স্টাফ রিপোর্টার: একজনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ড্রেসিংরুম ভাগ করে নিয়েছেন তিনি, দেখেছেন খুব কাছ থেকে। অন্যজনও যে তাঁর অন্যতম প্রিয়, সেকথা অজানা নয় ক্রিকেট বিশ্বের।
প্রথমজন ভিভ রিচার্ডস (Viv Richards), দ্বিতীয়জন বিরাট কোহলি। আর তিনি ক্লাইভ লয়েড, দু’বারের বিশ্বজয়ী ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক। বিশ্বত্রাস ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের নেতা। কিংবদন্তি ক্রিকেটার। তাই ভিভ এবং বিরাট, অতীত ও আধুনিক ক্রিকেটে শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার দুই ক্রিকেটারের তুলনা করার জন্য তাঁর থেকে যোগ্য ব্যক্তি কেই বা আছে এই ধরাধামে? কিন্তু তিনি, ক্লাইভ লয়েড, দু’জনের মধ্যে কোনও তুলনায় যেতে নারাজ। সরাসরিই বলছেন, “ভিভ এবং বিরাটের (Virat Kohli) কোনও তুলনাই হয় না। দু’জন আলাদা মানুষ, আলাদা ধরনের ক্রিকেটার। তবে একটা মিল আছে, দু’জনেই দুর্দান্ত ক্রিকেটার। ওরা এমন প্লেয়ার যাদের দেখার জন্য সাধারণ মানুষ অর্থ ব্যয় করে।”
[আরও পড়ুন: নিজের মৃত্যু কি আগেই বুঝতে পেরেছিলেন বিবেকানন্দ! কী হয়েছিল শেষ দিন?]
তুলনা করলেন না বটে। তবে বিরাট-মুগ্ধতাও লুকিয়ে রাখেননি লয়েড (clive lloyd)। সেটাই যেন উচ্ছ্বল ঝর্ণার মতো বের হয়ে এল শচীন তেণ্ডুলকরের (Sachin Tendulkar) শত শতরানের রেকর্ড ভাঙা প্রসঙ্গে। ক্রিকেট ঈশ্বরকে পিছনে ফেলার বিচারে ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তির বিরাট বাজি কোহলিই। “দেখুন, বিরাট কতদিনে শচীনের একশো সেঞ্চুরির রেকর্ড ভাঙবে, তা তো বলা সম্ভব নয়। তবে যে ফর্মে ও আছে তাতে আমি নিশ্চিত, ভাঙতে বিশেষ সময় লাগবে না। এখনও অনেকদিন ও খেলবে। আরও অনেক রেকর্ড গড়ায় মতো সময় ওর হাতে আছে। সবচেয়ে বড় কথা, ও শচীনের রেকর্ড ভাঙতে পারলে আমি খুশিই হব,” বলছিলেন লয়েড।
অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘একম অ্যাওয়ার্ড নাইটস’ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলকাতার এক হোটেলে উপস্থিত হয়েছিলেন লয়েড। সেখানে উদ্যোক্তাদের তরফে ‘অ্যাডামাস জীবনকৃতি সম্মান’ দেওয়া হয় প্রাক্তন বিশ্বজয়ী অধিনায়ককে। সেখানেই ক্রিকেটের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে অকপট লয়েড। বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টির বাড়বাড়ন্ত নিয়ে তিনি যে রীতিমতো বিরক্ত, বুঝিয়ে দিলেন। বললেন, “আমি তো আগেই বলেছি টি-টোয়েন্টি প্রদর্শনী, টেস্টই আসল পরীক্ষা। উঠতি ক্রিকেটাররা শুধুই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে ডাক পাওয়ার মতো ক্রিকেট খেলছে। সেটা আমার মোটেই পছন্দ নয়। আমি টেস্ট দেখতে পছন্দ করি। অন্তত ৩ টেস্টের সিরিজ হওয়া প্রয়োজন। সেখানে এখন তো কোনওরকমে দু’টো ম্যাচেই সিরিজ শেষ করে দেওয়া হচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে না কোন দলটা ভালো!” দুই টেস্টের সিরিজ খেলতে কেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১২ হাজার কিলোমিটার যাত্রার ধকল সহ্য করে অস্ট্রেলিয়া যাবে, সেই প্রশ্নও শোনা গিয়েছে ২০ আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির মালিক লয়েডের মুখে। অবশ্য শুধু টি-টোয়েন্টির বাড়াবাড়ি নয়, আইসিসি-র নীতি নিয়েও বিরক্ত লয়েড। কেন সদস্যদের মধ্যে লভ্যাংশ সমান হারে ভাগ হচ্ছে না, প্রশ্ন কিংবদন্তির। “প্রিমিয়ার লিগে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড কি লিভারপুলের থেকে বেশি অর্থ পায়? বা চেলসি পায় আর্সেনালের থেকে? কিন্তু ক্রিকেটে এটা হয়,” বলছিলেন ক্ষুদ্ধ লয়েড। “আমাদের ১৪টা দ্বীপ নিয়ে একটা সদস্য দেশ তৈরি হয়েছে। ফলে একটা প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য অনেক অর্থ খরচ হয়। সেটা আইসিসিকে বুঝতে হবে। একটা সংগঠনে সবার সম-মর্যাদা পাওয়া উচিত।” পাশাপাশি আইসিসি-র রেটিং সত্ত্বেও কেপটাউন টেস্টের পিচকে খারাপ বলতে নারাজ লয়েড।
[আরও পড়ুন: বিলকিস কাণ্ডে ৯ অভিযুক্ত নিখোঁজ! তালা ঝুলছে গুজরাটের গ্রামের বাড়িতে!]
এদিন অ্যাডামাসের অনুষ্ঠান ‘একম অ্যাওয়ার্ড নাইটস’ উপলক্ষ্যে যেন চাঁদের হাট বসেছিল। রাজনীতির ময়দানের ফিরহাদ হাকিম, ব্রাত্য বসু, কুণাল ঘোষ, মহম্মদ সেলিম, শমীক ভট্টাচার্য, শোভন চট্টোপাধ্যায় থেকে খেলাধুলোর ময়দানের দেবাশিস দত্ত, দেবব্রত সরকার, মহম্মদ কামারুদ্দিন, স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, কমল মিত্র। প্রাক্তন ক্রীড়াবিদ মানস ভট্টাচার্য, সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে অভিনেতা বরুণ চন্দ, জাদুকর পি সি সরকার জুনিয়র কে ছিলেন না! তাঁদের সঙ্গে নিয়ে লয়েড, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, জয় গোস্বামী, ডা. সুকুমার মুখোপাধ্যায়, সিএবি সভাপতি স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়দের সম্মান জানালেন অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর সমিত রায়। একই সঙ্গে ‘খেলো ইন্ডিয়া’ ইউনিভার্সিটি গেমসে পদকজয়ী পড়ুয়াদেরও সম্মান জানাল অ্যাডামাস কর্তৃপক্ষ।