shono
Advertisement

এই যে আমি করে খাচ্ছি, মৃণাল সেন না থাকলে হত না: অঞ্জন দত্ত

আর কী বললেন অঞ্জন দত্ত?
Published By: Akash MisraPosted: 10:18 AM May 10, 2024Updated: 10:18 AM May 10, 2024

মৃণাল সেনের জন্মশতবর্ষে অঞ্জন দত্ত গত বছরই বানিয়েছিলেন তাঁর ছবি ‘চালচিত্র এখন’। কিফ-এ গত বছর পুরস্কৃত হয় এই ছবিটি। কিছুদিন আগে এই ছবির জন‌্য বাংলাদেশে অঞ্জন দত্ত সেরা অভিনেতার শিরোপা অর্জন করেন। সেই ছবি মুক্তি পাচ্ছে আজ। সামনে ১৪ মে মৃণাল সেনের শতবর্ষ পূর্ণ হচ্ছে। তাঁর আগে ছবিটি নিয়ে কথোপকথনে উঠে এল পরিচালক অঞ্জনের ভাবনা। ‘চালচিত্র এখন’ তৈরির নেপথ‌্য কাহিনি শোনালেন অঞ্জন দত্ত। শুনলেন শম্পালী মৌলিক।

Advertisement

‘চালচিত্র এখন’ তৈরির নেপথ‌্য ভাবনা কেমন? মৃণাল সেনের ‘চালচিত্র’ তৈরির গল্প এই ছবির মধ্যে রয়েছে।
অঞ্জন দত্ত: মৃণালবাবুর সঙ্গে আমার ৪২ বছরের যোগাযোগ। বলব, এটা যোগাযোগের থেকেও বেশি কিছু। বন্ধুত্বের, ঝগড়াঝাঁটির, ভালোবাসার আন্তরিক সম্পর্ক ছিল। আমার রাজনৈতিক মতবাদ, প্রথম থেকেই ওঁর থেকে আলাদা ছিল। শেষদিন পর্যন্ত, ডাক্তার, কুণালের সঙ্গে আমার নামটাও ওর বাড়ির দেওয়ালের ওপর টাঙানো ছিল– যে বাকিরা মিস করলেও অঞ্জনকে ফোন করলে চলে আসবে। আমার ছবি হলে মৃণালদাকে ডেকে আনতাম, দেখাতাম। দেখবে, আমার সব কাজের মধ্যে আমি আছি। অর্থাৎ আমার গানে, সিনেমায়, আমার ব‌্যক্তিগত পছন্দ- জীবন আছে। যেমন অ‌্যাংলো ইন্ডিয়ান জগতের প্রতি আমার প্রীতি বা দার্জিলিংয়ের প্রতি ভালোবাসা, আমার কসমোপলিটন কলকাতা, বাড়ি-বাবা-মা–এই সবই সিনেমায় এসেছে, কিন্তু মৃণাল সেনের সঙ্গে আমার সম্পর্ক একফোঁটাও আসেনি সিনেমায়। যখন সত‌্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষ উদযাপন হচ্ছে, অনীকের ‘অপরাজিত’ বেরিয়েছে, তখন এই বিষয়টা আমি পার্সোনালি ফেস করি। এটা আমি করিনি কেন? খারাপ লেগেছিল যে, আমার ‘ডিউস’-টা দেওয়া হল না। এটা যখন মাথায় এল, তখন আমি আমার গল্পটা পেলাম। অনেকদিন আগে আমি একবার মৃণাল সেনকে বলেছিলাম, ‘আমি আপনার ওপর ডকুমেন্টারি করব।’ তখন গান করি। ভেবেছিলাম যা পয়সা উঠছে, সেখান থেকেই ডকুমেন্টারি করব। উনি বলেছিলেন– ‘করো, কিন্তু তুমি পার্সোনাল করবে। তোমার সঙ্গে আমার ব‌্যক্তিগত জায়গা থেকে করবে।’ এই চিন্তাটা যখন আসে, একরাত্তির জেগে আমি গল্পটা পেয়ে যাই। কিন্তু সেই সময় যদি এই গল্পটা করতে পারতাম উনি প্রচণ্ড খুশি হতেন। এই যে আমি আজকে করে খাচ্ছি, কলকাতার ওপর গান লিখে, কলকাতাকে ভালোবাসে, সেটা মৃণাল সেন না হলে হতই না। আই হেটেড ক‌্যালকাটা একসময়, আমি আমার শ্রোতা বা দর্শকের মতো আমিও এনআরআই হয়ে যেতাম। কিন্তু ওই যে কলকাতা ছেড়ে যাওয়ার আগেই কলকাতাকে মিস করতে শুরু করলাম, এইটা মৃণালদার জন‌্য। এই গল্পটা আমার পেতে সময় লেগেছিল। কারণ একটা জিনিসকে দূর থেকে দেখতে হয়। এতদিন পর্যন্ত মৃণাল সেনকে আমি দূর থেকে দেখতে পাইনি। এখন দেখতে পাই। মজার, ইরেসপনসিবল, অদ্ভুত টাইপের ফাজিল, বোহেমিয়ান এই মানুষটার চেহারা। আমি নিজেকেও খুব ক্রিটিকালি দেখেছি। সেই সব আমি দেখতে পাচ্ছি বলে অনেস্টলি ছবিটা করেছি। ‘চালচিত্র’-র সময় যা যা হয়েছে সেটাই রেখেছি। আগে করলে হয়তো পুজো করার প্রবণতা হত। সেটা করিনি।

