সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২০১৮ সাল। চিনা পণ্য আমদানিতে ২৫০ বিলিয়ন ডলার শুল্ক আরোপ করে আমেরিকা। ‘বদলা’ নিতে চিন মার্কিন পণ্যের আমদানিতে চাপিয়ে দেয় ১১০ বিলিয়ন ডলার শুল্ক। সেই শুরু দুই দেশের মধ্যে 'বাণিজ্য যুদ্ধ'। সদ্য প্রকাশিত মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল সামনে আসতেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে বাইডেনকে সরিয়ে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন। আর তার পর থেকেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে, এবার শুরু 'বাণিজ্য যুদ্ধ ২.০'। এই লড়াইয়ে শেষ হাসি কে হাসবে?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই চিনা নেতারা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, কমলা হ্যারিস বা ডোনাল্ড ট্রাম্প- যিনিই ক্ষমতায় আসুন পরিস্থিতি তাঁদের জন্য মোটেই সুবিধার হবে না। তবে ডেমোক্র্যাট বাইডেনের থেকে রিপাবলিকান ট্রাম্প যে আরও শক্ত ঘাঁটি হবে সেবিষয়ে সন্দেহ নেই। কেননা মনে করা হচ্ছিল, কমলা হ্যারিস জিতলে দুদেশের সম্পর্কের ধীরগতিতে হলেও উন্নতি হবে। কিন্তু ট্রাম্পকে নিয়ে সন্দেহ ছিলই। বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতা জিতলে তিনি কঠোর অবস্থানেই থাকবেন, এটা মনে করা হচ্ছিল। তিনি তো বলেই দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এলে বেজিংয়ের উপরে ৬০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে দেওয়া হবে।
কিন্তু সত্যিই কি ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনে 'ভয়' পাচ্ছে চিন? বিশেষজ্ঞদের মত, বিষয়টা এবার অন্য। প্রথম থেকেই কিন্তু বেজিং প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল। সিএনএনের সঙ্গে কথা বলার সময় বিশেষজ্ঞ ডেক্সটার রবার্টস বলছেন, ''বেশ কিছুটা সময় আগে থেকেই চিন এই দিনটার জন্য তৈরি হচ্ছিল। আগের চেয়ে এখন তাদের বাণিজ্য নেটওয়ার্কে আমেরিকার গুরুত্ব অনেকটাই কমে গিয়েছে।'' আর এটাই সত্যি। জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পরও চিনের উপরে আরোপিত শুল্ক বহাল রেখেছিলেন। আবার এবছরের সেপ্টেম্বরে তাঁর প্রশাসন কিছু চিনা পণ্যের শুল্ক বৃদ্ধি করারও সিদ্ধান্ত নেয়। তাই চিন ইতিমধ্যেই আমেরিকার উপরে বাণিজ্য-নির্ভরতা কমাতে শুরু করেছে। ২০২২ সালেও চিন-আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ছিল রেকর্ড-উচ্চতায়। কিন্তু গত বছরের হিসেব দেখাচ্ছে চিনকে টপকে গিয়েছে মেক্সিকো।
আমেরিকার সঙ্গে বেজিংয়ের বাণিজ্য হ্রাস পয়েছে ২০ শতাংশ। ২০২৩ সালে জি৭ তথা 'গ্রুপ অফ সেভেন' ধনী দেশগুলিতে চিনের রপ্তানি ছিল ৩০ শতাংশেরও নিচে। যা ২০০০ সালে ছিল ৪৮ শতাংশ। শুক্রবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আলোচক ওয়াং শওয়েন সাংবাদিকদের বলেছেন, "আমাদের বাহ্যিক ধাক্কাগুলির প্রভাবে সমাধান ও প্রতিরোধের ক্ষমতা রয়েছে।" এখানে 'বাহ্যিক' যে আমেরিকা তাতে সন্দেহের অবকাশ পর্যন্ত নেই। ফলে চিন যে আমেরিকার চাপানো শুল্কের বোঝা সয়ে নিজেদের বাণিজ্যের দিকটিকে শক্তিশালী করে তুলতে বদ্ধপরিকর তা ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে।