নতুন ছবি মুক্তির সময় জীবন-কেরিয়ার-সম্পর্ক নিয়ে অকপট কথোপকথনে শোলাঙ্কি রায়। শুনলেন শম্পালী মৌলিক
এই প্রশ্নটা অনেকদিন করব ভেবেছি। শোলাঙ্কি মানে কী?
শোলাঙ্কি: (হাসি) শব্দটার অ্যাজ সাচ কোনও মানে নেই। এটা একটা সাম্রাজ্যের নাম। আমার বাবা, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘রাজকাহিনী’ থেকে নামটা রেখেছিলেন। ওখানে একটি গল্পে বাপ্পাদিত্য এবং শোলাঙ্কি রাজকুমারীর ডায়নেস্টির কথা ছিল। যে ডায়নেস্টি রাজস্থান-গুজরাতের। তো ওদের পদবি ছিল শোলাঙ্কি, যেটা ‘রাজকাহিনী’-তে রয়েছে। সেখানে শোলাঙ্কি রাজকুমারীর উল্লেখ আছে। আর অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর বানানটা তালব্য ‘শ’ দিয়েই লিখতেন, তাই আমার নাম তেমনি লিখি।
বুঝলাম। কিন্তু রাজকুমারী এবং নায়িকা দুটোই যদি ধরি, তারা কিন্তু নিজেরা গাড়ি চালায় না। আপনি ড্রাইভ করেন। ঝুঁকি মনে হয়?
শোলাঙ্কি: এতদিন নিজে গাড়ি চালাতাম না কিন্তু যবে থেকে উপলব্ধি করেছি, সম্পূর্ণ স্বাধীন হওয়ার জন্য গাড়ি চালানো খুব জরুরি, শিখে ফেললাম। আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল মৈনাকের (ভৌমিক) ছবিতে কোনও ছেলে গাড়ি চালায় না। সব মহিলারাই গাড়ি চালায়। ‘ভাগ্যলক্ষ্মী’-তে আমার চরিত্রও তাই। এই সব মিলিয়ে হল।
অর্থাৎ নিজের জীবনের স্টিয়ারিং এখন নিজের হাতে?
শোলাঙ্কি: (হাসি) স্টিয়ারিংয়ের পিছনে থাকাটা খুব জরুরি।
সেখানে বলব, ২০২৩ আপনার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ বছর গিয়েছে, ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে। আর ২০২৪ কাজের ক্ষেত্রে খুব তাৎপর্যপূর্ণ। এই বিগত সময়ে বড় বদল এসেছে।
শোলাঙ্কি: বদল এসেছে ঠিকই। এবার তাই স্টিয়ারিং নিজের হাতে। ওটা খুব জরুরি।
বৈবাহিক সম্পর্কে ইতি টেনেছেন ’২৩ সালে। সেটা বড় সিদ্ধান্ত। তারপর কি মনে হচ্ছে জীবন অন্যখাতে বইছে?
শোলাঙ্কি: এরকম কিছু ভাবছি না। অনেকদিন পরে ফাইনালি টেলিভিশন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে পর পর ছবি করছি। থ্যাঙ্ক গড, ভালো ছবি পাচ্ছি। এই মুহূর্তে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে খুব যে কনসেনট্রেট করছি, তা নয়। ছোটবেলায় ভাবতাম সম্পর্কই সব। যত বয়স হচ্ছে মনে হচ্ছে জীবনে আরও কিছু আছে, নিশ্চয়ই সম্পর্ক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাট ইট’স পার্ট অফ লাইফ।
গত বছর কাজের নিরিখে আপনার বেশ ভালো গিয়েছে। ‘শহরের উষ্ণতম দিনে’ সাফল্য পেয়েছে। ‘বোকা বাক্সতে বন্দি’- সিরিজটাও অনেকের ভালো লেগেছে।
শোলাঙ্কি: হ্যাঁ, প্রশংসা পেয়েছি।
সিনেমা যে ‘বাবা বেবিও’-র পর বেশি করেছেন, তা নয়...
শোলাঙ্কি: কারণ, ‘বাবা বেবি’-র পর টেলিভিশন করছিলাম, প্রায় দেড় বছর। সেক্ষেত্রে সিরিয়াল করতে করতে একটা সিনেমাই করতে পেরেছি, সেটা হচ্ছে ‘শহরের উষ্ণতম দিনে’। তখন বুঝেছিলাম সিনেমা ছকে বেঁধে করা যায় না। অনেকটা সময় শুটিং করতে হয়। ফলে দুটো একসঙ্গে সম্ভব ছিল না। একটাকে বেছে নিতেই হত। তো ধারাবাহিক ছাড়লাম।
এখন সিনেমা-সিরিজ মিলিয়ে চলছে আপনার। সামনে ১০ জানুয়ারি ‘ভাগ্যলক্ষ্মী’ রিলিজ। থ্রিলার, তবে কমেডি মেশানো।
শোলাঙ্কি: থ্রিলার আর কমেডিটা খুব সিচুয়েশনাল। অস্বস্তির মধ্যেও দর্শক হাসবে।
ট্রেলার তো লোকজনের মনোযোগ কেড়েছে। ছবিটা নিয়ে কতটা আশাবাদী?
