গৌতম ব্রহ্ম: আসন, প্রাণায়ামের সঙ্গে সহস্র বছরের ঐতিহ্যবাহী ভেষজ। কোভিড চিকিৎসার হাতিয়ার হিসাবে অবশেষে সরকারি স্বীকৃতি পেল আয়ুর্বেদ ও যোগথেরাপি। অশ্বগন্ধা, গুরুচি থেকে শুরু করে চ্যবনপ্রাশ, আয়ুর্বেদ ক্বাথ, সীতোপলাদি চূর্ণ, নাগারাদি কষায়, কূটজ ঘনবটি। কোভিডনাশী আয়ুর্বেদ ওষুধের তালিকায় এমন নানা ভেষজ ঠাঁই পেয়েছে। দেশের একাধিক আয়ুশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সুপারিশক্রমেই কোভিড চিকিৎসার এই নয়া প্রোটোকল (standard ayurvedic protocol) প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার দুই সদস্য- স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন ও আয়ুশমন্ত্রী শ্রীপদ নায়েক।
কোভিড মোকাবিলায় যোগাসন ও প্রাণায়ামেও কেন্দ্রীয় সিলমোহর পড়েছে। টাডাসন, পদহস্তাসন, অর্ধচক্রাসন, ত্রিকোণাসন, ভূজঙ্গাসন, সেতুবন্ধাসন, পবনমুক্তাসনের পাশাপাশি তালিকাভুক্ত করা হয়েছে নাড়িশোধন, সূর্যভেদী, উজ্জায়ী, ভ্রামরী, কপালভাতির মতো প্রাণায়ামকে। ফুসফুসের জোর বাড়াতে কিছু ব্রিদিং এক্সারসাইজও প্রেসক্রাইব করা হয়েছে প্রোটোকলে।
[আরও পড়ুন : মহামারীর মধ্যেও হাসপাতালে যেতেই হবে? মাথায় রাখুন বিশেষজ্ঞদের এই ১০টি টিপস]
উল্লেখ্য, কোভিডপর্বের শুরুতেই ‘সংবাদ প্রতিদিন’ কোভিড মোকাবিলা এবং চিকিৎসায় অশ্বগন্ধা ও গুরুচির কার্যকারিতার কথা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করেছিল। দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ আয়ুর্বেদ (এআইআইএ)-এর তথ্য নিয়েও বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এ। যাতে দেখানো হয়েছিল, কী ভাবে আয়ুশ পদ্ধতিতে চিকিৎসা করে একশো শতাংশ কোভিড রোগীকে সুস্থ করা হয়েছে।
সোমবারের প্রোটোকলেও দিল্লির এই সরকারি আয়ুর্বেদ হাসপাতালের কথাই সর্বাগ্রে উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে জামনগরের আইপিজিটিআরএ, জয়পুরের এনআইএ, সিসিআরএএস, সিসিআরওয়াইএন-সহ একাধিক সংস্থা ও কাউন্সিলের উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এই সব স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত কমিটিই প্রোটোকলের খসড়া প্রস্তুত করেছে। তা অনুমোদন করেছে বিশেষ টাস্ক ফোর্স ও আয়ুর্বেদ-যোগার ইন্টারডিসিপ্লিনারি কমিটি।
প্রোটোকলে প্রথমেই বলা হয়েছে, কোভিড মোকাবিলার সাধারণ নিয়মকানুনগুলো (মাস্ক পরিধান, সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং, হ্যান্ড স্যানিটাইজেশন, হাত ধোয়া ইত্যাদি) অবশ্যই মানতে হবে। তিনটি ভাগে প্রোটোকলকে ভাঙা হয়েছে। কোভিড আটকাতে কী কী করতে হবে, আক্রান্ত হলে কী কী ওষুধ ও যোগা করতে হবে। আর সবশেষে, কোভিড সেরে যাওয়ার পর কী কী করণীয়। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, তিনটি ক্ষেত্রেই ওষুধ হিসাবে মান্যতা পেয়েছে অশ্বগন্ধা ও গুরুচি। স্বীকৃতি পেয়েছে কপালভাতি, ভ্রামরী, উজ্জায়ী, সূর্যভেদী প্রাণায়ামও।
[আরও পড়ুন : জিরো সাইজের আশায় কিটো ডায়েট! জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন না তো?]
ঘটনা হল, এ যাবৎ দিল্লির এআইআইএ কিংবা জামনগরের আইপিজিটিআরএ-র মতো প্রতিষ্ঠানেই আটকে ছিল কোভিডের আয়ুশ চিকিৎসা। প্রোটোকল যা প্রকাশিত হয়েছিল, সবটাই প্রতিরোধমূলক। তবে গবেষণা শুরু হয়েছিল একাধিক আয়ুর্বেদ ওষুধ নিয়ে। কোভিড পর্বে ২০৩টি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য আবেদন জমা পড়ে। এর ১২৫টিই আয়ুশ শ্রেণিভুক্ত। আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের দাবি, কোভিড চিকিৎসার প্রোটোকল প্রকাশিত হওয়ায় উপসর্গহীন ও মৃদু্ উপসর্গযুক্ত রোগীদের আয়ুর্বেদ ওষুধ দিতে কোনও বাধা রইল না। এবার সব আয়ুর্বেদ হাসপাতালই পুরোদস্তুর কোভিড হাসপাতাল হয়ে উঠবে। একই বক্তব্য যোগ চিকিৎসকদেরও। তাঁদের মত, সব আয়ুর্বেদ হাসপাতালেই যোগা ক্লিনিক রয়েছে। অতএব যোগা চিকিৎসকরাও এবার সরাসরি কোভিডযুদ্ধের ময়দানে নামতে পারবেন। আয়ুর্বেদের রিসার্চ অফিসার ডা. অচিন্ত্য মিত্র থেকে ডা, সুমিত সুর সবাই অবশ্য সন্দিহান। জানালেন, কেন্দ্র যতই প্রোটেকাল করুক, রাজ্য যদি তা না মানে তাহলে সাধারণ মানুষ আয়ুর্বেদর আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিতই থেকে যাবে।