অভিরূপ দাস: রাখে চিকিৎসক। মারে কে? জন্মাবধি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। নিজে নিজে বসতে পারে না। হাঁটাচলা তো দূরের কথা। এহেন ন’বছরের শিশুর শরীরে নিউমোনিয়া। তাও এক আধবার নয়। বছর বছর। অবস্থা এমনই, শেষ ১২ মাসে তাকে পাঁচবার ভরতি হতে হয়েছে হাসপাতালে। অভিভাবকরা যখন দিশেহারা, হাল ছাড়েননি চিকিৎসকরা। দক্ষিণ কলকাতার কসবার ন’বছরের যুধাজিৎ পালের দ্বিতীয় জন্ম হল ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথে।
প্রান্তিক পরিবারের আশা ভরসা ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ। মস্তিষ্কের জটিল রোগে আক্রান্ত যুধাজিৎ। যতদিন জীবন ততদিন চলবে চিকিৎসা। তার খরচও প্রচুর। এরই মধ্যে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন যুধাজিতের শরীরে আজব অসুখ। চিবোতে পারে না বলে, সব খাবারই তাকে ডলে মেখে খাওয়াতে হয়। এরই মধ্যে বার বার কাশি। জ্বর। শ্বাসকষ্ট। তা এতটাই বাড়াবাড়ির পর্যায়ে যে হাসপাতালে ভরতি হতে হচ্ছিল। দু’বার তো ভেন্টিলেশনে রাখতে হয়েছিল। মৃত্যুর হাত থেকে তাকে ফিরিয়ে আনেন চিকিৎসকরা। এরপরই শুরু হয় তদন্ত।
[আরও পড়ুন: ‘ডোন্ট আন্ডার এস্টিমেট দ্য পাওয়ার অফ কমনম্যান’, শাহরুখের ডায়লগেই রাজ্যকে বার্তা রাজ্যপালের]
কেন বারবার নিউমোনিয়া? দেখা যায়, যে নিউমোনিয়া বার বার বাসা বাঁধছে শরীরে তা আদতে অ্যাসপিরেশন নিউমোনিয়া (Aspiration Pneumonia)। মুখ দিয়ে যে খাবার খাওয়ানো হচ্ছে তারই কণা ঢুকে পড়ছে ফুসফুসে। বন্ধ করা হল মুখ দিয়ে খাওয়ানো। নাক দিয়ে ক্ষুদ্রান্ত্র পর্যন্ত পরিয়ে দেওয়া হল একটি নল। যার নাম জেজুনাল টিউব। তার মাধ্যমেই চলল তরল খাবার খাওয়ানো। তবে এটা চিরস্থায়ী সমাধান নয়। স্বাভাবিক অবস্থায় রোগীকে ফিরিয়ে আনতে কোমর বাঁধলেন চিকিৎসকরা। পরীক্ষা-নিরীক্ষাতে চিকিৎসকরা দেখলেন, খাবারের কণা ফুসফুসে উঠে আসার কারণ ‘রিফ্লাক্স’। অর্থাৎ যা-ই খাওয়ানো হয় তার কিছুটা ওপরে উঠে আসছে।
ডা. প্রভাসপ্রসূন গিরির জানান, সমস্যাটা আদতে পাকস্থলী আর খাদ্যনালির সংযোগস্থলে। এর সমাধান একটি জটিল অস্ত্রোপচার। যার পোশাকি নাম গ্যাস্ট্রোস্টমি প্লাস ফান্ডোপ্লিকেশন। তাই-ই করা হয়। অস্ত্রোপচারে পাকস্থলী আর খাদ্যনালির সংযোগস্থলটি বেঁধে টাইট করে দেওয়া হয়েছে। এতে খাবারের কণা আর উপরের দিকে উঠতে পারে না। এছাড়া পেটের উপর থেকে চামড়া ফুটো করে পাকস্থলীর মধ্যে একটি নল ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। যেটা দিয়ে তরল খাদ্য সরাসরি পাকস্থলীতে পৌঁছয়। ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথে প্রথম এমন জটিল অস্ত্রোপচার হল ল্যাপারোস্কোপির মাধ্যমে। ছ’ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে ছিলেন ডা. তপনজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়, ডা. অভিষেক আনন্দ। অ্যানাস্থেটিস্টের দায়িত্বে ছিলেন ডা. কবিতা দুবে।