স্টাফ রিপোর্টার : সময় যত এগোচ্ছে ততই বাড়ছে ভোটের উত্তাপ। আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জিনিসপত্রের দামও। তালিকায় রয়েছে মাছ, মাংসও। স্বভাবতই পকেটে বিস্তর টান পড়ছে আম আদমির। পাঠার মাংস সেই কবে সাতশোর ঘরে। মধ্যবিত্ত বাঙালি হেঁশেলে মাংস বলতে সবেধন নীলমণি মুরগি। কিন্তু সেই পালকও ক্রমশও দামের ভারে বেজায় ভারী। যে মুরগির মাংস ক’দিন আগেও ছিল ১৫০/১৭০ টাকা কেজি, শনিবারই তার জন্য ২৩০/২৫০ টাকা হাঁকছেন দোকানিরা! দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুর, গড়িয়াহাট থেকে মালদহের ইংরেজবাজারের এলআইসি মোড়। রাজ্যের দুই প্রান্তে একই অভিজ্ঞতা দুই বাসিন্দার। কেজি প্রতি মুরগির দাম আচমকাই বেড়ে গিয়েছে ৬০ টাকা।
বাজার-সূত্রের খবর, পোলট্রিতে বড় হওয়া ব্রয়লার মুরগির মূল খাদ্য ভুট্টার দানা, সরষের খোল কিংবা বাদামের খোলা। এ সবের দাম বাড়তে শুরু করেছে। মুরগির মাংসের মূল্যবৃদ্ধির নেপথ্য কারণ হিসাবে এর দিকেই আঙুল উঠেছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল পোলট্রি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মদনমোহন মাইতির কথায়, “হ্যাচারিতে মুরগিকে যে খাবার দেওয়া হত, গত দু’সপ্তাহে তার দাম চড়ছে। ভুট্টা, সয়াবিনের খোলা, বাজরা, মাইলো, সরষের খোল, বাদামের খোলে হাত ঠেকানো যাচ্ছে না। ব্রয়লার মালিকদের মুরগি পোষার খরচ বেড়েছে। চিকেনের দামও বেড়েছে।” রয়েছে আরও অনেক কারণও।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীত শেষের এই সময়টায় ঋতু পরিবর্তনের দরুণ মুরগির মড়ক দেখা যায়। বাঁকুড়ার আগম অন্বেষা হ্যাচারির মালিক তাপস ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, “কলকাতার আশপাশের হ্যাচারিতে প্রচুর মুরগি মারা গিয়েছে। দুই চব্বিশ পরগনা, কলকাতাকে চাহিদামাফিক মুরগি জোগান দিতে পারছে না। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া থেকে এনে ঘাটতি পোষাতে হচ্ছে, সঙ্গে রয়েছে পরিবহণ খরচ। গোদের উপর বিষফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে পেট্রোল, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিও। গ্রামে-গঞ্জের হ্যাচারিতে বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটর ভরসা। ফলে মুরগি পালনের খরচও বাড়ছে হু-হু করে।”
[আরও পড়ুন: প্রথম দু’দফার জন্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা কংগ্রেসের, দেখে নিন তালিকা]
পাশাপাশি মহার্ঘ হয়েছে মুরগির বাচ্চাও। মুরগি প্রতিপালনের জন্য মুরগির ছানা কেনে অনেক হ্যাচারি। এক মাস আগেও যেখানে একটি মুরগির ছানার দাম ছিল ২৫/৩০ টাকা, মার্চের শুরুতে তা দাঁড়িয়েছে ৫০ টাকায়। তথ্য বলছে, বাড়ি-রেস্তরাঁ মিলিয়ে কলকাতায় মুরগির দৈনিক চাহিদা প্রায় আটশো কুইন্টাল। করোনা আবহে মুরগির ব্যবসা মস্ত ধাক্কা খেয়েছিল। বিয়ে, অন্নপ্রাশন ইত্যাদি স্থগিত হয়ে যাওয়ায় চাহিদা তলানিতে এসে ঠেকেছিল। উপরন্তু গুজব রটে, মুরগি থেকে নাকি করোনা ছড়াচ্ছে! সে সময় ১৪/১৫ টাকা কেজিতে নেমে গিয়েছিল মুরগির মাংসের দাম। এমনকী আমফানের দাপটেও ভেঙে তছনছ হয়ে গিয়েছিল বহু পোলট্রি ফার্ম।
এই সংকট কাটিয়ে পরিস্থিতি সবেমাত্র স্বাভাবিক হতে শুরু করেছিল। বিয়ের মরশুমে অনুষ্ঠানের শেষ নেই। ক্যাটারিং ব্যবসাও চলছে চুটিয়ে। ওয়েস্ট বেঙ্গল পোল্ট্রি ফেডারেশনের সদস্য অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “বিয়ের মরশুমে চাহিদা বাড়ায় সামান্য দাম বেড়েছে।” অবশ্য এক ধাক্কায় এতটা বৃদ্ধি মোটেও স্বাভাবিক নয় বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী মহলের বড় অংশ। কারও কারও মতে ভোটের প্রচারে, সভা সমাবেশ মিটিং মিছিলে কর্মী সমর্থকদের ঢালাও চিকেন খাওয়ানো হচ্ছে। চাহিদা বৃদ্ধির এও একটা বড় কারণ। বস্তুত পুরো ভোটের মরশুমটা জুড়েই এ অবস্থা চলতে পারে বলে করছে ব্যবসায়ী মহল।
ফলে ভোটের বাজারে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক উত্তাপের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেভাবে মুরগির মাংসের দাম বাড়ছে তাতে রাজনৈতিক মহল থেকে হোটেল ব্যবসায়ী, গৃহকর্ত্রী, সকলের কপালেই পড়েছে চিন্তার ভাঁজ।