শম্পালী মৌলিক: ফিল্ম ফেস্টিভাল চলাকালীন এটাই প্রথম ছুটিরবার। বিকেলের পর থেকেই জনস্রোত নন্দন-রবীন্দ্রসদন চত্বরে। সবচেয়ে বড় চমক, সন্ধে নামার মুখেই উৎসবে যোগ দিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। একদম হঠাৎ করেই পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তীকে ফোন করে চলে আসেন তিনি নিছকই ছবি দেখতে। ফেস্টিভ্যাল চত্বরে প্রসেনজিৎকে নস্ট্যালজিক শোনাল। ‘একত্রিশ বছর ধরে এই ফিল্ম ফেস্টিভালের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। একসময় দৌড়ে দৌড়ে ছবি দেখতাম। নন্দন, রবীন্দ্রসদনে মাটিতে বসেই ছবি দেখতাম বেশিরভাগ সময়। ছোটবেলায় রেবতিজি, কমল হাসনের মতো ব্যক্তিত্বদের দেখেছি উৎসবে। ব্যাজ লাগিয়ে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। ফেস্টিভালে ছবির দেখার মজাই আলাদা। আমাদের বেড়ে ওঠার সময়ে ছবি দেখার এত আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম ছিল না,’ আক্ষেপ তাঁর।
তিনি আরও যোগ করেন, ‘এখন কলকাতা আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভাল বললেও বাংলার সঙ্গে আঞ্চলিক ভাষার অন্যান্য ছবিগুলো যেভাবে আনা হচ্ছে সেটা আমার কাছে খুব ভালোলাগার জায়গা। গৌতমদা যতদিন আছেন তিনিই আমাদের চেয়ারম্যান। তিন থেকে পাঁচ বছর লাগে একজন চেয়ারম্যানের যোগাযোগ তৈরি হতে। একটা ফেস্টিভাল শেষ হলেই পরের বছরের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়, নয়তো এই দশ দিনের মহাযজ্ঞ সম্ভব নয়। আমি এখানে একজন দর্শক। যদি মনে হয় এককোণে দাঁড়িয়ে ছবি দেখতে পারব, সেইভাবেই দেখব।’ ফেডারেশন প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, সবাই আসা-যাওয়া করবে, যার যখন সময় সুযোগ হবে। ফেডারেশন তো আমাদেরই। তারা নিশ্চয়ই আসবে। গত পরশুদিন প্রিয়াতে ‘অরণ্যের দিনরাত্রির’ ঝকঝকে রেস্টোর্ড ভার্সন দেখে তিনি মুগ্ধ।
‘মিস্টার ইন্ডাস্ট্রি’ ফিরে গেলেন ঋত্বিক ঘটকের স্মৃতিচারণায়। প্রবাদপ্রতিম পরিচালকের শতবর্ষ উদযাপিত হচ্ছে এবার। কিংবদন্তির প্রসঙ্গে বলেন, “ঈশ্বরের আশীর্বাদে বেশ কিছু ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বার বার গিয়েছি। সে কান কিংবা টরন্টো, যেখানে বুদ্ধদার ছবি সিলেক্টেড হয়েছিল, সেখানে গিয়েছিলাম। তিনজন মানুষের ছবিই তো ইন্ডিয়ান সিনেমার প্যাভেলিয়নে রাখা হয়। ঋত্বিক ঘটকের কথা বলছি, সিনেমার ঈশ্বর তিনি। আমার সৌভাগ্য হয়েছে তাঁর কোলে চাপার। আমাদের বম্বের বাড়িতে বাবা নিয়ে গিয়েছিলেন ঋত্বিক জেঠুকে। তখন আমার ছয়-সাত বছর বয়স। অসামান্য একটি কাজ করেছিলেন উনি। বাবাকে এজন্য ধন্যবাদ। ‘রক্তাক্ত বাংলা’ বলে একটা তথ্যচিত্রের উদে্যাগ নিয়েছিলেন। যেখানে নার্গিসজি মাদার ইন্ডিয়া করেছিলেন, বাবা সোলজার বা আর্মি করেছিলেন।” কিছুক্ষণের জন্য প্রসেনজিৎ যেন ফিরে গেলেন কয়েক যুগ আগে। এ দিন চন্দ্রাশিস রায়ের ‘পড়শি’ ছবিটি উপস্থাপন করেন প্রসেনজিৎ, সঙ্গে ছিলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান ফেডারেশনের সঙ্গে আর কোনও আইনি লড়াইয়ে যেতে চান না। উৎসবে এসেছিলেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়ও।
