নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: সংস্কারমুখী নয়, কেন্দ্রীয় বাজেট এবার জনমোহিনীই হতে চলেছে। যাকে বলে, ভোটবাজারের বাজেট (Budget)। এমনটাই জানা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক সূত্রে। পাঁচ রাজ্যে ভোট। স্বাভাবিক ভাবেই বাজেটের মাধ্যমে আমআদমির মন জয় করার গুরুদায়িত্ব রয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের (Nirmala Sitharaman) কাঁধেই।
উত্তরপ্রদেশ-সহ (Uttar Pradesh) দেশের পাঁচ নির্বাচনমুখী রাজ্যের জন্য বাজেটে যে চমক থাকবে সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না। সড়ক, রেল, স্বাস্থ্য এই তিন বিষয়কে সামনে রেখে ভোটমুখী রাজ্যগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নের উপর জোর দেওয়ার সম্ভাবনায় প্রবল। গত বছরের বাজেটে যেভাবে সেই সময়ের ভোটমুখী রাজ্য বাংলা, তামিলনাডু, কেরল, অসমের জাতীয় সড়কের কাজের জন্য মোটা টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল, এবারেও সেই একই প্যাটার্ন দেখা যাবে বলেই আন্দাজ করা হচ্ছে। আবার ভোটের কথা মাথায় রেখেই স্বচ্ছ ভারত অভিযান, ‘হর ঘর জলের’ মতো কোনও নতুন প্রকল্পও এবারের বাজেটে ঘোষণা করা হতে পারে বলে খবর।
[আরও পড়ুন: করোনাতঙ্ক কাটিয়ে লক্ষ্মীবারই খুলছে কালীঘাট মন্দিরের গর্ভগৃহ]
পরিকাঠামোর উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সর্বোপরি সামাজিক প্রকল্পে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হবে বাজেটে। সাম্প্রতিককালে চিনের সঙ্গে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, পাকিস্তানের সঙ্গেও ভারতের সম্পর্ক ভাল নয়। এই সমস্ত দিকে নজর রেখে বাজেটে গুরুত্ব দেওয়া হবে প্রতিরক্ষা খাতেও। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতকে স্বনির্ভর করে তোলার পাশাপাশিই বিদেশ থেকে উন্নতমানের সামরিক সামগ্রী কেনার ক্ষেত্রেও বরাদ্দ বাড়বে।
কেন্দ্রীয় বাজেটে রাজ্যগুলির অর্থের জোগানের ব্যবস্থার উপরেও কিছু পদক্ষেপ করার কথা ঘোষণা হতে পারে। করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে গিয়ে দেশের অধিকাংশ রাজ্যের আর্থিক ভাঁড়ার প্রায় শূন্য। তার উপরে চলতি বছরের জুন মাস থেকেই কেন্দ্রের তরফ থেকে জিএসটি-র ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সময়সীমা শেষ হয়ে যাচ্ছে। তা নিয়ে ইতিমধ্যেই বাংলা-সহ দেশের বিরোধীশাসিত রাজ্যগুলি তো বটেই, এনডিএ-শাসিত রাজ্যগুলির তরফ থেকেও সময়সীমা দু’বছর বৃদ্ধির জন্য দাবি তোলা হয়েছে। জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকেই নির্মলার কাছে রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা বিষয়টি নিয়ে বিশেষভাবে অনুরোধও করেছেন। করোনা পরিস্থিতি সামলাতে গিয়েই তাঁদের বিপুল খরচ হয়ে গিয়েছে কিন্তু রাজ্যের কাছে আয় বৃদ্ধির ক্ষমতা সীমিত, সেই যুক্তিকেই তুলে ধরে ছিলেন তাঁরা।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক সূত্রের খবর, জিএসটি ক্ষতিপূরণের সময়সীমা বৃদ্ধি নিয়ে কেন্দ্র দোলাচলে থাকলেও রাজ্যগুলি যাতে সহজে ঋণ পেতে পারে সেই রাস্তা বাজেটে দেখানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরেই দেশের সমস্ত শিল্পমহল, বণিকসভা-সহ বিভিন্ন মহলের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছেন অর্থমন্ত্রী। তাতে বণিকসভার তরফ থেকে যেমন আবাসন, প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা আবাসন যোজনা, মাঝারি ও ছোটো শিল্প ক্ষেত্র, এমএসএমই সেক্টরকে বাজেটের মাধ্যমে সাহায্য করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তেমনই আবার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের তরফ থেকে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। এই সবকটি বিষয়কেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বাজেটে নজর দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন বলে জানা গিয়েছে। বাজেটকে জনমোহিনী করতে হলে কেন্দ্রীয় সরকারকে আর্থিক ঘাটতির সম্মুখীন হতে হবে এমন আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু তা নিয়ে বিশেষ ভাবিত নয় কেন্দ্র। ভোট পার হলেও পেট্রল, ডিজেলের দাম বাড়ানোর রাস্তায় গিয়ে সেই ঘাটতি পুষিয়ে দেওয়ার রাস্তা তো খোলা থাকছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।