গৌতম ব্রহ্ম: ফের রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের বৈমাতৃসুলভ মনোভাব প্রকাশ্যে। এবার রেশনের চাল-গম নিয়ে। রেশনে দেওয়ার জন্য সরাসরি কেন্দ্রের থেকে চাল-গম কিনতে চেয়েছিল রাজ্য। কিন্তু পত্রপাট তা খারিজ করে দেয় কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রক। দমে যায়নি নবান্ন। এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে খোলা বাজার থেকেই রেশনের চাল সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করল খাদ্য দপ্তর। তৈরি করা হল টেন্ডার কমিটি।
খাদ্য দপ্তর সূত্রে খবর, রেশনে বন্টন করার জন্য রাজ্যের হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল-গম নেই। এমতবস্থায় ৯ জুন রাজ্যের খাদ্যসচিব পারভেজ আহমেদ সিদ্দিকি কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রকে চিঠি দিয়ে অবিলম্বে রাজ্যকে চাল, গম পাঠানোর অনুরোধ জানান। খাদ্য শস্যের সংকটের কথা জানিয়ে খাদ্যসচিব অনুরোধ করেন, চলতি বছরের বাকি ছ’মাসের রেশন দেওয়ার জন্য যেন রাজ্যকে ৮০ হাজার মেট্রিক টন গম দেওয়া হয়। গম দিতে না পারলে রাজ্যের রেশন ব্যবস্থা সচল রাখতে চাল দেওয়া হোক। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত রাজ্যের রেশন ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখার জন্য ওই পরিমাণ চাল পাওয়াটা জরুরি। খাদ্য সচিব চিঠিতে বলেন, যে প্রকল্পে দেওয়া সম্ভব সেই প্রকল্পই যেন রাজ্যের জন্য বিবেচনা করা হয়। ন্যূনতম মূল্যে রাজ্য চাল-গম কেন্দ্রের খাদ্য মন্ত্রক থেকে কিনে নিতে প্রস্তুত।
[আরও পড়ুন: ‘অণ্ডকোষ চেপে ধরা হত্যার চেষ্টা নয়’, আসামীর সাজা কমিয়ে মন্তব্য আদালতের]
তবে নবান্ন সূত্রের খবর, রাজ্যের সেই আবেদন পত্রপাঠ খারিজ করে দেয় কেন্দ্র। মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়, তাদের পক্ষে এখন চাল দেওয়া সম্ভব নয়। এখানেই শেষ নয়, বাংলা চাল উৎপাদনে যে ভারতসেরা সেকথা মনে করিয়ে রাজ্যেকে রেশনের চাল জোগাড় করে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে! কেন্দ্রের এই বৈমাতৃসুলভ মনোভাব টের পেয়েই তড়িঘড়ি খোলাবাজার থেকে চাল কেনার সিদ্ধান্ত নেয় নবান্ন। দু’দিন আগে সাত সদস্যের টেন্ডার কমিটিও তৈরি করে ফেলা হয়। স্বচ্ছতা রাখতে ই-টেন্ডার মারফৎ চাল কেনা হবে বলে। খাদ্য দপ্তর থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই সিদ্ধান্তের কথা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। একশো দিনের কাজ, আবাস প্রকল্প, সড়ক প্রকল্প-সহ কেন্দ্রীয় সহযোগিতায় চলা একাধিক প্রকল্পের টাকা বন্ধ করে দিয়েছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। এবার সেই তালিকায় কেন্দ্রের চাল দিতে প্রত্যাখ্যান করার বিষয়টিও যুক্ত হল।
উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি খাদ্যসাথী নামের এই নতুন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এই প্রকল্পে বাংলার প্রায় ৯০ শতাংশ অর্থাৎ কমবেশি ৭ কোটিরও বেশি মানুষ ২ টাকা কেজি দরে চাল, গম কিনতে পারছেন। কোভিড অতিমারীর সময় এই প্রকল্প বহু মানুষকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।