সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতের এসে তিব্বতের ধর্মগুরু দলাই লামার সঙ্গে বৈঠক করেছে আমেরিকার সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল। যেখানে ছিলেন প্রাক্তন মার্কিন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিও। আর তাঁদের এই সাক্ষাৎ নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই রেগে লাল চিন। যা নিয়ে ফের একবার আমেরিকার সঙ্গে বাগযুদ্ধে জড়াল কমিউনিস্ট দেশটি।
বুধবার হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় ধর্মগুরু দলাই লামার সঙ্গে বৈঠক করেন ন্যান্সি পেলোসি-সহ প্রতিনিধি দলের অন্যান্য সদস্যরা। বেশ কিছুক্ষণ বৈঠক হয় তাঁদের মধ্যে। ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে চিনকে নিশানা করে ন্যান্সি পেলোসি বলেন, "ধর্মগুরু দলাই লামা দীর্ঘজীবী হবেন এবং তাঁর পরম্পরা চলতে থাকবে। কিন্তু চিনের প্রেসিডেন্ট যখন কোথাও যাবেন তখন তাঁকে তাঁর কাজের জন্য কেউ স্বীকৃতি দেবে না। দলাই লামাও চাইবেন না এভাবে চিনের বিরুদ্ধে কথা বলি। কিন্তু খুব শীঘ্রই একটা পরিবর্তন আসতে চলেছে। যা তিব্বতের মানুষদের আশাভরসাকে উজ্জীবিত করবে।"
এদিকে, পেলোসি-দলাই সাক্ষাতে রীতিমতো ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে চিন। বিবৃতি দিয়ে চিনা বিদেশমন্ত্রক কার্যত হুঁশিয়ারির সুরে আমেরিকাকে বার্তা দিয়ে জানায়, 'দলাই লামা ধর্মগুরু নন। তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদী। ধর্মের আড়ালে চিন-বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এক নির্বাসিত রাজনৈতিক নেতা। আমরা চাই আমেরিকা তাঁর এই চিন-বিরোধী মনোভাব বুঝুক। বিশ্বের কাছে ভুল চিত্র তুলে ধরা বন্ধ হোক।' বেজিংয়ের তরফে আরও বলা হয়, আমেরিকা যদি তিব্বতকে চিনের অংশ হিসাবে বিবেচনা না করে তাহলে 'উপযুক্ত' পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বলে রাখা ভালো, তিব্বত নিয়ে বরাবরই স্পর্শকাতর চিন। এদিকে, আমেরিকা দীর্ঘদিন ধরে তিব্বতের মানুষের ধর্ম ও সংস্কৃতি পালনের অধিকারকে সমর্থন করে আসছে। এমনকী এই প্রদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে চিনের বিরুদ্ধে। চলতি মাসেই চিন ও তিব্বতের মধ্যে সমস্যা সমাধানে মার্কিন আইনসভার নিম্নকক্ষ হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে একটি বিল পাস হয়েছে। সেই নিয়ে কথা বলতেই ভারতে এসেছে মার্কিন প্রতিনিধিদল। চিন যাতে তিব্বতের আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসে তার জন্য এই বিলের মাধ্যমে উৎসাহ প্রদান করা হবে। ২০১০ সাল থেকে চিন ও তিব্বতের মধ্যে বৈঠক বা আলোচনা বন্ধ হয়ে আছে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, তিব্বত ইস্যু নিয়ে চিনকে চাপে রাখতে আমেরিকাকে পাশে পেয়েছে ভারত। এর আগে চিনের ইউহান প্রদেশ ও তামিলনাড়ুর মমল্লাপুরমে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের। সেখানে আলোচনার মাধ্যমে ক্ষত মেরামতের চেষ্টা করেছিলেন মোদি। কিন্তু তাতে লাভ খুব একটা কিছু হয়নি। তার পরই তিনি স্পষ্ট বুঝে গিয়েছেন চিনের সঙ্গে রোম্যান্টিকতার কোনও জায়গা নেই। কুটনৈতিক চালেই বেজিংকে মাত দিতে হবে। বিশ্লেষকদের মতে, তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফিরে আমেরিকাকে পাশে নিয়েই তিব্বতকে হাতিয়ার করে জিনপিংয়ের দেশের বিরুদ্ধে নতুন কৌশল নিচ্ছেন মোদি।