ব্যক্তিগত জীবনের ওঠাপড়া, ট্রোলিং এবং নতুন ছবি নিয়ে সংবাদ প্রতিদিন-এর আড্ডায় অকপট পার্নো মিত্র। শুনলেন শম্পালী মৌলিক।
‘অঙ্ক কি কঠিন’-এর ট্রেলার দেখলাম। স্বপ্ন আর বাস্তবের মাঝামাঝি থাকার কথা বলা হয়। আপনার জীবন এখন কোথায় দাঁড়িয়ে?
- ওখানেই মোটামুটি (হাসি)। না, না বাস্তবেই দাঁড়িয়ে। ৫ বছর আগেও যা ছিলাম, এখনও তাই আছি। সংসার করছি, কুকুর দেখছি, ছানা দেখছি, বাড়িতে থাকছি। আমার কেদার (পোষা ল্যাব্রাডর) মারা গেছে, এখন একটা ফ্রেঞ্চ বুলডগ আছে, লোলা ওর নাম। খুব দুষ্টু। একবছর বয়স ওর। এইসব নিয়েই থাকি।
জীবনের অঙ্ক কী বলছে?
- স্কুলে যে অ্যালজেবরা পড়তাম, তার থেকেও কঠিন। কারণ, এর শেষ উত্তর পাবে না। কষেই যেতে হবে। তার মধ্যে কিছু ভালো মুহূর্ত, কিছু স্মৃতি আঁকড়ে ধরে রেখে দিতে হয়।
২০০৭-এ টেলিভিশন করা শুরু আর ২০১১-এ ‘রঞ্জনা আমি আর আসব না’ রিলিজ। আর এখন ২০২৫ সাল। আজকে ফিরে তাকালে খুশি?
- মানুষ ভীষণ লোভী, কোনও কিছুতেই সন্তুষ্ট না, আমিও সকলের মতোই। মনে হয়, আরেকটু হলে ভালো হত। এছাড়া সব মিলিয়ে ঠিকঠাক আছি।
সৌরভ পালোধীর 'অঙ্ক কি কঠিন'-এর ঝলক দেখলেই বোঝা যায় বাচ্চারা ছবির কেন্দ্রে। ২৩ মে রিলিজ।
- ওদেরই ছবি। আমরা সাপোর্টিং রোলে।
সেক্ষেত্রে ছবিটা করতে রাজি হলেন কেন?
- এত মিষ্টি গল্প, স্ক্রিপ্ট শুনে ভালো লেগেছিল। আমার এটা করার কথা ছিল না। এমনি এই হাউসে এসেছিলাম, মিটিং চলছিল। কয়েকমাস পরে রানাদা আমাকে বলে, ‘এই তুই করবি?’ তার পর সৌরভ স্ক্রিপ্ট শোনাতে চায়। আমার আসলে রোমান্টিক স্ক্রিপ্ট খুব ভালো লাগে। আমার যে গল্পটা রয়েছে, ছোটদের স্বপ্নটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা রয়েছে আমাদের। কিন্তু আমাদের গল্পে আমরা কাজল (পার্নো) আর শাহরুখ (প্রসূন), আমার লাভার্স। খুব মিষ্টি ইকুয়েশন। প্রসূন আদতে থিয়েটার-অ্যাক্টর। ক্যাবলা বয়ফ্রেন্ডকে ডমিনেট করে কাজল, ও নার্স। আর ছেলেটি সাইকেলে করে জিনিসপত্র ডেলিভারি দেয়। প্রচণ্ড গভীর ভালোবাসা ওদের মধ্যে। খুব পিওর গল্পটা, সে জন্য আমি না করতে পারিনি।
নিন্দুকে বলবে, প্রযোজকের আপনি ফেভারিট। ‘বনবিবি’-র পরেই আবার এই ছবিতে। কী বলবেন?
- লোকে বলবে, কী আর করব। থ্যাঙ্ক গড, মানুষটা আমাকে কাজ দেয় (হাসি)।
এক সময় আপনি মোস্তাফা সরওয়ার ফারুকির ‘ডুব’-এ কাজ করেছেন। ইরফান খানের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেছেন। সেই ইরফান অভিনীত ‘পিকু’ ফের মুক্তি পাচ্ছে আজ। আপনি কি ছবিটা দেখতে চান?
