সকাল না হতেই সেজে নেওয়া। মায়ের সবথেকে সুন্দর শাড়ি পরে স্কুল। ছেলেদের পরনে পাঞ্জাবি। একদিনের স্বাধীনতা। স্কুলে পুজো, অঞ্জলি, খাওয়াদাওয়া। সেইসব নস্টালজিয়ার কথা বললেন সেলেবরা। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী ও তিতাস।
তনুশ্রী চক্রবর্তী
স্কুলের সরস্বতী পুজোয় ভীষণ আনন্দ হত। ওইদিনটা যেন সারা বছর ধরে না পাওয়া একটি দিন। স্কুলে যাচ্ছি অথচ পড়ছি না বা পড়াশোনা নেই। স্কুলে যাচ্ছি অথচ ইউনিফর্ম নেই, সেজেগুজে, শাড়ি পরে যাচ্ছি। যে টিচাররা সারা বছর বকাবকি করেন, খুব কড়া, তাঁরাই ওইদিনটায় বন্ধুর মতো। তাঁরাও সেজেগুজে আমাদের আপ্যায়ণ করছেন। সবকিছুতে ছাড়, মা-বাবার বাধা নেই। সকালে বেরিয়ে সেই সন্ধেবেলায় বাড়ি ঢোকা। বন্ধুবান্ধব মিলে নিজের স্কুলে গিয়ে তারপর অন্য স্কুলে ঠাকুর দেখতে যেতাম। খিচুড়ি, ফলপ্রসাদ খাওয়া। অনেক চোখাচোখি, কত ভাল লাগা তৈরি হত। অনেক প্রোপোজালও পেয়েছি সরস্বতী পুজোয়। কিন্তু ভয়ে কোনওদিন এগোইনি। কথা শেষ করার আগেই ‘না’ বলে দিতাম। স্কুলেই অঞ্জলি দিতাম। আমার বাড়িতেও পুজো হত, এখনও হয়। বইখাতা সব মা সরস্বতীর পায়ে থাকত। খুব মজা হত, কারণ তিনদিন বই ছোঁয়া নেই। হইহই করে কাটত দিনগুলো।
ইশা সাহা
ছোটবেলায় সরস্বতী পুজো মানেই হলুদ বা বাসন্তীরঙা শাড়ি পরে স্কুলে যাওয়া। বাড়িতে প্রতিবারই পুজো হত।কিন্তু আসল মজা হত স্কুলেই, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে। স্কুলে গিয়ে অঞ্জলি দেওয়া, সবাই মিলে পাত পেড়ে বসে ভোগ খাওয়া – এগুলো এখন ভীষণ মিস করি। খিচুড়ি ভোগের চেয়েও আমার প্রিয় ছিল ভোগের পায়েস। কী অসাধারণ সেই স্বাদ! প্রতিবারই পুজোর আগে কুল খেয়ে ফেলতাম। কোনওদিনই এসব কুসংস্কার মানিনি। যে যতই ভয় দ্যাখাক, আমি তোয়াক্কা করিনি কখনও। শুনেছি অনেকের এদিন নতুন প্রেম হয়েছে, একে-অপরকে ভাল লেগেছে। আমি স্কুলে, এমনকী হাই স্কুলে পড়াকালীনও এতটাই ক্যাবলা আর বোকা ছিলাম যে, সরস্বতী পুজো ঘিরে কখনও আমার কোনও প্রেম,ভাললাগা হয়নি। কেউ কখনও এসে কথাও বলেনি। পড়াশোনার থেকে একদিনের ছাড় আর দেদার মজা – এই নিয়েই ছিল আমার পুজো। এখন যেহেতু বাড়িতে আর পুজো হয় না, তাই প্রতিবেশী, মাসির বাড়ির বা কাজের কোনও জায়গায় গিয়ে হলেও প্রতি বছর অঞ্জলি দিই নিয়ম করে।
সোহিনী সরকার
সরস্বতী পুজো ভীষণ আনন্দের, মজার একটা দিন। আসল আনন্দটা পেয়েছি ক্লাস ইলেভেন, টুয়েলভে। মাধ্যমিক শেষ, সে বছর পুরো দায়িত্বটাই আমাদের ওপর। যেহেতু আর্টসের স্টুডেন্ট ছিলাম, আমরা মনে করতাম সায়েন্সের স্টুডেন্টরা অত বোঝে না শিল্পের ব্যাপারটা। এটা আমাদের কাছে একটা বেশ গর্বের বিষয় ছিল। ইলেভেনে ঠিক করেছিলাম, পুরো সাজানোটা আমরাই করব। শাড়ি একটা পরতেই হবে। সেই শাড়ি খুলেও গিয়েছিল। সরস্বতী পুজোর দিন অন্য স্কুলে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছি। বারাকপুরের মর্নিং স্টার স্কুলে পড়তাম। সেখান থেকে বারাকপুর রামকৃষ্ণ মিশনের সামনে এসে আমার শাড়ির কুচি গেল খুলে, যদিও আমার বন্ধুরা খুব এক্সপার্ট ছিল শাড়ি নিয়ে। ওরা ঝট করে আমাকে নিয়ে একটা গলির মধ্যে ঢুকে গেল আর কুচিটা ঠিক করে দিল। তখন টুকটাক কাজ করছি ইন্ডাস্ট্রিতে, কিন্তু রেস্ট্রিকশন ছিল, সঙ্গে মা যেতেন। সন্ধের পর আমার বেরনোর নিয়ম ছিল না। খুব দুঃখ হত, তখন সব বন্ধুরা সন্ধেবেলাও ঘুরত। আমাদের স্কুলে মাধবদা বলে একজন দারোয়ান ছিলেন। সেই মাধবদা খিচুড়ি করত একটা বড় কড়াইতে আর একটা শুকনো বোঁদে বানাত। দারুণ খেতে হত। সরস্বতী পুজোয় প্রচুর চোখাচোখি, প্রোপোজাল পেয়েছি। ছেলেদের স্কুল থেকে পুজোর নিমন্ত্রণ করতে আসত গ্রুপ মিলে আর আমরা সব স্কুলের ইউনিফর্ম চিনতাম। বারাকপুর মিশন, বারাকপুর গভর্নমেন্ট। যেই তারা ঢুকত স্কুলে, খবর হয়ে যেত। প্রিন্সিপালের ঘরের পাশেই ক্লাস ইলেভেন-টুয়েলভের রুমগুলো ছিল। প্রবল উত্তেজনা ছিল, একটা ভাল লাগা কাজ করত।
ঋতাভরী চক্রবর্তী
স্কুলের সরস্বতী পুজোয় খুব মজা করেছি। হরিয়ানা বিদ্যামন্দিরে পড়তাম। স্কুলে ডেকরেশন করতাম সবাই মিলে। মিউজিক কম্পিটিশন হত। শাড়ি তো পরবই, ছেলেরা পাজামা-পাঞ্জাবি পরত। নাচগান করতাম। ক্লাসমেটদের নানারকম সাজে দ্যাখা খুব আনন্দের ছিল। ভোগ খেতাম। অন্য স্কুলে ঠাকুর দেখতেও বেরিয়েছি সবাই মিলে। আমাদের জয়েন্ট ফ্যামিলি, বাড়িতেও ভাইবোনেরা মিলে খুব মজা করে সরস্বতী পুজোর প্যান্ডেল করতাম। সাজাতাম সরস্বতী পুজোর দিন। কোনও বন্ধুত্ব হয়নি বা ক্রাশও হয়নি। কখনও কোনও প্রোপোজাল পাইনি। তবে আনন্দ করেছি খুব।
The post কেমন ছিল সরস্বতী পুজোর অভিজ্ঞতা, স্মৃতির ঝাঁপি উপুড় করলেন সেলেবরা appeared first on Sangbad Pratidin.