সন্দীপ্তা ভঞ্জ: ফের বিতর্কে উত্তরপাড়ার সেলেব্রিটি বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিক। এবার তাঁর বিরুদ্ধে চিকিৎসক নিগ্রহের মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনে বুধবার দিদাশাশুড়িকে নিয়ে চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন সস্ত্রীক কাঞ্চন মল্লিক। অভিযোগ, সেখানেই নাকি বিধায়ক দাদাগিরি দেখিয়েছেন! এপ্রসঙ্গে স্ত্রী শ্রীময়ী চট্টরাজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় সংবাদ প্রতিদিন ডট ইন-এর তরফে। অভিনেত্রীর কথায়, "প্রভাব খাটাতে হলে দু টাকার টিকিট কেটে কেন চিকিৎসা করাব? গত মে মাসে দিদার চিকিৎসার সময়ে আমি ওই হাসপাতালের প্রশংসা করে বড় পোস্ট করেছিলাম। এবার অযাচিতভাবে দুর্ব্যবহারের শিকার হলাম।"
ঠিক কী ঘটেছে? শ্রীময়ী বললেন, "দিদা ওই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন মে মাসে। আজকে আবারও চেকআপ ছিল। সেইজন্যই দিদাকে নিয়ে যাওয়া। চর্মরোগ বিভাগে দেখানোর পর ওখান থেকে বলল যেহেতু মেডিসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে, তাই মেডিসিন বিভাগে গিয়ে দেখাতে। কারণ দিদার যেহেতু হাইসুগার রয়েছে, ইনস্যুলিন নেন, তাই আগের দেওয়া ওষুধগুলো চলবে কিনা, সেটা জিজ্ঞেস করতেই গিয়েছিলাম। বলা হল, তিনজন রোগী দেখে আমার দিদার চেকআপ করা হবে। দিদা তখন হুইলচেয়ারে বসে। মধ্যিখানে আরেকজন রোগী ঢুকে গেলেন। ছোট প্যাসেজ হওয়ায় আমরা দিদাকে বের করে নিয়ে যাই। অপেক্ষার পর দিদার রিপোর্টগুলো নিয়ে উনি দেখলেন। এবং দেখেই রূঢ় ভাষায় জিজ্ঞেস করলেন- এটা তো চর্মরোগের বিষয়, মেডিসিন বিভাগে কেন এসেছেন? চেকআপ তো হয়ে গিয়েছে। আমি আর দেখে কী করব! আমি তখন বললাম, আপনাকে রেফার করেছে, তাই এলাম। কাঞ্চন পাশ থেকে বলল- স্যর, একটু যদি প্রেশারটা চেক করে দেন। এতেই ওই ডাক্তার চটে গিয়ে পালটা বলেন- তাহলে আপনি ঠিক করে দিন, কী কী চেক করব? সুগার চেক করব না প্রেশার চেক করব! কাঞ্চন 'সরি' বলে বিষয়টা সেখানেই মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করল। তবে এখানেই মেটেনি বিষয়টা। ওই চিকিৎসকের বোধহয় কোনও রাগ ছিল আমাদের উপর। প্রথম থেকেই রূঢ় আচরণ করে যাচ্ছিলেন।"
দিদার সঙ্গে শ্রীময়ী চট্টরাজ
এরপরই অভিনেত্রীর সংযোজন, "তার পর আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম শুধু- দিদার আগের ওষুধগুলোই চলবে কিনা। এটাই বোধহয় আমার অপরাধ! উনি ততোধিক চিৎকার করে আমাকে বললেন, আপনি এমবিবিএস পাস করা ডাক্তার? তাহলে চেয়ারে বসুন। এরপর ওঁর পাশে বসে থাকা অন্য আরেকজন চিকিৎসক আমাদের প্রেসক্রিপশন করে দিয়ে কী কী টেস্ট করাতে হবে? সেগুলো বলে দেন। আড়াইটের সময় বন্ধ হয়ে যাবে বলে পরের দিন যেতে বলেন। এবার আমার প্রশ্ন, প্রভাবই যদি খাটাব, তাহলে দু' টাকার টিকিট কেটে সবার মতো লাইন দিয়ে ট্রপিক্যালে দেখাব কেন? আমাদের যদি প্রভাব খাটাতে হত, তাহলে দিদা দশ দিন যখন ভর্তি ছিলেন ওই হাসপাতালে, তখনই তো দেখাতে পারতাম। আমি তো ওদের প্রশংসা করে আগে একটা পোস্টও করি। আর যে ডাক্তারের কথা বলছি, উনি আমার দিদা ভর্তি থাকাকালীন একদিনই শুধু রাউন্ডে এসেছিলেন। আসলে সবজায়গায় কিছু মানুষ রাজনীতির রং দিতে ভালোবাসে।"
ওই চিকিৎসকের আচরণে ক্ষুব্ধ শ্রীময়ীর মত, "আমার কাছে অন্যায়টা অন্যায়ই! একজন ডাক্তারের কাছে সব রোগী সমান হওয়া উচিত। সে কারও বাড়ির পরিচারিকাও হতে পারে কিংবা বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিকের আত্মীয়া আবার কোনও বিজেপি বিধায়কেরও স্বজন হতে পারেন। আমার দিদার পরিবর্তে আজকে অন্য কেউ ওই জায়গায় থাকতে পারতেন, তখনও কি তাঁদের সঙ্গে এরকমই ব্যবহার করা হত? উনি চারশোটা রোগী দেখেন, সেটা ওঁর দায়িত্ব। কাঞ্চন আজকে বিধায়ক বলে ওঁর রাজনৈতিক পরিচয়কে হাতিয়ার করা হচ্ছে। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমি প্রতিবাদ করবই।"
