অর্ণব আইচ: সরকারের ক্ষতি করে নিজের পকেট ভরিয়েছেন চিকিৎসক আশিস পাণ্ডে। তাতে মদত ছিল অন্যদেরও। আর জি কর হাসপাতালে দুর্নীতির মামলায় আদালতে এমনই দাবি সিবিআইয়ের। এই ক্ষেত্রে আর্থিক দুর্নীতিতে সিবিআইয়ের স্পষ্ট অভিযোগের আঙুল ওই হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে। সিবিআইয়ের দাবি, ষড়যন্ত্র করে সন্দীপ, আশিসের মতো চিকিৎসক ও আর জি করের কর্তারা হাউস স্টাফ নিয়োগ থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার ক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকা হস্তগত করেন।
আর জি কর হাসপাতালে দুর্নীতির অভিযোগে প্রথম দফায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন সন্দীপ ঘোষ, তাঁর ঘনিষ্ঠ দুই ঠিকাদার বিপ্লব সিংহ, সুমন হাজরা, নিরাপত্তারক্ষী আফসার আলি। ধৃতদের জেরা করে সন্দীপের ঘনিষ্ঠ চিকিৎসক আশিস পাণ্ডেকে গ্রেপ্তার করে সিবিআই।
জেল হেফাজতে থাকা অভিযুক্ত পাঁচজনকেই সোমবার আলিপুর আদালতে তোলার নির্দেশ দেন বিচারক। আদালত সূত্রের খবর, এদিন আশিস পাণ্ডেকে আদালতে তোলা হয়। কিন্তু সিবিআইয়ের পক্ষে বাকি চার অভিযুক্তর ব্যাপারে কোনও নথি প্রেসিডেন্সি জেলে পাঠানো হয়নি। সেই কারণেই জেল কর্তৃপক্ষের কাছেও কোনও তথ্য এসে পৌঁছয়নি। তাই জেলের পক্ষ থেকেও পুলিশকে গাড়ি পাঠানোর জন্য দেওয়া হয়নি কোনও চিঠি। সেই কারণে এদিন সন্দীপ-সহ চার অভিযুক্তকে সশরীরে, এমনকী ক্রমে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতেও আদালতে তোলা সম্ভব হয়নি। এদিন সিবিআইয়ের পক্ষে পাঁচ অভিযুক্তকেই ১৪ দিনের জন্য জেল হেফাজতে রাখার আবেদন জানানো হয়। সন্দীপ ঘোষ-সহ পাঁচজন অভিযুক্তকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
এদিন আলিপুর আদালতে সিবিআইয়ের আবেদন, তদন্তে জানা গিয়েছে যে, অভিযুক্ত চিকিৎসক আশিস পাণ্ডে অন্য অভিযুক্তদের সঙ্গে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করেন। এর ফলে সরকারের ক্ষতি হয়েছে। আর্থিক লাভ হয়েছে আশিস পাণ্ডের। সিবিআইয়ের দাবি, ওই অভিযুক্ত চিকিৎসক যথেষ্ট প্রভাবশালী। তিনি যদি জামিন পান, তবে সাক্ষীর উপর প্রভাব খাটিয়ে ও নথি নষ্ট করে তদন্ত ব্যাহত করতে পারেন। সিবিআইয়ের আরও দাবি, বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে বৈদ্যুতিন নথি উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্ত চলাকালীন নথি পরীক্ষা ও সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা গিয়েছে যে, সন্দীপ ঘোষের মদতে তাঁর ঘনিষ্ঠ চিকিৎসক আশিস পাণ্ডে ও অন্যরা কীভাবে টাকা সরিয়েছে।
সিবিআইয়ের সূত্র জানিয়েছে, হাউস স্টাফ নিয়োগের ক্ষেত্রে বিপুল টাকা তোলা হয় বলে অভিযোগ। একইভাবে আর জি করে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রেও টাকা তোলা হয়। এই টাকা তোলার ক্ষেত্রে সন্দীপ ঘোষের মদতে একটি চক্র কাজ করে। সেই চক্রের মধ্যেই আশিস পাণ্ডে ছিলেন বলে অভিযোগ।
এছাড়াও কোভিডের জন্য আর জি করে আসা তহবিল তছরুপের তদন্তও করেছে সিবিআই। সিবিআইয়ের মতে, ২০ কোটিরও বেশি টাকা নয়ছয় করা হয়। কোভিডের তহবিলের বিপুল টাকা হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে খরচ করার বদলে সন্দীপ ঘোষরা বিভিন্ন বিলাসবহুল আসবাব কেনেন বলে অভিযোগ। যে সামগ্রী কেনা হয়, সেগুলিও বিশেষ কয়েকটি দোকান বা সংস্থা থেকে ও অতিরিক্ত দাম দিয়ে। এই পদ্ধতিতে সন্দীপ ঘোষ, আশিস পাণ্ডে-সহ পুরো চক্রটি বিপুল টাকা হস্তগত করে বলে জানিয়েছে সিবিআই।