- ওহ্! তাই? জানতাম না। হ্যাঁ, ‘পিকু’ আমার খুব পছন্দের ছবি। সুযোগ পেলে ডেফিনিটলি যাব। ওই স্মৃতি, ‘ডুব’-এর দিনগুলো বিশাল পাওনা অভিনেত্রী হিসাবে। ওরকম মাপের একজন অভিনেতার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ তো রোজ রোজ আসে না। আর আসবেও না। ঋত্বিকের (চক্রবর্তী) সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাটাও খুব স্পেশাল আমার কাছে। মনে করি ঋত্বিক শুধু পশ্চিমবঙ্গের নয়, ভারতের শীর্ষস্থানীয় অভিনেতাদের একজন। তাহলেও বলব, ইরফান খানের সঙ্গে কাজ সত্যিই খুব স্পেশাল হয়ে থাকবে।
কখনও মনে হয়, ব্যক্তিগত জীবনের স্ট্রাগল, বাবার চলে যাওয়া, মায়ের অসুস্থতা, এগুলোর সঙ্গে আপনাকে খুব বেশি যুদ্ধ করতে হয়েছে?
- দেখো যুদ্ধ তো করতেই হয়। ছোট-বড় প্রত্যেকের নিজস্ব যুদ্ধ আছে। আমার বাবা মারা যাওয়ার পর আমি মানুষটা আসলে একদম বদলে গেছি। সেইটা হয়তো অনেকে গ্রহণ করতে পারেনি। জীবন থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি মোড় নেয় বাবার মৃত্যুর পর। অতটা দায়িত্ব তার আগে কোনওদিন নিতে হয়নি। তবে ওই, শিখছি।
সম্প্রতি আপনার অভিনীত ‘ভোগ’ সিরিজটা এসেছে। বেশ এক্সট্রিম রিঅ্যাকশন। অনেকের খুব খারাপ লেগেছে, কারও আবার ভালোও লেগেছে। আপনাকে সমাজমাধ্যমে ট্রোল করা হচ্ছে। কেউ বলছে ‘দেবী মাতঙ্গী’-র লুক পছন্দ হয়নি। কেউ বলছে ‘সানডে সাসপেন্স’-এ এই স্টোরি অনেক ভালো লেগেছিল। কী বক্তব্য?
- ‘সানডে সাসপেন্স’ অডিও স্টোরি। আমিও শুনেছি। আমারও খুব ভালো লেগেছিল। প্রিয় গল্প। অভীকদার (সরকার) সঙ্গে দেখা হওয়ার পর বলেছিলাম, আমি ফ্যান। ওঁর এই সিরিজটা ভালো লেগেছে। বাকি যারা যা বলেছে, ঠিক আছে। কিন্তু কেউ বলছে অভীক সরকারের কাছে ক্ষমা চাওয়ার কথা। ওঁর তো ভালো লেগেছে শো-টা। ক্ষমা চাইব কেন! (হাসি) এনিওয়ে ডাজ নট ম্যাটার। এখন আমরা যে যুগে, প্রচুর লোকের নানা মতামত, মন্তব্য। আর অডিও স্টোরি ফরম্যাট তো আলাদা, মানুষের কল্পনার জায়গা থাকে সেখানে। সিরিজ তো আলাদা মিডিয়াম। দশ কোটি মানুষ আমাদের, তাহলে তো এত কোটি ভার্সন বানাতে হয়! অত বাজেট নেই। সকলকে খুশি করা সম্ভব নয়। তবে সবার নিজস্ব কল্পনার জায়গা থাকে, সেটা আমি সম্মান করি।
আপনাকে যাঁরা ট্রোল করছেন, তাঁদের উদ্দেশে কী বলবেন?
- তাঁদের উদ্দেশে চুমু দিলাম (হাসি)।
ফাইনালি, ‘অঙ্ক কি কঠিন’ নিয়ে কতটা আশাবাদী?
- খুব সাধারণ গল্প। স্বপ্নের কথা বলে। আর আমরা সবাই বড় হয়ে গিয়ে, স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছি। কিন্তু এই ছবিটা দেখে মনে হবে, স্বপ্ন দেখা অত শক্ত নয়। দেখা যেতেই পারে। কারণ স্বপ্নে কোনও ট্যাক্স নেই। এই যোগটা অনুভব করলে, দর্শকের ভালো লাগবে। বাচ্চাগুলো খুব সুইট আর রিয়্যালিস্টিক।
পার্নো কি এখনও স্বপ্ন দেখেন?
- কম দেখি। আসলে স্বপ্নগুলো বদলে গিয়েছে। এখন হয়তো ভাবি সমুদ্রের পাশে কবে একটা বাড়ি হবে। শান্তিতে থাকার কথা ভাবি। দূরে চলে যাওয়ার কথা ভাবি। আর ভাবি, ইনস্টাগ্রামটা সবার আগে ডিলিট করি।
সমুদ্র বলায় মনে এল, বিচ ওয়্যার পরার জন্যও আপনাকে লোকে কত কী বলে। তার পরেও আপনি থোড়াই কেয়ার?
- সমুদ্রে আমি কী পরে যাব বলো তো? সালওয়ার কামিজ না ম্যাক্সি? (হাসি)