মৃণাল সেনের চরিত্রে নিজেই করবেন, এই সিদ্ধান্ত কখন নিলেন?
অঞ্জন দত্ত: লিখতে লিখতেই ঠিক করেছিলাম এটা আমিই করব। আমি মৃণাল সেনকে যতটা আত্মস্থ করেছি, তা কি অন‌্য কেউ করেছে। সারাক্ষণ তাঁর মধ্যে একটা অস্থিরতা চলত। এইটা আরেকজনকে দিয়ে করাতে আমার অশান্তি হত। তার চেয়ে আমি একটু ম‌্যানেজ করে, চেহারা অন‌্যরকম করে, চশমা পরে বের করে দিয়েছি। অন‌্যকে এত বোঝাতে হত– যে এই লোকটা ভেনিসের ফেস্টিভ‌্যালের লোকের সঙ্গে কথা বলছে,
কিন্তু মনে হবে মাছওলার সঙ্গে কথা বলছে। তারা মৃণাল সেনকে অনেক উঁচুতে দেখবে,
আমি তা না।

শাওন চক্রবর্তীর কাস্টিং কীভাবে?
অঞ্জন দত্ত: আমার অনেক বেশি সমস‌্যা হয়েছিল ছবির ‘অঞ্জন দত্ত’-কে নিয়ে। মানে শাওনকে নিয়ে। কারণ, তাকে ইংরেজি জানতে হবে, খুব রোগা হতে হবে, তার্কিক-জেদি হবে, গিটার বাজাতে হবে, কনফিউসড হবে, ইরেসপনসিবল হবে – এটা খুঁজে পেতে আমার সময় লেগেছে। আমি খুঁজেছিলাম এমন অ‌্যাক্টর যে রিসার্চ করেছে, কলেজে পড়ছে। বুদ্ধিমান এবং ফ্রেশ ফেস। অনেক খুঁজে পেলাম শাওনকে। মৃণালদা আমার চুল কেটেছিলেন। আমি ওর দাড়িটা কেটে দিই। তারপর ওকে খুব ইয়ং দেখাচ্ছিল (হাসি)। শাওন খুব ওপিনিয়নেটেড। কমিউনিস্ট। ওকে আমি বলি, তোর পলিটিক্স এখন ভুলে যা। ‘অঞ্জন দত্ত’ সিপিএম ছিল না। কাজেই আমি যে বইগুলো পড়েছি, যে ভাবে কামু-সার্ত্রকে দেখেছি, সেইগুলো পড়। আমি মিমিক করতে বারণ করেছিলাম। বলেছিলাম ট্রাই টু বি এফর্টলেস। বাকিটা ও নিজে খেটে করেছে।
সিনেমাটোগ্রাফার কে কে মহাজনের চরিত্রে সুপ্রভাত দাস আর গীতা সেনের চরিত্রে বিদীপ্তা চক্রবর্তী...
অঞ্জন দত্ত: সুপ্রভাত ভালো হিন্দি বলে। ওকে কে কে মহাজনের ভিডিওগুলো দেখতে বলেছিলাম। আর সিগারেটটা কীভাবে খেত, বলে দিয়েছিলাম। গীতাদিকে দেখে জীবনে অভিনেত্রী মনে হয়নি। শোভা সেন, তৃপ্তি মিত্রকে দেখলে কিন্তু মনে হবে মঞ্চের অভিনেত্রী। গীতাদিকে আমার মনে হয়েছে বউ, রান্না করে, মা এবং একজন ইন্টেলিজেন্ট মহিলা। তো আমি তেমন একজনকেই চেয়েছিলাম। সেইটা বিদীপ্তার মধ্যে এসেছে। আমি আক্ষরিক অর্থে চেহারা মিলিয়ে বায়োপিকে বিশ্বাস করি না।
