অভিরূপ দাস: উল্টোডাঙায় ধূম জ্বরে ভুগে মৃত্যু হল এক শিশুর। ডেথ সার্টিফিকেটে উল্লেখ, মৃত শুভ ময়রা (৫) স্ক্রাব টাইফাসে ভুগছিল। বিসি রায় শিশু হাসপাতালে ভর্তি ছিল সে। এটাই শুরু নয়। গত কালীপুজোর দিনই মারা গিয়েছেন এলাকার তরুণী সখিনা বিবি (২৬)। বাসিন্দাদের দাবি, অজানা জ্বরেই এলাকায় একের পর এক মৃত্যু হচ্ছে। আর এই জ্বরের পিছনে ভিলেন এক পোকা।
মৃত শুভর মা-বাবা জানিয়েছেন, প্লেটলেট নেমে গিয়েছিল ছেলের। গায়ে দেখা গিয়েছিল র্যাশ। যা দেখে প্রথমটায় চমকে যান ডাক্তারবাবুরাও! এলাকার আরও অনেকেই এমন অদ্ভুত জ্বরে আক্রান্ত। প্রথমটায় মনে করা হয়েছিল ডেঙ্গু। কিন্তু রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গুর প্রমাণ মেলেনি। চিকিৎসকরা বলছেন, গায়ে গোল গোল, চাকা চাকা, গাঢ় বাদামি ফোস্কার মতো র্যাশ। প্লেটলেট কাউন্ট নিম্নমুখী। এগুলো মানেই ডেঙ্গু নয়। পোকার কামড় থেকে এই জ্বরের নাম ‘স্ক্রাব টাইফাস।’ শুধু উল্টোডাঙা নয় রাজ্য জুড়েই এই রোগ এখন ডালপালা মেলছে। শুধু পার্ক সার্কাসের ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ (আইসিএইচ)-এ গত ছ’মাসে ‘স্ক্রাব টাইফাস’ আক্রান্ত প্রায় ৭০টি শিশু ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে বারোজনকে আইটিইউয়ে রেখে চিকিৎসা করতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইসিএইচ-এর ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ ডা. প্রভাসপ্রসূন গিরি। শনিবার তিনি বলেন, “জুনের মাঝামাঝি থেকে স্ক্রাব টাইফাসের প্রকোপ শুরু হয়। সাধারণত শীত বাড়লে এই রোগের প্রকোপ কম হওয়ার কথা।” চিকিৎসক জানিয়েছেন মূলত দেড় থেকে দশ বছরের শিশুদের মধ্যেই এই রোগের প্রকোপ বেশি। হার্ট ফেলিওর, মেনিনজাইটিস, এনসেফেলাইটিস, মাল্টি অর্গান ফেলিওরের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে স্ক্রাব টাইফাসে।
[ছুরির আঘাতে রক্তাক্ত, রাতের ট্রেনে ৩ ডাকাতকে একাই রুখে দিলেন ‘বীরাঙ্গনা’ ]
স্ক্রাব টাইফাসের খবর চাউড় হতেই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। শনিবার এলাকা পরিদর্শনে আসেন স্থানীয় বিধায়ক সাধন পাণ্ডে। কলকাতা পুরসভার তিন নম্বর বরোর চিকিৎসক ডা. দীপঙ্কর মাজি, এক্সিকিউটিভ মেডিক্যাল অফিসার সৌরভ চট্টোপাধ্যায়, ওয়ার্ডের মেডিক্যাল অফিসার ডা. রেহানা সরকারের পরিচালনায় হেলথ ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। জানা গিয়েছে এলাকায় অনেকেই ধুম জ্বরে ভুগছেন। আপাতত জ্বরে আক্রান্তদের রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছে। বাড়ির আশপাশ পরিস্কার রাখতে বলেছেন চিকিৎসকরা। ডাক্তারবাবুরা ময়নাতদন্ত করে জানিয়েছেন, এই স্ক্রাব টাইফাসের নেপথ্যে রয়েছে এক ধরনের জীবাণু, যার বাহক মশা নয়। এক ধরনের মাকড়ের (মাইট) লার্ভা। এই মাকড় বা পোকা দংশন করলে শরীরে রিকেটশিয়া সুসুগামুসা নামে এক ধরনের জীবাণু অনুপ্রবেশ করে। যা বংশবিস্তার করে বিকল করতে থাকে লিভার, হার্ট, কিডনি-সহ একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ।
যেহেতু জ্বরের প্রকোপে প্লেটলেট কমে হুড়মুড়িয়ে। তাই প্রথমে ডেঙ্গু বা এনসেফেলাইটিস বলে ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক। সেই ভুল দেরিতে ভাঙলে কিন্তু সমূহ বিপদ। প্রাণহানিও হতে পারে। এলাইজা পরীক্ষায় রোগটি ধরা পড়ে। তাই এ ধরনের কেস পেলে যত শীঘ্র সম্ভব স্ক্র্যাব টাইফাস নির্ণায়ক পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার উপর জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। কলকাতায় স্ক্র্যাব টাইফাস প্রথমে নজরে আসে দু’বছর আগে। কোথায় থাকে স্ক্রাব টাইফাসের জীবাণু বহনকারী পোকা? মাকড়ের বাস বনে-বাদাড়ে, ঘাসে-ঝোপ-ঝাড়ে। উড়তে পারে না। তবে দু’ থেকে আড়াই ফুট পর্যন্ত লাফাতে পারে। কামড়ালে গায়ে সিগারেটের পোড়া দাগের মতো র্যাশ বের হয়। জঙ্গলে হাঁটলে বা ঘাসের উপর ‘মর্নিং ওয়াক’ করলেও রিকেটশিয়ার আঁচড়-কামড় খেতে হতে পারে। তাই, জুতোর সঙ্গে সঙ্গে পা ঢাকা ফুল প্যান্ট পরা জরুরি। ডা. গিরি জানিয়েছেন, “স্ক্র্যাব টাইফাস ছোঁয়াচে নয়। অ্যান্টিবায়োটিকে সেরে যায়। কিন্তু সময়মতো ধরা পড়তে হবে। না হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।”
[টাকা নিয়ে উপস্থিতির হার বাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ, উত্তেজনা বেহালা কলেজে]
The post উল্টোডাঙায় পোকার কামড়ে শিশুর মৃত্যু, শহরে স্ক্রাব টাইফাসের আতঙ্ক appeared first on Sangbad Pratidin.