অর্ণব আইচ: আধুনিক প্রযুক্তির যুগে ‘ফেলুদা’ হয়েই কাজের স্বীকৃতি পেলেন ‘পাণ্ডব গোয়েন্দা’। মিলেছে পুরস্কারও। কলকাতা পুলিশের যে পাঁচজনের কথা বলা হচ্ছে, তাঁরা পাণ্ডব গোয়েন্দার মতো একসঙ্গে নয়, পৃথকভাবে সব অপরাধের কিনারা করেছেন।
কলকাতায় সাড়া ফেলেছিল দুটি সাইবার অপরাধ। অথচ কোনও ক্লু রেখে যায়নি অপরাধীরা। সেখান থেকে ধৈর্য ধরে ক্রমে অপরাধীদের কাছে পৌঁছন তাঁরা। একজন ধরে ফেলেছিলেন এমন একটি গ্যাং, যেটি কলকাতায় বসে তছরুপ করেছিল কয়েক হাজার ইংল্যান্ডবাসীর পাউন্ড। অন্যজন, ধরে ফেলেছিলেন সেই অভিজাত পরিবারের যুবকদের, যারা কিশোরী ও তরুণীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার নাম করে তাঁদের অশ্লীল ছবি তুলে লাখ লাখ টাকা ব্ল্যাকমেল করত। এই দুই অফিসারই লালবাজার সাইবার থানায় কর্মরত। ইন্সপেক্টর ড্যানিস অনুপ লাকরা ও মহিলা ইন্সপেক্টর শুক্লা সিংহরায় তদন্তের সাফল্যের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘মেডেল ফর এক্সেলেন্স ইন ইনভেস্টিগেশন’ পুরস্কার পেয়েছেন তাঁরা।
লালবাজারের এক কর্তা জানান, এই দুটি মামলাই ছিল আক্ষরিক অর্থে খুবই জটিল। গত বছরের নভেম্বরে এক তরুণী অভিযোগ জানান, কিছু অশ্লীল ছবি তাঁকে ও তাঁর মাকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দশ লাখ টাকা ব্ল্যাকমেল করা হয়। কিন্তু মোবাইল টাওয়ার ঘেঁটে দেখা যায় নম্বরটি কখনও ঝাড়খন্ডের দেওঘর, কখনও বিহারের বাঁকা আবার কখনও মধ্যপ্রদেশের রেওয়ায়। শেষ পর্যন্ত সিমটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই বছরের জানুয়ারিতে সেটি ফের চালু হয়। মোবাইলের কললিস্ট ঘেঁটে নিউটাউন থেকে মূল অভিযুক্তর এক বন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকেই মেলে একটি হার্ড ডিস্ক, যেখানে ঠাসা ছিল অশ্লীল ছবিগুলি। জেরায় সে জানায়, তাকে আরও দুজন এগুলি দিয়েছে। সল্টলেক থেকে সেই দুই যুবককে ধরা হয়। জানা যায়, সল্টলেকের ওই দুই অভিজাত পরিবারের যুবক কিশোরী ও তরুণীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে কোনওভাবে তাঁদের অশ্লীল ছবি জোগাড় করে।
[আরও পড়ুন: আমফানের ত্রাণে ‘দুর্নীতি’, এবার মুখ্যমন্ত্রীর নজরে প্রশাসনিক আধিকারিকরা]
এরপর হার্ড ডিস্কে পুরে সেটি নিউটাউনের যুবককে দেয়। সেই ছবিগুলি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে ব্ল্যাকমেল করা হয়। এই মামলার তদন্তকারী আধিকারিক ছিলেন শুক্লা সিংহরায়। অন্য মামলায় একটি আন্তর্জাতিক কম্পিউটার সংস্থার কর্তা দিল্লি থেকে লালবাজারে অভিযোগ জানান, নিজেদের ওই সংস্থার আধিকারিক বলে পরিচয় দিয়ে আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের বাসিন্দাদের ফোন করে রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড ও কেশব চন্দ্র সেন স্ট্রিটের দুটি ভুয়া কল সেন্টারের কর্মীরা। কলকাতায় বসে ওই বিদেশিদের ফোন বা ভিডিও কল করে বলা হত, তাঁদের কম্পিউটার খারাপ হয়ে গিয়েছে। এখনই তাঁদের কম্পিউটার ঠিক করা হবে। কিন্তু তার জন্য ডলার বা পাউন্ড চাওয়া হত। বিদেশিরা বাধ্য হয়ে কয়েকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সেগুলি পাঠাতেন। এভাবে বিদেশিদের প্রতারণা করে কয়েক কোটি টাকা রোজগার করে তাঁরা। সাইবার থানার অফিসার ড্যানিস অনুপ লাকরা তদন্ত করে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করেন। এতে স্বস্তি পান কয়েক হাজার ইংল্যান্ডবাসী। এই ঘটনায় লন্ডন পুলিশের কমিশনার কলকাতা পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাহবা ও ধন্যবাদ জানান। এ ছাড়াও রাজ্য পুলিশের আরও তিনজন অফিসার জটিল মামলার কিনারা করে পুরস্কৃত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। লালবাজারের পুলিশকে এক সময় স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সঙ্গে তুলনা করা হত। তা যে খুব ভ্রান্ত নয়, তার প্রমাণ এই পাণ্ডব গোয়েন্দা।
[আরও পড়ুন: সবক’টি মামলায় জামিন, অবশেষে মুক্ত ‘আরামবাগ টিভি’র সম্পাদক সফিকুল-সহ ৩]
The post জটিল রহস্য ভেদেই মিলল স্বীকৃতি, কেন্দ্রীয় পুরস্কার পেলেন লালবাজার সাইবার থানার ২ অফিসার appeared first on Sangbad Pratidin.