সুকুমার সরকার, ঢাকা: ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ সরকার। শরণার্থীদের সমুদ্রের মাঝে বিচ্ছিন্ন দ্বীপটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্তে স্পষ্টতই অখুশি আমেরিকা ও ইউরোপের বহু দেশ। এহেন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের জীবনমান দেখতে বৃহস্পতি ও শুক্রবার ভাসানচর পরিদর্শন করলেন চিনা রাষ্ট্রদূত।
বৃহস্পতিবার দু’দিনের সফরে নোয়াখালি জেলার হাতিয়া উপজেলার ভাসানচরে রোহিঙ্গা (Rohingya) ক্যাম্পে পৌছন বাংলাদেশে নিযুক্ত চিনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। সফর শেষে শুক্রবার তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর দুটো নাগাদ নৌবাহিনীর জাহাজে ভাসানচরে পৌঁছন চিনা রাষ্ট্রদূত। সফরকালে তিনি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ভাসানচরে তাদের সুযোগ-সুবিধা ও জীবনযাত্রার মান-সহ নানা বিষয়ে খোঁজখবর নেন এবং ভাসানচরের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন।
[আরও পড়ুন: মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের হয়ে অত্যাচার, ৩ জামাত নেতাকে ফাঁসির সাজা বাংলাদেশে]
ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (উপ-সচিব) মহম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, চিনের রাষ্ট্রদূত রোহিঙ্গাদের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করতে ভাসানচরে এসেই বৃহস্পতিবার বিকেলে রোহিঙ্গাদের ফুটবল টুর্নামেন্ট উপভোগ করেন। শুক্রবার ভাসানচরের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বিকেলে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এর আগে গত ২৪ মে রাষ্ট্রসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি ভাসানচর পরিদর্শন করেন। ওই সময় বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের একটি প্রতিনিধি দলও তার সঙ্গে ছিলেন।
ধর্ষণ, হত্যা, অগ্নিসংযোগ-সহ মায়ানমার (Myanmar) সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত নির্যাতন-নিপীড়নের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে নতুন করে সাড়ে সাত লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গা সাগর ও সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল কক্সবাজার জেলায় আশ্রয় নেয়। এর আগে বিভিন্ন সময়ে আরও চার লক্ষ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকায় আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছিল। সব মিলিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশে এগারো লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গার বাস। তবে সমুদ্রঘেঁষা কক্সবাজারের ওপর থেকে রোহিঙ্গাদের চাপ সামলাতে সরকার এক লক্ষ রোহিঙ্গার জন্য নোয়াখালীর ভাসানচরে পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। এরপরই শুরু হয় রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর প্রক্রিয়া। এ পর্যন্ত ১৩ ধাপে কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে পৌঁছেছে ২৯ হাজার ১১৬ জন শরণার্থী।
গত বছর মে মাসে সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করা ৩০৬ রোহিঙ্গাকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে ভাসানচরে পাঠানো হয়। নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে তিন হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে এক লক্ষ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গ্রামের পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এবং বৈশ্বিকভাবে চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে মিয়ানমার সরকার বিভিন্ন সময়ে প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।