শম্পালী মৌলিক: হিন্দি ছবি 'উইডো'স শ্যাডো'র মূল বিষয় জাতপাতের বৈষম্য, মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক ও সমকামিতা। এই ছবির কলকাতা কানেকশন পরিচালক সুমন অধিকারী ও প্রধান অভিনেত্রী সংকলিতা রায়। প্রথম ছবিতেই অন্য ধরনের বিষয় বেছে নিয়েছেন পরিচালক। সুমন অধিকারীর ফিল্ম 'উইডো'স শ্যাডো' আসবে এপ্রিলের মধ্যভাগে। দুই নারী ছবির কেন্দ্রে। যেখানে জাতপাতের বৈষম্য, সম্পর্কের জটিলতা এবং সমকামিতার মতো বিষয়ের দিকে আলোকপাত করেছেন সুমন।

ফিল্ম মেকিংয়ের শুরুতেই এমন ভাবনার নেপথ্যে কী? পরিচালক বলছেন, "ফিচার ফিল্মের ভাবনা ছিলই। এই ছবির প্রধান চরিত্র দুজন কমবয়সি মেয়ে, যাদের একজন বিধবা। আঁখি (পলক কায়াথ) স্বামীকে হারানোর পর বাড়ি থেকে তাকে বিধবা আশ্রমে চলে যেতে বলা হয়। কারণ, তার বাড়িতে বোনের বিয়ে। আশ্রমে যাওয়ার পর কাজলের (সংকলিতা রায়) সঙ্গে তার আলাপ হয় ঘটনাচক্রে। কাজল তখনও বিধবা নয়। স্বামীর দ্বারা অত্যাচারিত মেয়েটি। এই দুজনের দেখা হয় শ্মশানে। একদিকে আঁখি ব্রাহ্মণ পরিবারের কন্যা অন্যদিকে কাজল ডোম। এই মেয়েটির ডোম হয়ে ওঠারও নেপথ্যেও কাহিনি রয়েছে। দুজনের আলাপ গাঢ় হয় ক্রমশ, যার সূত্রপাত একটি ঘটনায়, যেখানে কাজল আঁখিকে বাঁচায়। তার পর ধীরে ধীরে শ্মশানের নিরালায় সময় কাটাতে গিয়ে এই দুজনের বন্ধুত্ব জোরালো হয়। ক্রমশ তাদের রসায়ন এমন জায়গায় পৌঁছয়, যা আদতে লিঙ্গ নিরপেক্ষ। উদয়পুর অঞ্চলের প্রেক্ষাপটে নিম্নবিত্ত পরিবারের দুটি মেয়ের এভাবেই কাছাকাছি আসা। তারা নিজেরাও জানত না, এভাবে ভালোলাগা তৈরি হয়। যে প্রেক্ষাপটে তাদের জীবনযাপন, সেখানে জাতপাতের বৈষম্য ঘোরতর। ফলত, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তাদের যাপন। গল্প এগোলে বোঝা যাবে তাদের জীবন কোনদিকে যায়।"
ছবিটির শুটিং হয়েছে উদয়পুরে। এই হিন্দি ছবির দুই জোরালো বাঙালি যোগ পরিচালক সুমন এবং প্রধান অভিনেত্রী সংকলিতা। সুমন প্রায় আট বছর হল মুম্বই নিবাসী। সংকলিতাও মুম্বইয়ে থাকেন, তবে তাঁর শিকড়ও কলকাতায়। সুমন সবসময়ই একটু অন্যরকম বিষয় নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন। তাঁর আরও একটি ছবির শুটিংও হয়ে গিয়েছে, যার কাজ তিনি নর্থ-ইস্টে করেছেন। তবে আপাতত পাখির চোখ 'উইডো'স শ্যাডো'। সংকলিতা ও পলক ছাড়া অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন পৃথ্বীরাজ দেশাই, অবনী নাগর, পল্লবী ভাট, নন্দিতা পুরোহিত প্রমুখ। পরিচালক ছবির মাধ্যমে মানুষের কাছে বার্তা রেখে যেতে চান। এর আগে বেশ কিছু শর্ট ফিল্ম করেছেন। কলকাতায় একসময় থিয়েটার করতেন সুমন, সেই থিয়েটার গ্রুপে সংকলিতাও যুক্ত ছিলেন। যে কারণে, পরিচালক ও অভিনেত্রীর যোগাযোগের জায়গাটা দৃঢ়। এই ছবিটি প্রযোজনা করেছেন সুবীর দত্ত ও শুভম নাগর, সঙ্গে সংকলিতা ও পরিচালক। সেন্সরের ছাড়পত্র পেতে বেগ পেতে হয়েছিল একসময়, অবশেষে 'এ' সার্টিফিকেট প্রাপ্ত হয়। ১৮ এপ্রিল প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পাবে। এই ছবিতে গান গেয়েছেন শুভা মুদগল, কবিতা শেঠ, রিচা শর্মা। গান লিখেছেন এবং মিউজিক করেছেন পরিচালক সুমন নিজেই। গল্পেই আন্দাজ করা যায়, এই সিনেমা প্রান্তিক শ্রেণির কথা যেমন বলবে, তেমনই ভালোবাসা কীভাবে সামাজিক বিধিনিষেধের ঊর্ধ্বে উত্তীর্ণ হতে পারে সে কথাও সামনে আনবে। এবার অপেক্ষা ছবি মুক্তির।