শোলাঙ্কি: খুবই আশাবাদী। যখন শুট করছিলাম বুঝতে পারিনি এগজ্যাক্টলি মৈনাকদা কীভাবে ভেবে ডিজাইন করেছে। শুধু মৈনাকদাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম খুব ‘গোর’ হয়ে যাবে না? মৈনাকদা বলল “গোর’-এর খুব বেশি আর কম আবার কী হয়! পরে ট্রেলার যখন কাটব তুই বুঝতে পারবি।”
দেখে আমি বুঝলাম পরে, যে এটা বাঙালি দর্শককে কতটা নাড়া দেবে। যার ফল আমি প্রচুর ফিডব্যাক পেয়েছি। ইন্ডাস্ট্রির লোকজনও ফোনে-মেসেজে জানিয়েছে।
শোলাঙ্কি মানে দর্শকের চোখে মিষ্টি মেয়ে। চরিত্রটাও নরম স্বভাবের হবে, হালকা রোমান্স থাকবে ছবিতে। তার বাইরে বেরচ্ছে এই ‘ভাগ্যলক্ষ্মী’।
শোলাঙ্কি: অনেকটাই বাইরে। টানা টেলিভিশন করলে মুশকিল যেটা হয়, একটা ইমেজ দর্শকের মধ্যে তৈরি হয়। ইন জেনারেল মানুষ আমাকে যেভাবে দেখেছে, বা ইন্টারভিউ শুনেছে, তাতে একটা ধারণা আমার সম্পর্কে তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেই ধারণার পুরোটাই তো আমি নই। এই সিনেমাটা এবং পরবর্তীকালে আরও যদি চরিত্র আসে, যেটা আমি কখনও করিনি, সেই চরিত্রের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে রিলেট করতে পারব না, তেমন চরিত্র আমি বেশি করতে চাই। তাহলে নিজেকে আরও এক্সপ্লোর করতে পারব।
এই প্রথমবার ঋত্বিক চক্রবর্তীর সঙ্গে জুটিতে, যিনি ইন্ডাস্ট্রির সেরা অভিনেতাদের একজন।
শোলাঙ্কি: আমার তো মনে হয়, ভারতের সেরা অভিনেতাদের একজন ঋত্বিকদা। শুধু ঋত্বিকদা এত প্রচারবিমুখ, সেটা মুশকিল।
ঋত্বিকের সঙ্গে কাজ নার্ভাস করেছে, না কি অনুপ্রেরণা দিয়েছে?
শোলাঙ্কি: প্রচণ্ড ইন্সপায়ার করেছে। যেটা বললেন অন্যতম সেরা অভিনেতা হলেও, ঋত্বিকদা সেটা নিজের সঙ্গে ক্যারি করে না। ওই ওজন যেহেতু ক্যারি করে না মানুষটা, তাই আশপাশের মানুষ খুব কমফর্টেবল থাকে। এবং ঋত্বিকদা খুব ভালো অভিনেতা হওয়ার পাশাপাশি, অত্যন্ত খঁাটি মানুষ। আলাদা করে সিন নিয়ে আমরা ক্লাস করেছি তা নয়। ঋত্বিকদা এত মন দিয়ে কাজ করে, আমি দেখেই কত শিখেছি কী বলব! মৈনাক-ঋত্বিকদা দুজনের সঙ্গে কাজ করেই খুব ভালো লেগেছে।
বেশ কিছু দিন তো মুম্বইতে রইলেন। অডিশন দিচ্ছেন?
শোলাঙ্কি: আমি তো মুম্বই-কলকাতা যাতায়াতের মধ্যেই রয়েছি। হ্যঁা, ভালো-ভালো অডিশনই দিচ্ছি। এবার বম্বে তো সাগরের মতো। নদীর পাড় থেকে গিয়ে পড়েছি। সেটা একটু সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সেটা দিতে আমার কোনও অসুবিধা নেই। এই কাজগুলো শেষ করে আবার মুম্বই যাব। যখন ক্লিক করার করবে, ভালোভাবে অডিশন দিয়ে যাই। অত চাপ নিচ্ছি না।
আপনার চেহারা এমন যে এখনও অনায়াসে কলেজ পড়ুয়া বলা যায়, আবার হাউজওয়াইফ বলেও চালানো যায়।
শোলাঙ্কি: ওটা অ্যাডভান্টেজই বলব, বিভিন্ন রেঞ্জের চরিত্র করা যায়। যদি অ্যাক্টরকে দেখেই রিড করে ফেলা যায়, সেটার কোনও মজা নেই। বয়স বা তার মাথায় কী চলছে, অ্যাক্টরকে
দেখে বোঝা না গেলেই তাকে ঘিরে মিস্ট্রি থাকে।
আচ্ছা, আপনার সঙ্গে সোহম মজুমদারকে নিয়ে তো এত কথা শোনা যায়। কী বলবেন? একই দিনে আপনাদের দুজনের ছবিও আসছে আজ।
শোলাঙ্কি: আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে এত প্রশ্ন লোকজনের! এতে আর বলার কিছুই নেই। আমরা বন্ধু। আই উইশ হিম অল দ্য বেস্ট। মাঠে দেখা হবে (হাসি)।