‘চালচিত্র এখন’ আটের দশক ধরছে ঠিকই। আবার এই সময়েও ঢুকে পড়ছে। মানে ট্রামটা পুরনো, তার জানলা দিয়ে এখনকার শহর এসে যাচ্ছে।
অঞ্জন দত্ত: খুব ভালো ধরেছ। এটা ইচ্ছে করেই করা। যখন প্রথম স্ক্রিপ্ট পড়া হল, আমরা সবাই ভাবছিলাম, আটের দশক কী করে হবে। ফাইনালি নীল পয়েন্ট আউট করে। এটা কি আমরা পিরিয়ড পিস হিসাবে করছি? নাকি এটা করছি, এখনও সম্ভব বলে? এই কলকাতাতে এখনও এরকম একটা লোক, এরকম একটা ছেলেও থাকতে পারে। এখন সম্ভব বলেই তো করছি আমরা। তখন টাইমলেস করে দিতে বলে নীল। ওরা অ‌্যাম্বাসাডর গাড়ি আর টুসি ক‌্যামেরা নিয়ে ঘুরুক না। পিছন দিয়ে অন‌্য গাড়ি এলে অসুবিধা কী! এটা গোদারিয়ান টেকনিক। মৃণালবাবু এটাকে সাপোর্ট করতেন। যে জন‌্য আমরা সামটাইম লিখছি। ১৯৮০ বলছি না। আর পিরিয়ড পিস বানানোর ঝামেলাটা এড়ানো গেছে এক্ষেত্রে। টাকা নেই তো এইভাবে চলো।

এই প্রথমবার আপনি আর নীল মিলিতভাবে প্রযোজনায়। সেটা প্রযোজক পাননি বলে?
অঞ্জন দত্ত: না, নীল প্রথমেই বলেছিল, এটা আমরা করব। তখন দুটো কনসার্ট করে একটা বড় টাকা এসেছিল। প্লাস নিজেদের কিছু টাকা তুলি। নীল বলেছিল, এই টাইমলেসনেস কেউ বুঝতে পারবে না। তোমাকে মৃণাল সেন করতে দেবে না। নতুন ছেলে নেওয়া যাবে না। অনেক সমস‌্যা আসবে। নিজেরা করাই ভালো। হ্যঁা, কষ্ট হয়েছে নিজেরা করতে গিয়ে। সবাইকে কনভিন্স করতে হয়েছে যে কম নাও। যাকে বলেছি মৃণাল সেনকে নিয়ে ছবি করছি, সে কিন্তু রাজি হয়ে গেছে। এটাও কিন্তু এই কলকাতায় সম্ভব হয়েছে। কিন্তু যেটা খরচ হয়েছে, সেটুকু উঠে এলেই হবে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • আর পিরিয়ড পিস বানানোর ঝামেলাটা এড়ানো গেছে এক্ষেত্রে। টাকা নেই তো এইভাবে চলো।
  • লিখতে লিখতেই ঠিক করেছিলাম এটা আমিই করব।
Advertisement