সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একটা সময় ছিল যখন বোমা-বন্দুকের আওয়াজে ও চত্বরে ঢোকার সাহস দেখাত না গণতন্ত্রের ব্যালট বক্স। তবে সময় বদলেছে। অতীতের ভয়াবহতা সমূলে নিকেশ হয়েছে সম্প্রতি। সেই সুবাদেই মাওবাদের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে স্বাধীনতার পর প্রথমবার ভোট উৎসবে অংশ নিল একটা গোটা গ্রাম। শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এটাই বাস্তব। শুক্রবার দেশের ১০২ টি লোকসভা কেন্দ্রে সম্পন্ন হয়েছে প্রথম দফা লোকসভা নির্বাচন (Lok Sabha election)। সেই নির্বাচনী উৎসবে প্রথমবার সামিল হলেন ছত্তিশগড়ের (Chhattisgarh) বস্তারের চন্দামেটা (Chandameta) গ্রামের বাসিন্দারা।
প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, বস্তারের চন্দামেটা গ্রামে বহুবার ভোট করানোর চেষ্টা হলেও বারবার ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন। এবারের লোকসভা নির্বাচনে এই গ্রামে ভোট করাতে বদ্ধপরিকর ছিল প্রশাসন। সেইমতো দফায় দফায় মাওবাদ বিরোধী অভিযান শুরু হয় এলাকায়। সম্প্রতি ২৯ জন মাওবাদীকে খতম করতে সফল হয় নিরাপত্তাবাহিনী। এরপরই শুরু হয় চন্দামেটা গ্রামে ভোট করানোর তোড়জোড়। কোনও রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে গোটা এলাকার দখল নেয় নিরাপত্তা বাহিনী। শুক্রবার প্রথম দফার নির্বাচনে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তায় মোড়কে নির্বিঘ্নে চলে ভোটগ্রহণ।
[আরও পড়ুন: ‘দেশ বদলাচ্ছে’, মোদি সরকারের ৩ ফৌজদারি আইনের প্রশংসায় চন্দ্রচূড়]
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যাচ্ছে, গ্রামে নথিভুক্ত ভোটারের সংখ্যা ৩২৫ জন। এঁদের মধ্যে ১৬২ জন মহিলা। পাহাড়, ঝর্ণা, জঙ্গল বেষ্টিত এই গ্রামে প্রবেশ রীতিমতো দুঃসাধ্য অভিযানের সামিল। মাওবাদীদের দাপটে এতকাল উন্নয়নের ছিটেফোঁটাও পৌঁছয়নি গ্রামে। গ্রামবাসীদের বক্তব্য অনুযায়ী, 'এতকাল না ছিল এখানে কোনও প্রশাসনিক আধিকারিক আর না ছিল কোনও পোলিং বুথ। ফলে ভোট নিতে এই গ্রামে পৌঁছতে না পেরে সরকারের তরফে বারবার আবেদন করা হয়েছে সরকারের অধীনে থাকা এলাকায় গিয়ে ভোট দেওয়ার জন্য। তবে সে প্রস্তাব কোনওভাবেই গ্রহণ করেননি এলাকার মানুষ। তাঁদের বক্তব্য ছিল, মাওবাদীদের হুমকি উপেক্ষা করে সরকার অধ্যুষিত এলাকায় গিয়ে ভোট দিলে মৃত্যু নিশ্চিত। তখন সরকার বাঁচাতে আসবে না। আর ভোট দিয়েও লাভ কী?'
[আরও পড়ুন: জেলে কেজরিওয়ালকে ধীরে ধীরে হত্যার চেষ্টা! বিস্ফোরক অভিযোগ আপের]
তবে ছত্তিশগড়ের পরিস্থিতি বদলাতে কোমর বাঁধে নিরাপত্তাবাহিনী। গত জানুয়ারি থেকে একের পর এক মাওবাদী বিরোধী অভিযানে অন্তত ৮০ জন মাওবাদীর মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে নির্বাচনের ৩ দিন আগেই ওই এলাকায় মৃত্যু হয় ২৯ জনের। এলাকায় একের পর এক পুলিশ ক্যাম্প খোলা হচ্ছে সরকারের তরফে। একদা মাও অধ্যুষিত সব এলাকাগুলিকে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। এই পরিস্থিতিতে জীবনে প্রথম ভোটাধিকার প্রয়োগ করে উন্নয়নের আশায় বুক বাঁধছেন এলাকার মানুষও।