কলহার মুখোপাধ্যায়: ‘ওরে চিনা রাজার সেনা তোরা যুদ্ধ করে করবি কী তা বল?’ পরস্পরের দ্বন্দ্বে যে অমঙ্গলই হয়, এটা বোঝাতে আন্তরিকতায় খামতি রাখছে না কলকাতার চায়না টাউন। কোনও বাড়িতে ভারতীয় শহিদদের সম্মানে মোমবাতি জ্বলছে। কখনও রাস্তার মিছিলে ভারতের সার্বভৌমত্ব রক্ষার শপথ নেওয়া হচ্ছে। কোনও সকালে রাস্তার ধারের জাগ্রত দেবতার মন্দিরে পুজোর ধুপ জ্বালাচ্ছেন গৃহবধূ। বুদ্ধের উপাসক অধিকাংশ চিনাদের মূল বক্তব্য, ‘প্রয়োজনে যুদ্ধে নামব। কিন্তু তার আগে মানবতার বাণী প্রচার করে যাব। যুদ্ধ নয়, আমরা শান্তি চাই। ভারত চিরকাল সেকথাই বিশ্বকে জানিয়ে এসেছে।’ ফুটপাতের ধারের মন্দিরে পুজো দিতে দিতে এই কথা শোনালেন বছর পঁয়ত্রিশের গৃহবধূ শি লিয়ে। নিজের ছবি তুলতে দিতে একেবারে নারাজ তিনি। তবে পুজো উপাচার ও মন্দিরের ছবি তুললে আপত্তি করবেন না, জানিয়ে দিলেন।
মন্দিরের ছবি তোলাটা কোনও বিষয়ই নয়। ফুটের ধারে লাল রঙের মন্দিরটা খোলা থাকে বছভর। এখন তার প্রায় ভগ্নদশা। এর উচ্চতা মেরেকেটে তিন ফুট। হাঁটু ছাড়াবে না কোনওমতেই। প্রস্থ চার ফুটের মতো। একহাত করে লম্বা, লাল টুকটুকে দুটি থাম হেলে পড়ছে ক্রমশ। খুব নজর না দিলে এই মন্দিরে চোখ আটকাবে না কোনওমতেই। চায়না টাউনের বিখ্যাত কালী মন্দিরের ২০০ মিটার দূরে রয়েছে এই মন্দির। কোনও বিগ্রহ নেই। এই দেবতা নিরাকার। চায়না টাউনের কথ্য ভাষায় ‘বোট গড’ বলা হয় এঁকে। গুগল কস্মিনকালেও এর হদিশ দিতে পারবে বলে মনে হয় না। রোজ নয়, এই দেবতা বিশেষ বিশেষ সময় পুজো পান। পথ দুর্ঘটনা রোধ থেকে সন্তানের মঙ্গল কামনা, অধিকাংশ বিষয়েই চিনেরা এঁর দ্বারস্থ হন। চায়না টাউন এখন শান্তি প্রার্থনা নিয়ে এই মন্দিরে প্রসাদ চড়াচ্ছে।
[আরও পড়ুন: ‘আমরা ভারতীয়, চিন দূর হঠো’, কলকাতায় বিক্ষোভ মিছিল খোদ চিনাদেরই]
গোটা কয়েক আম, বিস্কুটের কতগুলো প্যাকেট আর একগাদা চকোলেট। এই হচ্ছে বোট দেবতার প্রসাদ। “এসব গ্রহণ করে তুষ্ট হবেন তিনি। যুদ্ধের মেঘ সরিয়ে দেবেন। সূর্যকে ডেকে বলবেন, আলো ঢেলে দাও। তারপর সূর্যরথে চেপে শান্তির দেবতা পৃথিবীতে পা রাখবে।”- চায়না টাউন এটাই বিশ্বাস করে। লজেন্স-বিস্কুট খেয়ে বোট দেবতা এইটুকু করলেই নিশ্চিন্তি। ‘দ্বিষো জহি’- দুর্গার কাছ থেকে অনেক চাওয়ার মধ্যে এই চাওয়াও থাকে মানুষের-‘কাম-ক্রোধ-লোভ থেকে আমাদের মুক্ত করে দাও দেবী।’ বোট দেবতার কাছেও চায়না টাউনের একই প্রার্থনা -‘সূর্যের রথে বসিয়ে শান্তির দেবতাকে গালওয়ানে পাঠাও ঠাকুর।’
[আরও পড়ুন: চিনা হ্যাকারদের নিশানায় পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎ দপ্তর, সতর্ক করল কেন্দ্র]
The post গালওয়ানে শান্তি ফিরুক, ‘বোট দেবতা’র কাছে পুজো দিয়ে প্রার্থনা চায়না টাউনের appeared first on Sangbad Pratidin.