবু তাহেরের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত চার্জশিট পেশ করল সিবিআই।
এই চার্জশিটেই শান্তিপ্রসাদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরেছে সিবিআই। এছাড়া নিয়োগ দুর্নীতির গ্রুপ ডি-র মামলায় এদিনই সিবিআই দুই অভিযুক্ত প্রসন্ন রায় ও সুব্রত সামন্ত রায়ের বিরুদ্ধে আলিপুরে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে। প্রসন্নকে এই মামলার গ্রেফতারির মাত্র কয়েকদনের মধ্যেই পেশ করা হল চার্জশিট। এদিকে, অভিযোগ উঠেছে, নিয়োগ দুর্নীতির অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষের নির্দেশেই অয়ন শীলের প্রায় ২৭ কোটি টাকা পৌঁছেছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী বেহালার সন্তু গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে। সন্তু ওই বিপুল পরিমাণ টাকা কবে, কতজন প্রভাবশালীর হাতে দিয়েছিলেন, তা নিয়ে এবার তদন্ত করছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। সেই ক্ষেত্রে ইডির জেরার মুখে পড়তে পারেন সন্তু।
[আরও পড়ুন: ৩২ হাজার চাকরি বাতিল মামলার রায়দান স্থগিত, শুনানি শেষে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান চাকরিহারাদের]
এদিন ব্যাঙ্কশালে ইডির বিশেষ আদালতে তোলা হয় নিয়োগ দুর্নীতির অভিযুক্ত শান্তনু বন্দে্যাপাধ্যায়কে। তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিটের কপি দেওয়া হয় আইনজীবীকে। শান্তনুর আইনজীবী জানান, চার্জশিট সম্পর্কিত নথি তাঁকে একটি সিডিতে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই পন্থা পুরনো। ওই সিডি দেখার জন্য তাঁর পক্ষে একটি ল্যাপটপ কেনা সম্ভব নয়। তাই ওই নথি ইডি যাতে তাঁদের একটি পেন ড্রাইভে দেয়, তার জন্য আদালতে আবেদন করেন আইনজীবী। এই আবেদন মঞ্জুর করে আদালত। আগামী ১৯ জুন পর্যন্ত শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। আদালতে শান্তনু বলেন, ‘‘সব প্রমাণ হবে। আইনের উপর আস্থা আছে। সবাই সহযোগিতা করুন। সঠিক বিচার হবে।’’
এদিকে, এদিনই একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে আলিপুরে বিশেষ সিবিআই আদালতে শান্তিপ্রসাদ সিংহ ও আব্দুল খালককে তোলা হয়। যদিও অসুস্থ থাকার কারণে শান্তিপ্রসাদকে তোলা হয় ভারচুয়াল পদ্ধতিতে। আব্দুল খালেকের মামলা হাই কোর্টে থাকায় তাঁর শুনানি হয়নি। স্ত্রী ও ছেলেকে দেখে আদালত চত্বরেই কাঁদতে থাকেন খালেক। শান্তিপ্রসাদের আইনজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্ত আবেদনে বলেন, চার্জশিট যেখানে হয়ে গিয়েছে, সেখানে কবে সিবিআই তদন্ত শেষ করবে? সিবিআইয়ের আইনজীবী আবেদনে জানান, এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে রোজই নতুন নতুন তথ্য উঠে আসছে। অভিযুক্তদের প্রত্যেকেরই ভূমিকা জানার প্রয়োজন। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে শান্তিপ্রসাদ ও খালেককে ৩১ মে পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
এই নিয়ে এখনও পর্যন্ত শান্তিপ্রসাদ সিংহের বিরুদ্ধে মোট চারটি চার্জশিট দাখিল করেছে। সিবিআইয়ের সূত্র জানিয়েছে, শান্তিপ্রসাদের বিরুদ্ধে চার্জশিটে উল্লেখ করা আছে যে, তিনি স্ত্রীর ছোটবেলার বান্ধবী অপরূপার নামে একটি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। ওই ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকা নগদ উদ্ধার করেছিলেন তদন্তকারীরা। এছাড়া স্ত্রীর নামে ৬০ লাখ টাকার গয়না রয়েছে। ফ্ল্যাটের দাম ৫০ লক্ষ টাকা হলেও অনেক কম মূল্যে কেনা হয়েছে বলে দেখানো হয়। এছাড়াও চার্জশিটে বলা হয়েছে যে, শান্তিপ্রসাদের স্ত্রীর একটি বিউটি পার্লার রয়েছে। সেটি তিনি তাঁর এক ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধুর’ সঙ্গে চালাচ্ছেন। এর বিরোধিতা করে শান্তিপ্রসাদের আইনজীবী বলেন, অত্যন্ত কম বয়সি এক যুবক কীভাবে শান্তিপ্রসাদের বয়স্কা স্ত্রীর ‘ঘনিষ্ঠ’ হতে পারেন? তদন্তকারী আধিকারিকদের দিকে ইঙ্গিত করেন তিনি। চার্জশিটে এজেন্ট সমরজিৎ আচার্যের পাশাপাশি আবু তাহের নামে আরও এক সাব এজেন্টের নাম উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিবিআই।