টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: জেলা প্রশাসনের দেওয়া তালিকায় আচমকাই রদবদল করে নিজেদের পছন্দমতো রুটে ছুটছে কনভয়। বাঁকুড়ায় কেন্দ্রীয় প্রকল্পের হরেক কাজের হাল-হকিকত খতিয়ে দেখলেন কেন্দ্রীয় দল। যার জেরে দিনভর জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা তটস্থ হয়ে রইলেন।
মঙ্গলবার সকালে আচমকাই তালিকা বদল করে বাঁকুড়ার (Bankura) তালডাংরা ব্লকের বিবরদা ও তালডাংরা পঞ্চায়েত এলাকায় চলে যায় কেন্দ্রীয় দল। সেখানে ১০০ দিনের কাজ ও প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার কাজকর্ম ঘুরে দেখলেন তাঁরা। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের কর্তা কৃষ্ণমোহন সিংহের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল গত সোমবারই বাঁকুড়ায় পৌঁছয়। পরিদর্শন চালাকানীয় বিবরদা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান প্রশান্ত দুলেকে কেন্দ্রীয় দলের নানা প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে হয়।
[আরও পড়ুন: বাংলায় বাঁশের বাড়ি তৈরিতে আগ্রহী মার্কিন সংস্থা, সুযোগ ৪৫ হাজার কর্মসংস্থানেরও]
অন্যদিকে, গ্রামের রাস্তায় কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দলের কনভয় ঢুকতে দেখে ‘সিটিজেন ইনফরমেটিভ বোর্ড’ কাঁধে নিয়ে ছুটতে দেখা গেল তালডাংরা ব্লকের বিবরদা পঞ্চায়েতের ঠাকুরহাটি গ্রামের বাসিন্দা অলোক লোহারকে। যা দেখে তাজ্জব পরিদর্শনে আসা প্রতিনিধিরা। জানা গিয়েছে, রং চটা ভেঙেচুরে যাওয়া টিনের তৈরি ওই ‘সিটিজেন ইনফরমেটিভ বোর্ড’টি বছর চারেক আগে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে ওই গ্রামেরই বাসিন্দা শ্রীরাম লোহারের নামে থাকা জমিতে কাটা পুকুরের পাশে বসানো হয়েছিল। এই শ্রীরাম লোহারেরই ছেলে অলোক লোহার। নিয়ম অনুযায়ী, এই বোর্ড সরকারি প্রকল্পে তৈরি ওই পুকুরের পাশেই থাকার কথা। কিন্তু এতদিন তা ছিল শ্রীরামবাবুর ঘরে। অলোকবাবুর এহেন কাণ্ড দেখে মুচকি হাসলেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দলের প্রতিনিধিরা।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে কৃষ্ণমোহন বলেন, “যা দেখছি তা রিপোর্ট আকারে জমা দেব। সংবাদ মাধ্যমকে আর কিছু বলব না।” একই সঙ্গে বিবরদা গ্রামে ২০০৯ সালে তৈরি চেক ড্যাম্পের কাজও খতিয়ে দেখে কেন্দ্রীয় দল। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিবরদা গ্রামেই বছর সাতেক আগে তৈরি করা কলাবাগান আজ উধাও হয়ে গিয়েছে। সেই সময়ে তৈরি পুকুর আজ মশামাছির আঁতুড়ঘর।
এদিন কেন্দ্রীয় দলের সামনে সরকারি প্রকল্পে তৈরি ওই পুকুর নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন স্থানীয় গৃহবধূ রিনা সামুই, মহাদেব চক্রবর্তীরা। তাঁদের কথায়, “এক সময় ১০০ দিনের প্রকল্পে তৈরি এই কলাবাগানের আজ আর অস্তিত্ব নেই। পাশে থাকা পুকুরটি বর্তমানে আবর্জনায় ভরে গিয়েছে। সেখানেই তৈরি হয়েছে মশার আঁতুড়ঘর।” তবে এদিন উপস্থিত প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা প্রতিনিধি দলকে কোনও প্রকল্পেরই সঠিক নথিপত্র দেখাতে পারেননি। এদিনের পরিদর্শনে জেলা প্রশানিক কর্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক প্রলয় রায়চৌধুরি-সহ অন্যরা।